প্রতিদিন কাঠবাদাম বা আমন্ড খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা: Health Benefits of Almonds | Right Time To Eat Almonds:
কাঠবাদাম বা আমন্ড হল এমন এক প্রকার বাদাম, যা সুস্বাদু ও পুষ্টি উপাদানের ভাণ্ডার। প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ উপাদান, ফাইবার ও আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড পর্যাপ্ত পরিমাণে উপস্থিত থাকে আমান্ডের মধ্যে। তাই আমন্ডকে সুপারফুড বলা হয়।
প্রতিদিন কাঠবাদাম বা আমান্ড খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
আমন্ডের উপকারিতা: Benefits of Almonds:
আমন্ড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: Almonds are Rich in Antioxidants:
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের খুব ভাল উৎস হল কাঠবাদাম বা আমন্ড। আন্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের দেহের কোষগুলিকে ফ্রি রেডিকেলের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। আমন্ডে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস, চোখে ছানি পড়া ইত্যাদির হাত থেকে রক্ষা করে। গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, কাঠবাদাম অর্থাৎ আমন্ডের ত্বকে ফ্লাভোনল, হাইড্রক্সিবেনজোয়িক অ্যাসিড ও অ্যালডিহাইড থাকে। এগুলি দূষণ অথবা ধূমপানের কারণে হওয়া ফুসফুসের ক্ষতি রোধ করে।
আমন্ড পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ: Almonds are Rich in Nutrients:
আমন্ডকে পুষ্টি উপাদানের ভাণ্ডার বলা হয়। আমন্ডের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি থাকে। এছাড়া থাকে ভিটামিন B ও ভিটামিন E। ভিটামিন E একটি অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মত কাজ করে। ভিটামিন E প্রদাহ কমায় ও অক্সিডেটিভ ক্ষতি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রতিদিন প্রায় 56 গ্রাম আমন্ড খেলে মাত্র চার সপ্তাহের মধ্যে ভিটামিন E এর অভাব সম্পূর্ণভাবে দূর হয়।
হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করে: Protects Heart Health:
আমন্ড বাদামে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকার কারণে, আমন্ড দেহে খারাপ কোলেস্টেরল LDL এর মাত্রা কম রাখে। গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, প্রতিদিন প্রায় 42 গ্রাম আমন্ড গ্রহণ করলে হার্টের রোগের সম্ভাবনা কমে এবং পেটের চর্বিও কমে। ভাল কোলেস্টেরল HDL এর মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে আমান্ড। তাই প্রতিদিন আমন্ড গ্রহণ করা হার্টের জন্য স্বাস্থ্যকর।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে: Prevent Diabetes:
ডায়াবেটিসের রোগীরা কী খাবেন ও কী খাবেন না সেটা গুরুত্ব সহকারে বিচার করতে হয়। কাঠবাদাম অর্থাৎ আমন্ডকে অবশ্যই খাদ্য তালিকায় রাখা যেতে পারে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, আমন্ড ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ডায়াবেটিসের রোগীদের দেহে সাধারণত ম্যাগনেসিয়ামের অভাব হয়। আমন্ড গ্রহণ করলে দেহে ম্যাগনেসিয়ামের অভাব মেটে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন পায় 60 গ্রাম আমন্ড খেলে রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে, কোলেস্টেরলের মাত্রাও স্বাভাবিক থাকে।
আমন্ড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়: Almonds Reduce the Risk of Cancer:
যেকোন ধরনের বাদাম যেমন চিনা বাদাম, আখরোট ও আমন্ড, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, স্তন ক্যান্সার রোধ করতে বাদাম জাতীয় খাদ্যের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। আমন্ড, আখরোট, চিনা বাদাম ইত্যাদির মধ্যে স্তন ক্যান্সার বিরোধী বিশেষ উপাদান থাকায়, ক্যান্সারের সম্ভাবনা প্রায় দুই থেকে তিন গুণ কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়া কোলন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে বাদাম জাতীয় খাদ্য।
আমন্ড উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা কমায়: Almonds Reduce the Risk of High Blood Pressure:
উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্টের রোগ, স্ট্রোক, কিডনি ফেলিওর ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হয়। দেহে ম্যাগনেসিয়ামের অভাব হলে, রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে। আমন্ডে উপস্থিত আন্টিঅক্সিডেন্ট ও ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ কমাতে কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে। পর্যাপ্ত আমন্ড গ্রহণ করলে রক্তনালীর স্বাস্থ্য ভাল থাকে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে।
আমন্ড ওজন কমাতে সাহায্য করে: Almonds Helps in Losing Weight:
কাঠবাদাম অর্থাৎ আমন্ডযুক্ত খাদ্য আমাদের মধ্যে তৃপ্তিদায়ক অনুভূতি সৃষ্টি করে। আমন্ডে উপস্থিত ফ্যাটি অ্যাসিড গুলি শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে, ফলে দেহের ওজন কমে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, আমন্ড যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে ওজন কমানো সহজ হয়। প্রাতরাশে আমন্ড যুক্ত খাবার খেলে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমে যায় ও কম খাবারে মন ভরে যায়।
আমন্ড ও স্বাস্থ্যকর ত্বক: Almond and Healthy Skin:
ঝকঝকে উজ্জ্বল ত্বক পেতে বাদামের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। আমন্ডের মধ্যে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন E এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। ভিটামিন বার্ধক্য কমাতে সাহায্য করে এবং আমাদের ত্বককে নরম ও মসৃণ করে তোলে। আমন্ড উপস্থিত পুষ্টি উপাদান বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে বলে প্রমাণিত হয়েছে, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষণায়।
আমন্ড হাড় শক্ত করে: Almond Boost Bone Health:
হাড়ের ঘনত্ব একজন ব্যক্তির সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাড়ের ঘনত্ব কমে গেলে হাড় সহজে ভেঙে যেতে পারে। শিশু ও যুবকদের হার শক্ত হলেও, বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। মহিলাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও বেশি হয়।
যাইহোক, হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করার প্রধান উপায় হল পর্যাপ্ত ভিটামিন ও খনিজ উপাদান গ্রহণ করা। আমন্ড এই কাজটি খুব সহজে করতে পারে, কারণ আমন্ডে থাকে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, ভিটামিন K ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান। এগুলি হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে দারুণ ভাল কাজ করে।
আমন্ড অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে: Almond Help Gut Health:
আমাদের অন্ত্রের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ উপকারী ব্যাকটেরিয়া অর্থাৎ প্রোবায়োটিক থাকলে আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল থাকে। অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল থাকলে দেহে ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নত হয়। সার্বিকভাবে ভাল থাকতে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, নিয়মিত আমন্ড গ্রহণ করলে, অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং আমরা সুস্থ থাকি।
আমন্ড মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে: Almond Maintain a Healthy Brain Function:
আমন্ড সহ যেকোন ধরনের বাদাম, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে খুব উপযোগী। আমন্ড চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। আমন্ডের মধ্যে থাকে ফ্ল্যাভনয়েড, ফাইটোকেমিক্যালস, ভিটামিন E, ভিটামিন B, প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড। এই সকল উপাদান মস্তিষ্কে বার্তা আদান-প্রদানে সহায়তা করে, ফলে চিন্তা ভাবনার স্তর উন্নত হয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, নিয়মিত বাদাম খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
প্রতিদিন কতগুলি কাঠবাদাম অর্থাৎ আমন্ড খাওয়া উচিত? What is the Ideal Consumption of Almonds?
কাঠবাদাম বা আমন্ড বাদাম স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট উপকারী। আমন্ড থেকে পর্যাপ্ত উপকার পেতে হলে প্রতিদিন কুড়িটি আমন্ড গ্রহণ করতে হবে। তবে ওজন কমাতে চাইলে প্রতিদিন মাত্র পাঁচটি আমন্ড গ্রহণ করতে হবে। বেশি আমন্ড খেলে ওজন বেড়ে যাবে।
আমন্ড খাওয়ার সঠিক সময় ও নিয়ম: The Right Time and Rules for Eating Almonds:
আমন্ড থেকে সর্বাধিক পরিমাণ উপকার পেতে সকালের জলখাবার আমন্ড খেতে হবে। আমন্ড থাকা প্রোটিন ও ফাইবার তৃপ্তি দায়ক অনুভূতি দেয়। সকালে আমন্ড গ্রহণ করলে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা কমে। তাই স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সকালে আমন্ড খাওয়া সব থেকে ভাল।
জলে ভেজানো আমন্ড হজমে সাহায্য করে। এটি লাইপেজ নামক হজমকারী উৎসেচকের ক্ষরণের সাহায্য করে, ফলে চর্বি জাতীয় পদার্থ হজম করা সহজ হয়। ভেজানো বাদামে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবার পাওয়া যায়, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়। এছাড়া ভিজিয়ে রাখা বাদাম থেকে সহজে পুষ্টি উপাদান শোষিত হয়।
আমন্ড গ্রহণ করার ব্যাপারে একটা বিষয় গুরুত্ব সহকারে খেয়াল রাখতে হবে। আমন্ড দুটি জাতের, মিষ্টি এবং তেতো। তেতো আমন্ড বিষাক্ত হতে পারে। তেতো আমন্ড গরম করে প্রক্রিয়াকরণ করার পর গ্রহণ করা যেতে পারে। আমাদের দেশে তেতো আমন্ড তেমন পাওয়া যায় না। গ্রীষ্মকালে কাঁচা আমন্ড খেলে শরীরে তাপ উৎপন্ন হওয়ার কারণে হজমের সমস্যা হতে পারে। একারণে আমন্ড, সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে খাওয়া ভাল।