এই 7 টি লক্ষণ দেখলে বুঝবেন আপনার হার্ট সুস্থ আছে। 7 Signs that indicate you have a healthy heart.
আমাদের হৃৎপিণ্ড রক্ত সঞ্চালনের সাহায্যে সারা দেহে অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। আমাদের শরীরকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে হৃৎপিণ্ডের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা আমাদের হার্টের স্বাস্থ্য সম্পর্কে তেমন চিন্তা ভাবনা করি না। তবে হার্টের মধ্যে সামান্য কোন সমস্যা সৃষ্টি হলে আমরা চরম বিপদে পড়তে পারি। হার্টের স্বাস্থ্য কেমন আছে সেটা সম্পর্কে অবশ্যই সচেতন থাকা প্রয়োজন। কিভাবে বুঝবেন যে আপনার হার্ট সুস্থ আছে, সেটা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
সুস্থ হার্টের লক্ষণ ও উপসর্গ: Healthy Heart Signs And Symptoms:
আপনার হার্ট ভাল আছে, আপনি পুরোপুরি সুস্থ আছেন, এটা বোঝা যেতে পারে বেশ কিছু ইতিবাচক লক্ষণ ও উপসর্গ দেখে। মোটামুটি 7 টি সূক্ষ্ম লক্ষণ দেখে বোঝা যেতে পারে যে, আপনার হার্ট সুস্থ আছে ও সঠিকভাবে কাজ করছে।
স্বাস্থ্যকর শ্বাস-প্রশ্বাস: Healthy Breathing:
যদি আপনার শ্বাস নিতে কষ্ট না হয়, শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক বলে মনে হয়, তাহলে বুঝতে হবে হার্ট ঠিক মত কাজ করছে। বুকে ব্যথা, বুকে চাপ সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদি সমস্যা ছাড়াই মাঝারি বা তীব্র শারীরিক কাজ করতে পারলে অর্থাৎ দ্রুত হাঁটতে পারলে, ছুটতে পারলে, আপনার হার্ট সুস্থ আছে। আপনার কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারছে বলেই এই কাজগুলি করতে পারছেন। অর্থাৎ আপনার হার্ট সুস্থ আছে। ওজন তুলতে গিয়ে বা হাঁটতে গিয়ে শ্বাসকষ্ট হলে, হার্টের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
স্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন: Normal Heart Rate:
প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের স্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন প্রতি মিনিটে 60 থেকে 100 এর মধ্যে থাকে। কাজকর্ম করার সময়, ব্যায়াম বা কসরত করার সময় হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি পায়। এছাড়া মানসিক চাপ, উত্তেজনা ইত্যাদি হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি করতে পারে। এছাড়া কিছু ওষুধ আমাদের হৃৎস্পন্দনকে প্রভাবিত করে। হৃৎস্পন্দন কত আছে জানার জন্য পালস অর্থাৎ নাড়ি দেখতে হবে। ব্লাড প্রেশার মাপার যন্ত্রের সাহায্যে বা স্মার্টওয়াচের সাহায্যে হৃৎস্পন্দন মাপা যেতে পারে। হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক থাকলে বুঝতে হবে যে আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ঠিক মত কাজ করছে অর্থাৎ হার্ট সুস্থ আছে।
স্বাভাবিক রক্তচাপ: Healthy Blood Pressure:
হার্ট সুস্থ থাকলে আমাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। রক্তচাপ সাধারণত 120/ 80 mmHg এর নীচে বা কাছাকাছি থাকে। সিস্টোলিক রক্তচাপ 130 এর বেশি হলে এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ 90 এর বেশি হলে রক্তচাপ বেশি আছে বলা যেতে পারে। রক্তচাপ বেশি আছে মনে হলে ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকদিন রক্তচাপ পরিমাপ করতে হবে। এক্ষেত্রে একজন স্বাস্থ্য-কর্মীর সাহায্য নেওয়া ভাল। রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকলে হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভাল আছে বলা যেতে পারে।
স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের মাত্রা: Healthy Cholesterol Levels:
আমাদের দেহে সুস্থ কোশ তৈরির জন্য কোলেস্টেরল প্রয়োজন। এছাড়া হার্ট ও রক্তনালী স্বাস্থ্য রক্ষা করতেও কোলেস্টেরল প্রয়োজন। শরীরে বেশ কয়েক ধরনের কোলেস্টেরল থাকে। এর মধ্যে হাই ডেনসিটি লাইপ্রোপ্রোটিনকে ভাল কোলেস্টেরল এবং লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিনকে খারাপ কোলেস্টেরল বলা হয়। লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে বা হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিনের পরিমাণ কমে গেলে হার্টের ক্ষতি হয় ও হার্ট অ্যাটাকের মত সমস্যা হতে পারে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা সম্পর্কে ধারণা পেতে রক্তের লিপিড প্রোফাইল টেস্ট করতে হবে। রিপোর্ট নরমাল থাকলে হার্ট সুস্থ আছে বলা যেতে পারে।
দ্রুত পুনরুদ্ধার: Quick Recovery:
যেকোন ধরনের শারীরিক কার্যকলাপের পর শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ব্যায়াম বা কসরত করার পরও শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। পেশিতে ল্যাকটিক অ্যাসিড জমা হওয়ার কারণে পেশীতে ব্যথা হয়। হার্ট সুস্থ থাকলে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয় ও আমাদের ক্লান্তি সহজেই দূর হয়। এছাড়া পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহের কারণে শরীর দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। তাই পরিশ্রমের পর দ্রুত শক্তি ফিরে পেলে বুঝতে হবে, হার্ট সুস্থ আছে।
উচ্চ এনার্জি লেভেল: High Energy Levels:
যদি আমরা উদ্যমী হই, দিনটিকে সফল করার জন্য প্রস্তুত থাকি, তাহলে আমাদের হার্ট সুস্থ আছে বলা যায়। সুস্থ হার্ট সারা দেহে পর্যাপ্ত রক্ত পরিবহন করে। ফলে দেহে খাদ্য ও অক্সিজেনের অভাব হয় না ও আমরা প্রাণচঞ্চল থাকি। হাট সুস্থ থাকলে ঘুম ভাল হয়, ক্লান্তি দূর হয়, ফলে আমাদের এনার্জি লেভেল বেশি থাকে।
সুস্থ দাঁত: Good Dental Health:
দাঁতের স্বাস্থ্য ভাল থাকা হার্ট সুস্থ থাকার ইঙ্গিত হতে পারে। 2021 সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, যাদের দাঁতের স্বাস্থ্য ভাল, তাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। এছাড়া দাঁতের স্বাস্থ্য ভাল থাকলে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকিও কম থাকে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, দিনে দুবার এক মিনিট সময় ধরে দাঁত ব্রাশ করলে স্ট্রোক, হার্ট ফেল, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদির সম্ভাবনা কমে। তাই সুস্থ দাঁত মানে সুস্থ হার্ট।