থ্রোট সোয়াব কালচার: Throat Swab Culture:
থ্রোট সোয়াব কালচার: Throat Swab Culture:
গলার মধ্যে কোন ব্যাকটেরিয়া ঘটিত ইনফেকশন হয়েছে কিনা সেটা জানতে থ্রোট সোয়াব কালচার বা থ্রোট কালচার করা হয়। থ্রোট সোয়াব কালচার করার আগে কী কী নিয়ম মানা প্রয়োজন এবং কোন কোন রোগ শনাক্ত করতে থ্রোট সোয়াব কালচার করা হয়, সেটাই হল এই প্রতিবেদনের আলোচনার বিষয়।
কখন থ্রোট সোয়াব পরীক্ষা করা হয়? When is the throat swab test done?
স্ট্রেপ থ্রোট, নিউমোনিয়া, টনসিলাইটিস, হুপিং কাফ এবং মেনিনজাইটিস ইত্যাদি রোগ সনাক্ত করতে থ্রোট সোয়াব কালচার করা হয়। এই পদ্ধতিতে আমরা জানতে পারি যে,গলার মধ্যে এই সকল ব্যাকটেরিয়া গুলি কোন ইনফেকশন সৃষ্টি করেছে কিনা।
গলার ভিতরটা লালচে রক্তিম বর্ণ ধারণ করলে, গলা ফুলে গেলে, গলার মধ্যে সাদা দাগ দেখা গেলে বা পুঁজ দেখা গেলে থ্রোট সোয়াব কালচার করা প্রয়োজন। টনসিলের উপরে বা গলার উপরে দিকের তলে, লাল দাগ দেখা গেলে বুঝতে হবে গলায় ইনফেকশন হয়েছে। শুধুমাত্র এই লক্ষণ দেখে ইনফেকশনের কারণ ভাইরাস না ব্যাকটেরিয়া এটা বোঝা সম্ভব নয়। তাই থ্রোট সোয়াব কালচার করা প্রয়োজন। স্টেপটোকাল ব্যাকটেরিয়া দ্বারা গলায় ইনফেকশন খুব বিপজ্জনক। একারণে প্রথমেই থ্রোট সোয়াব কালচার করে নেওয়া ভাল।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গলার ইনফেকশন, ব্যাকটেরিয়া অপেক্ষা ভাইরাস দ্বারা ঘটে। ভাইরাসের ইনফেকশন হলে কোন চিকিৎসা ছাড়াই কয়েকদিনের মধ্যে সেরে যায়। ভাইরাসের কারণে ইনফেকশন হয়েছে মনে হলে, থ্রোট সোয়াব কালচার করা হয় না। ভাইরাস সনাক্ত করতে PCR অর্থাৎ পলিমারাইজ চেইন রিঅ্যাকশন নামক পরীক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
থ্রোট সোয়াব কালচারের করার আগের প্রস্তুতি: Preparation before Throat Swab Culture:
লালা রসের নমুনা সংগ্রহ করার আগে অ্যাণ্টিসেপটিক মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করা নিষেধ। কোন অ্যাণ্টিবায়োটিক সেবন করলে সেটা আপনার ডাক্তার ও ল্যাবরেটরিতে জানান। কারণ অ্যাণ্টিবায়োটিক, পরীক্ষার ফলাফল কে প্রভাবিত করতে পারে। অ্যাণ্টিবায়োটিক গ্রহণ করার আগে পরীক্ষা করা সব থেকে ভালো।
কিভাবে লালা রসের নমুনা সংগ্রহ করা হয় ও পরীক্ষা করা হয়? How saliva samples are collected and tested?
রোগীকে চেয়ারের পিছনের দিকে হেলান দিয়ে বসতে বলা হয়। এরপর রোগীকে মুখটি সম্পূর্ণ খুলতে বলা হয় এবং মাথাটা পিছনের দিকে ঝোলাতে বলা হয়। এবার একটি ট্রাং ডিপ্রেশার নামক যন্ত্রের সাহায্যে বা চামচের সাহায্যে জিভটি নিচের দিকে চাপা হয়। প্রয়োজনে সামান্য বাইরে বের করতে বলা হয়। এর ফলে গলার ভিতরটা ভালোভাবে দেখা যায়। আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখা একটি জীবাণুমুক্ত কটন সোয়াবের সাহায্যে লালা রসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কটন সোয়াব অর্থাৎ তুলো জড়ানো একটি দণ্ডটি, গলার পেছনের দিকের উপরের দেয়ালে, টনসিলের উপরে এবং কোন পুঁজ বা সাদা দাগ থাকলে তার উপর ঘসে লালা রস সংগ্রহ করা হয়। খেয়াল রাখা হয় যাতে সোয়াবটি জিভে বা মুখের অন্য কোথাও স্পর্শ না করে। এবার সোয়াবটি পুনরায় জীবাণুমুক্ত নলে প্রবেশ করিয়ে, মুখ বন্ধ করে ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়।
থ্রোট সোয়াব সংগ্রহ করার আরেকটি পদ্ধতি হল ন্যাসোফ্যারেনজিয়াল সোয়াব কালেকশন। এক্ষেত্রে রোগীকে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসানো হয়। এবার সোয়াব দণ্ডটি বহি: নাসারন্ধ্র অর্থাৎ নাকের ছিদ্রটির মধ্য দিয়ে প্রবেশ করানো হয়। প্রায় পাঁচ সেন্টিমিটার প্রবেশ করালে, অন্ত: নাসারন্ধ্রের নিকট অর্থাৎ শ্বাসনালীর উপরের অংশে পৌঁছায়। এবার সোয়াবটি আস্তে আস্তে ঘোরানো হয় এবং সংশ্লিষ্ট স্থানের রস সংগ্রহ করা হয়। ধীরে ধীরে সোয়াবটি বের করে টিউবের মধ্যে রাখা হয়।
ল্যাবরেটরিতে বিশেষ ধরনের মিডিয়াম বা মাধ্যম যুক্ত প্লেটে, কৃত্রিম পরিবেশে সোয়াবে সংগ্রহ করা ব্যাকটেরিয়াগুলির বৃদ্ধি ঘটানো হয়। কৃত্রিমভাবে ব্যাকটেরিয়ার প্রতিপালনকে ব্যাকটেরিয়া কালচার বলে।
ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটলে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে, কী ধরণের ব্যাকটেরিয়া গলায় ইনফেকশন ঘটিয়েছে, সেটা জানা যায়। কোন ধরনের ওষুধ ব্যবহার করলে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হবে এবং রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে সেটা সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়। পরীক্ষার ফলাফল জানতে দুই থেকে পাঁচ দিন সময় লাগে।
থ্রোট সোয়াব পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাখ্যা: Interpretation of Throat Swab Test Results:
থ্রোট সোয়াব কালচার নেগেটিভ হলে বুঝতে হবে যে গলায় রোগ সৃষ্টিকারী কোন ব্যাকটেরিয়া নেই। রেজাল্ট পজিটিভ হলে বুঝতে হবে গলায় রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া উপস্থিত আছে। কোন ধরনের ব্যাকটেরিয়া রোগ সৃষ্টি করেছে সেটাও এই পরীক্ষা থেকে জানা যায়। গলায় উপকারী জীবাণুও থাকে। থ্রোট সোয়াব কালচারে উপকারী জীবাণু সনাক্ত হলে সেটা ভাল। রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু উপস্থিত থাকলে বিপদ।
থ্রোট সোয়াব কালচার রিপোর্টে কোন ধরনের ওষুধে রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করা যাবে সেটাও লেখা থাকে। যে সকল অ্যান্টিবায়োটিক ঐ নির্দিষ্ট রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে পারবে না, তার তালিকাও দেওয়া থাকে। এই অ্যাণ্টিবায়োটিকগুলিকে রেজিস্ট্যান্ট বলা হয়। যে সকল অ্যাণ্টিবায়োটিক ঐ নির্দিষ্ট ব্যকটেরিয়াগুলিকে ধ্বংস করতে পারে, তাদের সেনসিটিভ বলা হয়। রোগীর চিকিৎসা করার জন্য সেনসেটিভ অ্যাণ্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।