অস্বাস্থ্যকর অন্ত্রের 9টি লক্ষণ: 9 Sign of Unhealthy Gut:
ডায়রিয়া, ফুড পয়েজন, খাদ্যে অ্যালার্জি, বদহজম ইত্যাদি সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে ভুগতে থাকলে অন্ত্র অর্থাৎ পৌষ্টিকতন্ত্রে কোনও সমস্যা আছে কিনা সেটা দেখা দরকার। অসংখ্য গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে একজন ব্যক্তির সামগ্রিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য অন্ত্রের ভূমিকা যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য। হজম থেকে শুরু করে, রোগ প্রতিরোধ করা ও সুস্থ থাকা, সবকিছু অন্ত্র অর্থাৎ পেটের স্বাস্থ্যের উপর নির্ভরশীল। এই প্রতিবেদনে অস্বাস্থ্যকর অন্ত্রের 9টি লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
অন্ত্রের স্বাস্থ্য কী? What is Gut Health?
আমাদের পৌষ্টিকতন্ত্রে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে। এই জীবাণুগুলি আমাদের অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম অর্থাৎ অন্ত্রের পরিবেশ রক্ষা করে। কিছু ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, আবার কিছু ক্ষতিকর হতে পারে। একজন সুস্থ ব্যক্তির অন্ত্রে ভালো ও খারাপ ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে ব্যালেন্স থাকে। আর একারণে বদহজম বা ইনফেকশন এর সমস্যা থাকে না, পুষ্টি ও শোষণ ভালো হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবে কাজ করে।
অন্ত্রের স্বাস্থ্য খারাপ হলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে পেট ফাঁপা, পেট ব্যথা, গ্যাস, ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে অন্ত্রের ত্বকের ক্ষতি হতে পারে এবং আই বি ডি অর্থাৎ ইনফ্লামেটরি বাওয়েল ডিজিজ-এর মত রোগ সৃষ্টি হতে পারে।
অস্বাস্থ্যকর অন্ত্রের প্রধান লক্ষণ: Top Signs of an Unhealthy Gut:
অস্বাস্থ্যকর অন্ত্র আমাদের শরীরকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে পারে। সবচেয়ে স্পষ্ট লক্ষণ হল পেটের সমস্যা। এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ত্বকের স্বাস্থ্য ও ঘুমের মানকেও প্রভাবিত করে। প্রধান প্রধান উপসর্গগুলি নিয়ে আলোচনা করা হল।
কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া: Constipation and Diarrhea:
দিনে কতবার মলত্যাগ করছেন, কোন ধরনের মলত্যাগ করছেন, সেটা দেখে অন্ত্রের স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা হজমের সমস্যা থেকে শক্ত মল ত্যাগ করলে, অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে বলা যেতে পারে। আবার ঘনঘন মলত্যাগ করলে, মল পাতলা হলে অর্থাৎ ডায়রিয়া হলে সমস্যার কারণ খাবার থেকে অ্যালার্জি বা হজম-জনিত হতে পারে। অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমে গেলেও ডায়রিয়া হতে পারে।
পেটে গ্যাস বা পেট ফাঁপা: Gas or Bloating:
প্রায়শই পেটব্যথা, গ্যাস, অ্যাসিডটি, পেট ফাঁপা ইত্যাদি হলে অন্ত্রের স্বাস্থ্য খারাপ হয়েছে বলা যায়। পৌষ্টিকতন্ত্রে খারাপ ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে এবং ভালো ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমে গেলে এমন সমস্যা হতে পারে। বৃহদন্ত্রে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য হজমের জন্য ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা খুব উল্লেখযোগ্য। আবার ক্ষুদ্রান্তে ব্যাকটেরিয়ার অতিরিক্ত বৃদ্ধি হলেও সেটা ভালো নয়, এক্ষেত্রে পেটে গ্যাস জমতে পারে। এছাড়া ইরিট্যাবল বাউল সিনড্রমে পেটে গ্যাস জমে।
চিনির প্রতি আকর্ষণ: Sugar Carvings:
অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া, লেপটিন (Leptin) ঘ্রেলিন (Ghrelin) ইত্যাদি প্রোটিন নিঃসরণ করে যা আমাদের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলি আমাদের মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে এবং খাবারের প্রতি আকাঙ্ক্ষা কেউ প্রভাবিত করে। যদি আমরা ভালো স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করি, তাহলে অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া গুলি বৃদ্ধি পায়।
একইভাবে ক্রমাগত অস্বাস্থ্যকর খাবার, জাঙ্ক ফুড, চিনি, পরিশোধিত খাবার ইত্যাদি খেলে খারাপ ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। তাই বলা যায় যে, অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি, চিনির প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পেলে বুঝতে হবে যে অন্ত্রের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়েছে।
খাদ্যে অ্যালার্জি: Food Intolerance:
যদি দেখা যায় যে বিশেষ কিছু খাবার খাওয়ার পর পেট ফাঁপা, গ্যাস, ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যা হচ্ছে, তাহলে অন্ত্রের স্বাস্থ্য কেমন আছে সেটা দেখা দরকার। পৌষ্টিকতন্ত্রে পর্যাপ্ত উপকারী ব্যাকটেরিয়া না থাকলে বা খাদ্যে অ্যালার্জি থাকলে এমন হতে পারে। এছাড়া খাদ্য থেকে অ্যালার্জি হলে ইরিট্যাবল বাওয়েল সিনড্রোম-এর মত সমস্যাও হতে পারে।
ঘন ঘন সংক্রমণ: Frequent Infection:
দেহে ঘন ঘন জীবাণুর সংক্রমণ হলে অন্ত্রের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা দরকার। অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিক রাখে। অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হলে অন্ত্রের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে দেহে বারে বারে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে।
ত্বকের সমস্যা: Skin Problem:
ত্বকের সাথে পেটের তেমন কোন সম্পর্ক নেই বলে মনে হতে পারে। কিন্তু গবেষণা বলছে যে, অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম অর্থাৎ অন্ত্রের পরিবেশ ত্বকের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। যেসব শিশুদের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার বৈচিত্র্য কম, তাদের এ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এর ফলে শুষ্ক ত্বক, চুলকানি, ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। এছাড়া অন্ত্রের পরিবেশ ভালো থাকলে শিশুদের একজিমা হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
পুষ্টির অভাব: Nutrient Deficiencies:
অন্ত্রের ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি হওয়ার ফলে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের শোষণ ব্যাহত হতে পারে। এর ফলে দেহে পুষ্টির অভাব হতে পারে, বিশেষ করে ক্রোনস ডিজিজ ও আলসারেটিভ কোলাইটিস রোগে এমন সমস্যা দেখা যায়। সময়ের সাথে সাথে আয়রন, ভিটামিন D ও জিঙ্ক সহ অসংখ্য পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হতে পারে।
ঘুমের সমস্যা: Trouble Sleeping:
ঘুম না হওয়ার বা ঘুম কম হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, পেটের স্বাস্থ্যের সাথে ঘুমের বেশ ভালো সম্পর্ক আছে। 2019 সালের একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, যাদের অন্ত্রের পরিবেশ যত ভালো, তাদের ঘুমের মান তত ভালো। অর্থাৎ ভালো ঘুমের জন্য অন্ত্র সুস্থ থাকা প্রয়োজন।
অটো ইমিউন রোগ: Auto-immune Condition:
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সুস্থ থাকার জন্য অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকা অপরিহার্য। ইমিউন সিস্টেমের প্রায় 70 শতাংশ অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উপর নির্ভরশীল। অন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হলে অটো ইমিউন রোগের সূচনা হতে পারে। অন্ত্রে উপস্থিত কিছু ব্যাকটেরিয়া বিষাক্ত পদার্থ তৈরি করে যা প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং অটো ইমিউন রোগের সৃষ্টি হয়। এরফলে একজিমা, পেট ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ইরিট্যাবল বাওয়েল সিনড্রোম, মাইগ্রেনের ব্যথা ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
তথ্যসূত্র:
Googrx.com, Kauveryhospitals.com, Everydayhealth, Usenourish.com e.t.c.