Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাখাদ্য ও পানীয় Food & Drinksসংবাদ News

ওজন বাড়ানোর সহজ উপায় | মোটা হওয়ার সহজ উপায় How to Gain Weight Fast: Quick, Safe and Healthy Guidance

ওজন বাড়ানোর সহজ উপায় | মোটা হওয়ার সহজ উপায় How to Gain Weight Fast: Quick, Safe and Healthy Guidance:

স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রায়শই আমরা ওজন কমানোর কথা বলি। কিন্তু কখনও কখনও স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং সুস্থ থাকতে ওজন বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হতে পারে। এটা বিপরীতমুখী বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এমন বেশকিছু পরিস্থিতি আছে যেখানে ওজন বৃদ্ধি করতে হতে পারে।

এই প্রতিবেদনে ওজন বৃদ্ধি করার নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর উপায় নিয়ে আলোচনা করা হল।

ওজন বৃদ্ধি করার সহজ উপায় হল অতিরিক্ত পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট ও চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা। এর ফলে ওজন বাড়বে, কিন্তু এই পদ্ধতিটি আমাদের শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। ওজন বৃদ্ধি করার স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ উপায় নিয়ে আলোচনা করা হল।

কেন ওজন বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ? Why is gaining weight is important?

আমাদের অনেকেরই ওজন কম থাকে। বংশগত কারণে বা বিপাক অর্থাৎ মেটাবলিজম বেশি হওয়ার কারণে ওজন কম হতে পারে। পুষ্টির অভাব হলে বা দেহে অন্তর্নিহিত কোন রোগ ব্যাধির কারণেও ওজন কম হতে পারে। আবার অনেকে, পেশি বৃদ্ধি করতে বা অন্য কোন কারণে ওজন বাড়াতে চান।

ওজন কম বুঝবেন কিভাবে? What is the definition of underweight?

একজন ব্যক্তির ওজন স্বাভাবিক আছে কিনা নির্ণয় করার সাধারণ উপায় হল, বডি মাস ইনডেক্স (BMI) ব্যবহার করা। আমরা আমাদের ওজন ও উচ্চতা ব্যবহার করে বডি মাস ইনডেক্স গণনা করতে পারি করতে পারি।

বডি মাস ইনডেক্স = ওজন (Kg) /  উচ্চতার বর্গ (m2)

এখানে ওজন কিলোগ্রামের প্রকাশ করতে হবে এবং উচ্চতা মিটারে প্রকাশ করতে হবে।

সুস্থ ব্যক্তির বডি মাস ইনডেক্স 18.5 থেকে 24.9 এর মধ্যে থাকে। অর্থাৎ বডি মাস ইনডেক্স 18.5 এর কম হলে, ওই ব্যক্তির ওজন কম আছে বলে মনে করা হয়।

ওজন কম হওয়ার বিপদ: Health risk linked to being underweight:

কম ওজন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, স্থূল ব্যক্তির তুলনায় কম ওজনের ব্যক্তিদের মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় দুই গুণ বেশি। এটা থেকে বোঝা যায় যে মোটা হওয়ার তুলনায় পাতলা হওয়া বেশি খারাপ।

ওজন কম হলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অর্থাৎ ইমিউন সিস্টেমের সক্ষমতা হ্রাস পায়। কম ওজনের ব্যক্তিদের হাড় দুর্বল হয়, অস্টিয়পোরোসিস হতে পারে, সহজে হাড় ভেঙে যেতে পারে।

কম ওজনের ব্যক্তিদের গর্ভধারণের সমস্যা হতে পারে, সার্কোপেনিয়া অর্থাৎ পেশি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সমস্যা হতে পারে। এছাড়া ডিমেনশিয়া অর্থাৎ ভাবনা-চিন্তায় ও স্মৃতিশক্তি জনিত সমস্যা হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে ওজন কম হলে বৃদ্ধি ও বিকাশ ব্যাহত হয়।

ওজন কম হওয়ার কারণ: Cause of being underweight:

ওজন কম হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। খাওয়ার সমস্যা যেমন অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা নামক মানসিক রোগ ওজন কমে যায়, এক্ষেত্রে মোটা হওয়ার ভয়ে রোগী খাদ্য গ্রহণ করে না। থাইরয়েড অতি সক্রিয় হলে বিপাক বেড়ে যায় ও ওজন কমে যায়। গমের মধ্যে গ্লুটেন নামক প্রোটিন থাকে, এই গ্লুটেন গ্রহণ করলে অনেকের হজমের সমস্যা হয় ও ওজন কমে যায়। ডায়াবেটিস সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও ওজন কমে যেতে পারে। ক্যান্সার রোগে দেহে বিপাক বেড়ে যায় ফলে ওজন কমে যেতে পারে, তবে এটা ক্যান্সারের তীব্রতার উপর নির্ভর করে। এছাড়া দেহে পরজীবীর সংক্রমণ হলে বা জীবাণু সংক্রমণ হলে, যেমন যক্ষ্মা হলে বা এইডস হলে ওজন কমে যায়।

ওজন বাড়ানোর বিভিন্ন কৌশল: Different strategies for gaining weight:

ওজন বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে। ওজন বাড়ানোর উপায়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হল।

প্রয়োজনের বেশি খাদ্য গ্রহণ: Increase your calorie intake:

আমাদের দেহের শক্তির প্রয়োজন মেটানোর জন্য আমরা খাদ্য গ্রহণ করি। প্রয়োজন অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে দেহের ওজন বৃদ্ধি পায়। দেহের শক্তির চাহিদা ক্যালরি নামক এককের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়। দেহের ওজন ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করতে চাইলে, প্রয়োজনের চেয়ে 300 থেকে 500 ক্যালোরি শক্তি বেশি গ্রহণ করতে হবে। দ্রুত ওজন বাড়াতে চাইলে প্রয়োজনের চেয়ে 700 থেকে 1000 ক্যালরি বেশি শক্তি গ্রহণ করতে হবে।

ওজন বাড়ানোর জন্য, বেশি ক্যালরি আছে এমন খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। তবে খাদ্যগুলি যেন স্বাস্থ্যকর হয় সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। উচ্চ ক্যালরি-যুক্ত খাদ্য যেমন পনির, বাদাম, মাখন, শুকনো ফল ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া বাদামি চাল, ওটস, আলু, মিষ্টি আলু, ডার্ক চকলেট, রেড মিট ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে।

বেশি পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট গ্রহণ: Increase your intake of Carbs and Fat:

ওজন বাড়াতে গিয়ে অনেকে কার্বোহাইড্রেট ও চর্বি গ্রহণ কমিয়ে দেয়। এর ফলে ওজন বাড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে। ওজন বৃদ্ধি করতে প্রচুর পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট ও চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। কার্বোহাইড্রেট ও চর্বিযুক্ত খাদ্য পর্যাপ্ত গ্রহণ করলে তবে অতিরিক্ত ক্যালরি পাওয়া সম্ভব হবে।

পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ: Adequate Protein intake:

দেহের সর্বোত্তম বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য উচ্চমানের প্রোটিন গ্রহণ অপরিহার্য। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রোটিন গ্রহণ করলে দেহে পেশির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। দেহ কঙ্কালের বৃদ্ধি, পেশির বৃদ্ধি ও শারীরিক শক্তির উন্নতি করার জন্য প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। প্রোটিন গ্রহণের মাত্রা, দেহের ওজনের উপর নির্ভরশীল। দৈহিক ওজনের কিলোগ্রামে প্রতি 1 থেকে 1.6 গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে।

উচ্চ প্রোটিন-যুক্ত খাদ্য গুলি হল:

মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, সয়াবিন, মটর শুটি, বাদাম ইত্যাদি। প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনে প্রোটিন সম্পূরক গ্রহণ করতে হবে।

খাওয়ার আগে পানীয় নিষেধ: No drinks before meal:

খাওয়ার আগে পানীয় পান করলে পেট ভরে যায়। ফলে পর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। খাওয়ার আগে পানীয় গ্রহণ করলে খিদে কমে যায়। খাওয়ার কিছুক্ষণ পর জল পান করুন, এটা ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ভারতীয় আয়ুর্বেদে বলা হয়েছে, “ভোজনান্তে বারি বিষপ্রদম” অর্থাৎ খাওয়ার পর পানীয় পান করা বিষপানের সমান। খাদ্য গ্রহণের 30 থেকে 40 মিনিট পর জল বা অন্য কোন পানীয় গ্রহণ করা উচিত।

সারাদিন ঘনঘন খাওয়া: Eating regularly throughout the day:

ওজন বাড়াতে চাওয়া ব্যক্তিদের অন্যতম সমস্যা হল একসাথে বেশি পরিমাণ খাদ্য খেতে না পারা। এক্ষেত্রে সারাদিন ধরে অল্প অল্প খাবার বারে বারে খেতে হবে। প্রতি দুই থেকে তিন ঘণ্টা অন্তর খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। খিদে না থাকলেও স্ন্যাকস জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। এভাবে বেশি পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করা সম্ভব হয় ও ওজন বাড়ে।

মন্তব্য Remarks:

ওজন বৃদ্ধি করা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। হঠাৎ করে ওজন বৃদ্ধি করা মুশকিল। ধারাবাহিকভাবে চেষ্টা করতে হবে, তবে স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়বে। পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করে চর্বিহীন শরীর তৈরি করার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।