রক্ত পরীক্ষা Blood Testরোগ ও ব্যাধি Health Condition

ডেঙ্গি জ্বর পরীক্ষা: Dengue Fever Test:

ডেঙ্গি জ্বর পরীক্ষা: Dengue Fever Test:

ডেঙ্গি জ্বর হলে, কোন পদ্ধতিতে রক্ত পরীক্ষা করলে সঠিক ফলাফল জানা যাবে এবং পরীক্ষার আগে কী নিয়ম মেনে চলতে হবে সেটা জানতে প্রতিবেদনটি পড়তে থাকুন।

ডেঙ্গি জ্বর হল ভাইরাস ঘটিত একটি রোগ। এডিশ নামক মশা এই রোগের ভাইরাসের বাহক। এডিশ মশা, রোগাক্রান্ত ব্যক্তির দেহ থেকে ভাইরাস গ্রহণ করে সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করায়। সাধারণত গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।

ডেঙ্গি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে বেশিরভাগ রোগীদের তেমন কোন লক্ষণ দেখা যায় না। অনেক সময় সামান্য জ্বর, মাথা ব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা ইত্যাদি দেখা যায়। এই লক্ষণগুলি প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে যায়। আরও যেসকল লক্ষণ দেখা যায় সেগুলি হল, চোখের পিছনে ব্যথা, মাসেল ও জয়েন্টে ব্যথা, চামড়ায় র‍্যাস বেরোনো, বমি হওয়া ও গ্ল্যাণ্ড ফোলা ইত্যাদি।

কিছু রোগীদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গি জ্বর বিপজ্জনক হতে পারে। ডেঙ্গির বিপদ জনক অবস্থাকে বলা হয় “ডেঙ্গি হেমারেজিক ফিভার”। এক্ষেত্রে জীবনহানিকর কিছু লক্ষণ দেখা যায়। রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রক্তপাত হওয়া, রক্তের চাপ কমে যাওয়া এবং দেহের কোন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া, ইত্যাদি হতে পারে। এছাড়া নাক দিয়ে রক্তপাত, রক্তবমি, মলের মধ্যে রক্তপাত, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ইত্যাদি রোগ লক্ষণ দেখা যেতে পারে।

কখন পরীক্ষা করা হয়?

ডেঙ্গি রোগের কোন লক্ষণ দেখা গেলে, ডেঙ্গি আক্রান্ত এলাকায় ভ্রমণের পর ডেঙ্গির প্রাথমিক লক্ষণ দেখা গেলে এই টেস্ট করা দরকার। কিছু রোগলক্ষণ যেমন 104 ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি জ্বর হলে, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা হলে, জয়েণ্ট ও মাসলে ব্যথা হলে ডেঙ্গি পরীক্ষা করতে হয়। নাক ও মুখ বা দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তপাত হলে অবশ্যই এই টেস্ট করা উচিত।

ডেঙ্গি পরীক্ষার প্রকারভেদ:

ডেঙ্গি এন এস অ্যাণ্টিজেন টেস্ট:

প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ লক্ষণ দেখা দেওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু শনাক্ত করার জন্য এই পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষা খুব তাড়াতাড়ি ও কম খরচে করা যায়। দেহে ডেঙ্গি ভাইরাস আক্রমণ করলে, ভাইরাসের দ্বারা এন এস 1 নামক গ্লাইকোপ্রোটিন জাতীয় অ্যান্টিজেন উৎপন্ন হয়। এই পরীক্ষার সাহায্যে এন এস 1 অ্যান্টিজেনকে সনাক্ত করা যায়। রোগ লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর, দশ দিন পর্যন্ত এই পরীক্ষা করলে সঠিক ফলাফল জানা যায়। দশ দিন পেরিয়ে গেলে আর, এন এস 1 অ্যাণ্টিজেন পরীক্ষা করা উচিত নয়।

মলিকিউলার টেস্ট ফর ডেঙ্গু ভাইরাস (PCR)

পলিমারাইজ চেন রিয়াকশন পদ্ধতিতে ডেঙ্গির ভাইরাসটিকে সনাক্ত করা হয়। রোগ লক্ষণ দেখা যাওয়ার প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এই টেস্ট করা হয়। এই মুহূর্তে ভাইরাসটি দেহে অবস্থান করছে কিনা, সেটা এই পরীক্ষার সাহায্যে জানা যায়। এই পদ্ধতি সময় সাপেক্ষ এবং বিশেষ যন্ত্রের প্রয়োজন হয়।

ইমিউনোগ্লোবিউলিন M এবং ইমিউনোগ্লোবিউলিন G অ্যাণ্টিবডি টেস্ট (Ig M এবং Ig G)

রোগ লক্ষণ দেখা দেওয়ার চারদিন পর থেকে এই টেস্ট করা যায়। আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম ভাইরাসের আক্রমণ প্রতিহত করতে অ্যাণ্টিবডি তৈরি করেছে কিনা জানতে এবং তৈরি করলে কতটা তৈরি হয়েছে সেটা বুঝতে এই পরীক্ষা করা হয়। প্রয়োজনে দু সপ্তাহ পর আবার এই টেস্ট করে দেখা হয়, অ্যাণ্টিবডির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে কিনা।

কিভাবে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়?

সাধারণত হাতের শিরা থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সামান্য পরিমাণ রক্ত প্রয়োজন হয়। আঙ্গুলে সূচ বিদ্ধ করে রক্ত সংগ্রহ করা যেতে পারে। তবে হাতের শিরা থেকে রক্ত সংগ্রহ করা ভাল।

রক্ত সংগ্রহ করার সময় কোন বিপদের সম্ভাবনা নেই। পরীক্ষা করার আগে কোন বিশেষ প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই। খালি পেটে বা ভর্তি পেটে রক্ত দেয়া যায়।

পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাখ্যা:

ডেঙ্গি এন এস অ্যাণ্টিজেন টেস্টের ফলাফল:

ডেঙ্গি এন এস 1 অ্যাণ্টিজেন পরীক্ষার ফল প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পজিটিভ হলে বলা যায় যে, দেহে বর্তমানে ডেঙ্গি ভাইরাসের ইনফেকশন আছে। নেগেটিভ হলে বলা যায় যে দেহে ডেঙ্গি ভাইরাস আক্রমণ করেনি।

মলিকিউলার টেস্ট ফর ডেঙ্গু ভাইরাস (PCR) টেস্টের ফলাফল:

মলিকিউলার টেস্ট অর্থাৎ পি সি আর টেস্টের সাহায্যে সরাসরি ভাইরাসকে সনাক্ত করা হয়। পি সি আর টেস্ট পজিটিভ হলে নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে, দেহে ডেঙ্গি ভাইরাস আক্রমণ করেছে।

পি সি আর টেস্ট নেগেটিভ হলে বুঝতে হবে যে, দেহে ডেঙ্গি ভাইরাস আক্রমণ করেনি। অথবা এত কম মাত্রায় ভাইরাস আছে যে পি সি আর পরীক্ষার দ্বারা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে 7 দিন পর আবার পি সি আর পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

ইমিউনোগ্লোবিউলিন M এবং ইমিউনোগ্লোবিউলিন G অ্যাণ্টিবডি টেস্টের ফলাফল (Ig M এবং Ig G):

অ্যাণ্টিবডি অর্থাৎ Ig M এবং Ig G পরীক্ষার ফলাফল থেকেও ডেঙ্গি ভাইরাসের আক্রমণ হয়েছে কিনা জানা যায়। পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ ও নেগেটিভ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। কখনো কখনো অ্যাণ্টিবডির পরিমাণ টাইটার হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

Ig M ফলাফলIg G ফলাফলফলাফলের ব্যাখ্যা
পজিটিভনেগেটিভএই মুহূর্তে ইনফেকশন আছে।
পজিটিভপজিটিভএই মুহূর্তে ইনফেকশন আছে।
কম বা নেগেটিভ বা টেস্ট করা হয়নি।2 – 4 সপ্তাহের মধ্যে টাইটার 4 গুন বৃদ্ধি পেয়েছে।কিছুদিনের মধ্যেই দেহে ইনফেকশন ঘটেছে এবং এখনও ইনফেকশন বর্তমান।
কম বা নেগেটিভপজিটিভআগে ইনফেকশন হয়েছিল, বর্তমানে ইনফেকশন নেই।
নেগেটিভনেগেটিভডেঙ্গি ইনফেকশন হয়নি বা এখনও দেহের মধ্যে অ্যাণ্টিবডি উৎপাদিত হয়নি।

মন্তব্য

মনে রাখতে হবে যে চিকেন গুনিয়া রোগেও ইমিউনোগ্লোবিউলিন M পজিটিভ হয়। ক্রস রিয়াকশনের ফলে এরকম হতে পারে। এক্ষেত্রে PRNT নামক পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

শরীরে র‍্যাস বেড়োলে বা জয়েন্টের ব্যথা হলে ডেঙ্গি হয়েছে এটা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। ডেঙ্গির বদলে অন্য কোন আরবোভাইরাস আক্রমণ করলেও ডেঙ্গি অ্যান্টিবডি টেস্ট পজিটিভ হতে পারে। এই কারণে ডেঙ্গি হয়েছে এটা বলার আগে রোগীর রোগের ইতিহাস জানা প্রয়োজন। ল্যাবোরেটরি রিপোর্ট দেখে ডেঙ্গির রোগ লক্ষণ পরবর্তীকালে কমবে না মারাত্মক আকার ধারণ করবে সেটা বলা সম্ভব নয়।