টিউবারকিউলোসিস, যক্ষা (টি বি ) রোগ নির্ণয় কফ পরীক্ষা। Sputum for AFB
টিউবারকিউলোসিস (টি বি ) রোগ নির্ণয় কফ পরীক্ষা। Sputum for AFB Test
স্পুটাম বা কফ পরীক্ষা করা হয় আমাদের দেহের ফুসফুসে টিউবারকিউলোসিস রোগের জীবাণু, মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস নামক জীবাণু উপস্থিত আছে কিনা সেটা দেখার জন্য। এছাড়া অন্য কিছু ইনফেকশনেও কফ পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়। তবে প্রধানত টিউবারকিউলোসিস রোগ শনাক্ত করার জন্য কফ পরীক্ষা করা হয়। আমাদের দেহের সকল স্থানে টিউবারকিউলোসিস হতে পারে। দেহের যে কোন স্থানে টিউবারকিউলোসিস হলে, তার সাথে ফুসফুসেও ইনফেকশন হয়। আর এই কারণে, কফ পরীক্ষা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। এক্সরে ছাড়াও অন্যান্য বেশ কয়েক ধরনের পরীক্ষার দ্বারা টিউবারকিউলোসিস শনাক্ত করা হয়। কিন্তু এই সব পরীক্ষা দ্বারা টিউবারকিউলোসিসের সংক্রমণ সম্পর্কে নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয় না। একমাত্র কফ পরীক্ষার দ্বারা সঠিকভাবে বলা যায় যে, টিউবারকিউলোসিস হয়েছে কিনা।
কেন এই টেস্ট করতে দেওয়া হয়? Why Sputum for AFB Test is done?
রোগীর দেহে টিউবারকিউলোসিস রোগের কোন লক্ষণ দেখতে পেলে, চিকিৎসক এই পরীক্ষা করতে দেন। এই রোগের লক্ষণগুলি হল, 21 দিনের বেশি কাশি, কাশির সাথে রক্ত, ওজন কমে যাওয়া, হজমে সমস্যা, দুর্বলতা, ক্লান্তি, ঘুসঘুসে জ্বর, শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, রাত্রে ঘেমে যাওয়া ইত্যাদি।
কিভাবে কফের নমুনা সংগ্রহ করা হয়? How to collect sputum sample for AFB Test?
যেদিন কফের নমুনা সংগ্রহ করতে হবে তার আগের দিন রাত্রে প্রচুর পরিমাণে জল ও তরল খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। এটা করলে শরীর বেশি পরিমাণে কফ অর্থাৎ শ্লেষ্মা উৎপাদন করবে। সকালে কফের নমুনা সংগ্রহ করা সহজ হবে, সকালেই নমুনা সংগ্রহ করা ভালো। কফ সংগ্রহ করার জন্য, পাত্রটি নিয়ে কোন ফাকা স্থানে জোরে জোরে কাশতে কাশতে ফুসফুসের গভীরতম অংশ থেকে কফ নির্গত করার চেষ্টা করতে হবে। মুখ থেকে থুতু দিলে চলবে না। কফ, ফুসফুস থেকে নির্গত ঘন এবং হালকা হলদে বা সাদা রঙের হয়। কিন্তু থুতু, মুখের লালা গ্রন্থি থেকে নির্গত হয় এবং এটি জলের মতো বর্ণহীন হয়। থুতু পরীক্ষা করার কোন অর্থ নাই। একমাত্র কফ পরীক্ষা করেই রোগ সনাক্ত করা যেতে পারে। সকালে কোন খাদ্য গ্রহণ করার আগেই কফ সংগ্রহ করতে হবে।
সংগ্রহ করার পাত্রটি ল্যাবরেটরি থেকে আনতে হবে। এগুলি জীবাণুমুক্ত করা থাকে। যদি কোনভাবে কফ নির্গত করা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে গরম জলের বাষ্প নাক দিয়ে টানতে হবে। হালকা গরম জলে স্নান করে কফ নির্গত করার চেষ্টা করতে হবে। একমাত্র ফুসফুসের গভীর স্থান থেকে কফ নির্গত করতে পারলে সঠিক ফলাফল জানা যাবে। এতকিছুর পরও যদি কপ নির্গত না হয় তাহলে, বংক্রোসকপির মাধ্যমে ফুসফুস থেকে কফ সংগ্রহ করতে হবে। এটা করার জন্য চেস্ট স্পেশালিষ্ট চিকিৎসক বা টেকনোলজিস্টের সাহায্য প্রয়োজন।
কফের নমুনা সংগ্রহ করার সময় কোন বিপদের সম্ভাবনা কতটা? How likely are any dangers when collecting a cough sample?
সাধারণত কফ সংগ্রহ করার সময় তেমন কোন বিপদের সম্ভাবনা নেই। তবে ব্লাড প্রেশার বৃদ্ধি পেতে পারে। শরীর হালকা মনে হতে পারে। তবে বংক্রোসকপির মাধ্যমে কফ সংগ্রহ করার সময় সামান্য বিপদের সম্ভাবনা আছে। বংক্রোসকপি করার আগে যে ওষুধ দেওয়া হয়, সেটা থেকে এলার্জি হতে পারে। বংক্রোসকপি করার সময় আঘাত লেগে রক্তপাত হতে পারে, ইনফেকশন হতে পারে, ফুসফুসে খিচুনি হতে পারে। এছাড়া হার্ট-বিট অস্বাভাবিক হতে পারে।
পরীক্ষার ফলাফল। Interpretation of Sputum for AFB test results.
পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ হলে বুঝতে হবে যে, টিউবারকিউলোসিস রোগের জীবাণু অনুপস্থিত। অর্থাৎ ফুসফুসে টিউবারকিউলোসিস ইনফেকশন হয়নি। সাধারণত তিনবার কফের নমুনা পরীক্ষা করার পর জীবাণু পাওয়া না গেলে তবেই নেগেটিভ বলে রিপোর্ট দেয়া হয়। খুব কম পরিমাণে জীবাণু উপস্থিত থাকলেও কফ পরীক্ষায় ধরা পড়ে না। সেক্ষেত্রে স্পুটাম অর্থাৎ কফের কালচার পরীক্ষা করতে হয়। কালচার করার পর মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস নামক জীবাণু যদি না পাওয়া যায়, তখন নিশ্চিতভাবে পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ বলা যায়। যেসকল রোগীদের টিউবারকিউলোসিস রোগের লক্ষণ খুবই অস্পষ্ট, তাদের ক্ষেত্রে কফ পরীক্ষার সাথে কার্তুজ-বেশ নিউক্লিক অ্যাসিড অ্যামপ্লিফিকেশন টেস্ট করা উচিত। আগে উল্লেখিত তিনটি টেস্ট একসাথে করলে রোগীর টিউবারকিউলোসিস হয়েছে কিনা সেটা সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়।
মন্তব্য Remarks
রোগী টিউবারকিউলোসিস রোগে আক্রান্ত হয়েছে কিনা, সেটা জানার জন্য অনেক ধরনের পরীক্ষা আছে। বুকের এক্স রে, মান্টু টেস্ট ইত্যাদি পুরাতন পদ্ধতির সাথে, আধুনিক কিছু পদ্ধতির সাহায্যে টিউবারকিউলোসিসের সংক্রমণ সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। কিন্তু এই পরীক্ষাগুলির মধ্যে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও কার্যকরী সহজ পরীক্ষা হলও কফ পরীক্ষা।