রক্ত পরীক্ষা Blood Testসংবাদ News

এস জি ও টি টেস্ট SGOT Test

এস জি ও টি টেস্ট SGOT Test

আমাদের লিভার অর্থাৎ যকৃত কোন কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে অথবা কোন জীবাণুর আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে লিভার ফাংশন টেস্ট করার প্রয়োজন হয়। লিভার ফাংশন টেস্ট এর মধ্যে অনেকগুলি টেস্ট করতে হয়। SGOT হল লিভার ফাংশান টেস্টের অন্তরগত একটি টেস্ট। লিভার  অর্থাৎ যকৃতের স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানতে SGOT পরীক্ষা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কেন SGOT পরীক্ষা করবেন, কিভাবে লিভার অর্থাৎ যকৃতের রোগ থেকে রক্ষা পাবেন, সেটাই হল এই প্রতিবেদনের আলোচনা।

SGOT  হল একটি উৎসেচক, Serum Glutamic Oxaloacetic Transaminase।   এই উৎসেচকটি আমাদের লিভার থেকে উৎপন্ন হয়। বর্তমানে SGOT টেস্টকে AST অর্থাৎ Aspartate Aminotransferase বলা হয়। লিভার বা যকৃত কতটা পরিমাণ SGOT উৎসেচক উৎপাদন করছে, সেটা একমাত্র রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায়।

কেন এস জি ও টি পরীক্ষা করা হয়? Why SGOT/AST tested?

SGOT টেস্ট করলে লিভার অর্থাৎ যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কিনা, লিভারে কোন জীবাণু আক্রমণ করেছে কিনা, সেটা সহজেই শনাক্ত করা যায়। যখন লিভার বা যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন SGOT নামক উৎসেচক যকৃত থেকে রক্তে অতিরিক্ত পরিমাণে বেরিয়ে আসে। ফলে রক্তে SGOT পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। হেপাটাইটিস নামক রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করার সময় SGOT পরিমাপ করে, যকৃতের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে কিনা সেটা বোঝা যায়।

যকৃতের রোগ ছাড়াও বৃক্ক অর্থাৎ কিডনির রোগে, হার্টের রোগে, মস্তিষ্কে কোন ইনফেকশন হলে বা আঘাত লাগলে, রক্তে SGOT পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। শরীরের পেশিতে আঘাত লাগলোও SGOT বৃদ্ধি পায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, হার্ট অ্যাটাক হলেও SGOT বৃদ্ধি পায়।

কখন টেস্ট করতে দেওয়া হয়? When to get tested for SGOT?

আপনার ডাক্তার যদি মনে করেন যে, আপনার যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেক্ষেত্রে SGOT টেস্ট করতে দেওয়া হয়। যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোন লক্ষণ দেখা গেলে SGOT টেস্ট করতে হয়। লিভারের রোগের লক্ষণ যেমন, উপরের পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং বমি, জন্ডিস অর্থাৎ দেহের ত্বকের রং হলদে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি দেখা গেলে SGOT পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়। আপনার দেহে হেপাটাইটিসের জীবাণু পাওয়া গেলে, বর্তমানে যকৃতের স্বাস্থ্য কেমন আছে সেটা জানার জন্য SGOT পরীক্ষা করতে পারেন। রোগীর মূত্রের রং যদি হলদে বাদামী হলে বা মলের রং হালকা হলেও রোগীর SGOT টেস্ট করা দরকার।

যে সকল ব্যক্তির, অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানের অভ্যাস আছে, বংশগতভাবে যাদের লিভারের রোগের সম্ভাবনা আছে, তাদের SGOT পরীক্ষা করা উচিত। কিছু ওষুধ আছে যেগুলি খাবার পর SGOT টেস্ট করে দেখে নিতে হয় যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে লিভারের ক্ষতি করেছে কিনা। যাদের ওজন বেশি, যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের SGOT পরীক্ষা করে লিভারের স্বাস্থ্য দেখে নেওয়া উচিত। হজমের সমস্যা হলে,পা ও গোড়ালি ফুলে গেলে,  গা হাত পা চুলকালে, সামান্য আঘাতে কাল সিটে দাগ পড়লে SGOT টেস্ট করা উচিত।

SGOT পরীক্ষার প্রস্তুতি। Preparation for the SGOT test.

কোন প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই। খালি পেটে বা ভর্তি পেটে টেস্ট করা যেতে পারে। যে কোন সময় টেস্ট করা যেতে পারে। কোন কোন ডাক্তার SGOT টেস্ট করার আগে ব্যথার ওষুধ খেতে বারণ করতে পারেন। কি কি ওষুধ SGOT টেস্টের আগে সেবন করেছেন, তার সম্পর্কে ল্যাবরেটরিতে ও চিকিৎসককে তথ্য দিন। টেস্ট করার আগের দিন স্বাভাবিক খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করা উচিত। যা আপনি প্রতিদিন খান না, সেটা না খাওয়া ভালো।

রক্তের নমুনা সংগ্রহ। Collection of blood samples for SGOT test.

সাধারণত হাতের শিরা থেকে সিরিঞ্জের সাহায্যে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আঙুলে সূচ বিদ্ধ করে রক্ত সংগ্রহ করা হয় না।

নরমাল লেভেল বা স্বাভাবিক মাত্রা। Normal levels of SGOT in blood.

                             5 -40 unit/Liter

পরীক্ষা পদ্ধতির উপর পরীক্ষার ফলাফল পরিবর্তনশীল। ল্যাবরেটরি রিপোর্টে লেখা নরমাল লেভেল মেনে চলুন।

পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাখ্যা। What does the test result mean?

SGOT/AST পরিমাণ স্বাভাবিক অপেক্ষা 10 গুণ বৃদ্ধি পেলে বুঝতে হবে যে, রোগী জটিল ও তীব্র হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত। ভাইরাস ঘটিত হেপাটাইটিস রোগ এটা ঘটতে পারে। এই অবস্থা এক- দু মাস থেকে চার-পাঁচ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ওষুধের বিষক্রিয়া বা যকৃতে রক্তের প্রবাহ বাধা প্রাপ্ত হলে, SGOT এর পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে 100 গুন পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।

ধারাবাহিকভাবে লিভার হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত অবস্থায় থাকলে, SGOT -র পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু সেটা কখনোই স্বাভাবিকের চার গুণের বেশি হয় না। লিভার দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ হলে থাকলে SGOT স্বাভাবিকের থেকে সামান্য বৃদ্ধি প্রাপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। এক্ষেত্রে কিছুদিন অন্তর অন্তর SGOT টেস্ট করে লিভারের স্বাস্থ্য ভালো না খারাপ হচ্ছে সেটা খেয়াল রাখতে হয়। পিত্তনালী বাধা পেলে, সিরোসিস অফ লিভার রোগে এবং লিভার ক্যান্সার হলেও SGOT-র পরিমাণ মাঝারি মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। হার্ট অ্যাটাক হলে, দেহের পেশী আঘাতপ্রাপ্ত হলে, SGOT বৃদ্ধি পায়। এই বৃদ্ধি SGPT/ALT (Alanine Aminotransferase) নামক উৎসেচকের তুলনায় তিন থেকে পাঁচ গুণ বেশি বৃদ্ধি পায়।

বেশিরভাগ লিভারের রোগে SGPT/ALT পরিমাণ SGOT/AST অপেক্ষা বেশি হয়। কিন্তু অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে, সিরোসিস অব লিভার হলে, হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের আক্রমণ হলে, SGPT অপেক্ষা SGOT বেশি বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে তীব্র লিভারের রোগে অথবা পিত্তনালী বাধা পেলে, প্রথম দুই থেকে তিন দিন SGPT অপেক্ষা SGOT বেশি বৃদ্ধি পায়।

কিডনি অর্থাৎ বৃক্কের রোগে এবং প্যাংক্রিয়াস অর্থাৎ অগ্নাশয় গ্রন্থি রোগাক্রান্ত হলেও SGOT পরিমাণ SGPT অপেক্ষা বেশি বৃদ্ধি পায়।

মন্তব্য Remarks.

গর্ভবতী মায়েদের SGOT বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতা থাকে। দেহের কোন অংশ আগুনে পুড়ে গেলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে, ক্ষত সৃষ্টি হলে, অপারেশন করার পর, SGOT-র পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত ব্যায়াম করার কারণেও SGOT বৃদ্ধি পেতে পারে।