Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রারূপ চর্চা Beauty Tips

চিয়া বীজ: অসাধারণ উপকারী। Health Benefits of Chia Seeds:

হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে, হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে এবং হজম ভাল রাখতে চিয়া বীজ অসাধারণ উপকারী। চিয়া বীজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান থাকার জন্য চিয়া বীজকে হেলথ সুপার হিরো বলা যেতে পারে। আর একারণে চিয়া বীজ খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই প্রতিবেদনে চিয়া বীজের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

চিয়া বীজ গ্রহণ করা বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বলে এটা আধুনিক কোন চিন্তা ভাবনা বলে মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে চিয়া বীজের ব্যবহার বেশ প্রাচীন। সালভিয়া হিস্পানিকা (Salvia hispanica) নামক মরুভূমির উদ্ভিদদের বীজ হল চিয়া বীজ। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটি মধ্য আমেরিকায় উদ্ভূত হয়েছিল। চিয়া বীজ পুদিনা পরিবারের অন্তর্গত একটি উদ্ভিদ এবং এর আকার ও আয়তন অনেকটা তিলের মত। মায়ান, ইনকান এবং অন্যান্য উপজাতির মানুষেরা এই চিয়া উদ্ভিদটিকে দীর্ঘকাল ধরে চাষ করেছেন বলে মনে করা হয়। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ থেকে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে চিয়া বীজের বদলে গম, ভুট্টা ইত্যাদি চাষের প্রচলন শুরু হয়। প্রধানত ইউরোপ থেকে আগত মানুষ উপনিবেশ স্থাপন করার সাথে সাথে ধান, গম, ভুট্টা এবং আলু জাতীয় ফসল চাষের প্রচলন ঘটায়। এরপর দীর্ঘদিন ধরে চিয়া বীজকে আমরা প্রায় ভুলতে শুরু করেছিলাম। একবিংশ শতকের শুরুতে চিয়া বীজের পুনরুজ্জীবন দেখা যাচ্ছে, কারণ আমরা এখন চিয়া বীজের উপকারিতা সম্পর্কে নতুন করে জানতে শুরু করেছি।

আমেরিকার কৃষি বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, চিয়া বীজে কোলেস্টেরল নেই। চিয়া বীজ প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবারের একটি দারুণ উৎস। এছাড়া আছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক এবং ম্যাগনেসিয়াম। চিয়া বীজ ভিটামিন C, E, A এবং ভিটামিন B কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের দারুণ উৎস হল চিয়া বীজ। আন্টিঅক্সিডেন্টগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল; ফ্লেভেনল গ্লাইকোসাইডস (Flavonol Glycosides), ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড (Chlorogenic Acid), ক্যাফেইক অ্যাসিড (Caffeic Acids), কেমফেরল (Kaempferol), কোয়ারসেটিন (Quercetin) মাইরিসেটিন (Myricetin), লিনোলেনিক অ্যাসিড (Linolenic Acid) ইত্যাদি। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে ফ্রি রাডিক্যালসের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। আমেরিকার ওয়েল কেমিস্ট্রি সোসাইটি জার্নাল থেকে প্রকাশিত গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, চিয়া বীজে উচ্চ মাত্রায় ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী।

চিয়া বীজ পুষ্টি উপাদানের ভাণ্ডার। আর একারণে চিয়া বীজ গ্রহণ করা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী হতে পারে। উপকারিতাগুলি নিয়ে আলোচনা করা হল।

চিয়া বীজে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। মাত্র 2 টেবিল চামচ চিয়া বীজে প্রায় 10 গ্রাম ফাইবার থাকে। মিউসিলেজ (Mucilage) নামক একটি বিশেষ ধরনের ফাইবার থাকার কারণে চিয়া বীজ জলে ভেজালে জেলির মত হয়ে যায়। এর ফলে হজমের গতি কমে ও রক্তে শর্করা অর্থাৎ সুগারের বৃদ্ধি রোধ করে। ফাইবার নিজে হজম হয় না, ফলে মলের পরিমাণ বাড়ে ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।

আমরা আগেই জেনেছি যে চিয়া বীজে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে। ফাইবার হজমে সাহায্য করার পাশাপাশি পেট ভরে থাকার অনুভূতি দেয়, ফলে দীর্ঘ সময় খিদে পায় না। একারণে ওজন কমাতে চাইলে চিয়া বীজ গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে এটা নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন আছে। ‘চিয়া বীজ ওজন কমায়’ এই ধরনের সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার মত পর্যাপ্ত প্রমাণ এখনো পাওয়া সম্ভব হয়নি।

ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিডের ভাণ্ডার হল চিয়া বীজ। ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড হল এমন এক প্রকার চর্বি, যা হার্টের রোগের সম্ভাবনা কমায়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, চিয়া বীজে অবস্থিত আলফা লিনোলিক অ্যাসিড নামক বিশেষ ধরনের ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি 20 শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে। এই ফ্যাটি অ্যাসিড, ট্রাইগ্লিসারাইড, কোলেস্টেরল, এল ডি এল কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে চিয়া বীজ হার্টের স্বাস্থ্যের উপকার করতে পারে।

চিয়া বীজে বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান আছে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। চিয়া বীজে ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়ামের মত খনিজ পদার্থ রয়েছে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারে। গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, হাড় গঠনের জন্য এই সকল পুষ্টি উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করা প্রয়োজন। এছাড়া চিয়া বীজ থাকা আলফা লিনোলিক অ্যাসিডও হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। অতএব হাড় শক্ত করতে নিয়মিত চিয়া বীজ খাওয়া উচিত।

ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হয়। যেহেতু চিয়া বীজে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে, তাই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে চিয়া বীজ। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে চিয়া বীজ ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে ও রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে। তবে এবিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে।

গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, চিয়া বীজে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ত্বকের ক্ষতি মেরামত করতে এবং ত্বকের ক্ষতি রোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়া চিয়া বীজে থাকা ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে ও বলিরেখা রোধ করে বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করে। চিয়া বীজের প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্যের কারণে ব্রণের চিকিৎসায় এই বীজ ব্যবহার করা হয়।

শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করতে পারে চিয়া বীজ উপস্থিত পুষ্টি উপাদান। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য চিয়া বীজ একটি আদর্শ খাদ্য কারণ, চিয়া বীজে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। মাছেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। কিন্তু কিছু কিছু মাছে পারদের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে খুব বেশি পরিমাণ মাছ খাওয়া গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নিরাপদ নাও হতে পারে। তাই মাছের বদলে চিয়া বীজ খাওয়া বেশ নিরাপদ। এছাড়া গর্ভ-জনিত ডায়াবেটিসের সমস্যা কমাতে পারে চিয়া বীজ।

কী পরিমাণ চিয়া বীজে গ্রহণ করবেন সেটা বয়স, লিঙ্গ, স্বাস্থ্যে কেমন আছে এবং কী ধরণের খাদ্যতালিকা মেনে চলেন তার উপর নির্ভর করে। বেশিরভাগ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে প্রতিদিন প্রায় এক থেকে দুই টেবিল চামচ (15 থেকে 30 গ্রাম) চিয়া বীজ খাওয়া বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কার্যকরীও নিরাপদ। খাওয়ার আগে, চিয়া বীজগুলি কমপক্ষে 20 মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখা উচিত। জলে ভিজিয়ে রাখলে চিয়া বীজগুলি জল শোষণ করে এবং ফুলে ওঠে। এর ফলে হজম সহজ ও পুষ্টি উপাদান সহজে শোষিত হয়। জেলির মত নরম করে খেতে চাইলে কম করে দু ঘণ্টা বা সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে।

healthline.com, amala.earth, eatingwell.com, health.com, medicalnewatoday.com, etc.