কষা পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিন্য হলে ভুলেও খাবেন না এই 8টি খাবার: Foods to avoid in constipation:
কোষ্ঠকাঠিন্য এমন একটি অস্বস্তিকর অবস্থা যা পেট ফোলা, পেট ব্যথা, অলসতা ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি করে। মল শক্ত হয়ে গেলে মলত্যাগ করতে অসুবিধা হয় ও আমাদের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হলে বেশ কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। কষা পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত সেগুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
কোষ্ঠকাঠিন্য কী? What is Constipation?
কোষ্ঠকাঠিন্য হল একটি সাধারণ হজম-জনিত সমস্যা। এক্ষেত্রে মলের মধ্যে জলের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে মল শক্ত হয়ে যায় ও মলত্যাগ করতে সমস্যা হয়। ব্যক্তি-ভেদে কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণগুলি আলাদা হতে পারে। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রধান লক্ষণ গুলি হল, মল শক্ত হয়ে মলত্যাগে সমস্যা হওয়া, সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ, মলদ্বারে ব্যথা ও রক্তপাত, পিঠের নিচের অংশে ব্যথা ইত্যাদি।
কোষ্ঠকাঠিন্যের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। কী ধরনের খাদ্য গ্রহণ করছেন, জীবনযাত্রা কেমন, দিনে কতটা জল পান করেন ইত্যাদির উপর রোগের তীব্রতা নির্ভর করে। ফাইবার যুক্ত খাবার কম খেলে, অত্যধিক উদ্বেগ ও মানসিক চিন্তায় ভুগলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বৃদ্ধি পায়। বেশ কিছু ওষুধ যেমন ব্যথার ওষুধ, নেশার ওষুধ, অ্যান্টাসিড, আয়রন ট্যাবলেট, খিচুনি প্রতিরোধী ওষুধ ইত্যাদি গ্রহণ করলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। ল্যাকটোজ অ-সহিষ্ণু ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দুগ্ধজাত পণ্য গ্রহণ করলে এই সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় গর্ভবতী মহিলাদের হজমের প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
Baidyanath Kabzhar – 60 Tablets | Ayurvedic Relief from Constipation, Indigestion, Gas & Acidity
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত: Foods to Avoid When Constipated:
সাদা আটাযুক্ত খাদ্য: Anything With White Flour:
সাদা আটা অর্থাৎ ময়দার মধ্যে ফাইবারের পরিমাণ কম থাকে। যেহেতু আমাদের অন্ত্রের কাজ স্বাভাবিক রাখতে ফাইবার খুব প্রয়োজনীয়, তাই ময়দাযুক্ত খাদ্য কম খাওয়া উচিত। ময়দা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন প্রকার ফাস্টফুড যেমন বার্গার, পিৎজা, কেক, কুকিজ, নান ইত্যাদি খাবার যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো। এসব খাদ্যের পরিবর্তে অধিক ফাইবার যুক্ত খাদ্য যেমন ওটস, বাদামী চাল, আটার রুটি, পাস্তা, পপকর্ন ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। এইসব অধিক ফাইবার-যুক্ত খাদ্য আমাদের পেট ভালো রাখে ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমায়।
দুগ্ধজাত পণ্য: Dairy Products:
দুধ, পনির, আইসক্রিম ইত্যাদি খাদ্যে চর্বি বেশি থাকে। এই চর্বি হজম করা সহজ নয়, তাই দুগ্ধজাত পণ্য গ্রহণ করলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। দুগ্ধজাত পণ্যে ফাইবারের অভাব থাকে এবং ল্যাকটোজ নামক শর্করা থাকে। এর ফলে হজমের সমস্যা হতে পারে, কারণ আমরা অনেকেই ল্যাকটোজ হজম করতে পারি না। শিশুদের ক্ষেত্রে খাদ্য থেকে অ্যালার্জির অন্যতম কারণ হল দুগ্ধজাত পণ্য। তাই দুগ্ধজাত পণ্য কম গ্রহণ করলে উপকার পাওয়া যায়।
প্রক্রিয়াজাত মাংস: Processed Meats:
প্রক্রিয়াজাত মাংস হজমের প্রক্রিয়ার উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে হজমের গতি কমে যেতে পারে। প্রক্রিয়াজাত মাংসে ফাইবারের পরিমাণ কম থাকে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করে রাখার জন্য প্রক্রিয়াজাত মাংসে নাইট্রেট দেওয়া থাকে। একারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে প্রক্রিয়াজাত মাংস এড়িয়ে চলা ভালো। প্রক্রিয়াজাত মাংসের বদলে তাজা মাংস খাওয়া যেতে পারে, বিশেষ করে মুরগি ও টার্কি জাতীয় মাংস প্রক্রিয়াজাত রেড-মিটের থেকে বেশি স্বাস্থ্যকর।
ভাজা খাবার: Fried Foods:
প্রক্রিয়াজাত মাংসের মতো ভাজা খাবারও হজম করা কঠিন। ভাজা খাবারের স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট যুক্ত খাদ্য হজম করা কঠিন। ভাজা খাবার হজমের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে ফলে মল শক্ত হয়ে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়িয়ে চলতে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ভাজা মুরগির মাংস, ভাজা মাছ, চিপস, বিভিন্ন ধরনের চপ, পেঁয়াজি ইত্যাদি কম খেতে হবে।
ডিম: Eggs:
ডিম বেশি খেলেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে, বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। ডিমে ফাইবারের পরিমাণ কম থাকে এবং চর্বির পরিমাণ সামান্য বেশি থাকে। একারণে ডিম বেশি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়তে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে বাঁচতে ফাইবার যুক্ত খাদ্য বেশি খেতে হবে এবং ডিম কম খেতে হবে।
চিনিযুক্ত খাবার: Sugary Foods:
চিনিযুক্ত খাবারের ফাইবার কম থাকে। চিনিযুক্ত খাবার যেমন জ্যাম, জেলি, চকলেট, ডোনাট, আইসক্রিম, ক্যান্ডি ইত্যাদি বেশি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। ফলের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই চিনি বেশি থাকে, তবে এর মধ্যে ফাইবার বেশি থাকার কারণে তেমন কোন সমস্যা হয় না। একারণে মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করলে চিনির বদলে ফল খাওয়া যেতে পারে।
রেড মিট: Red Meat:
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে রেড-মিট কম খাওয়া ভালো বলা হয়। রেড-মিটে উচ্চমাত্রায় স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকার জন্য রেড-মিট ধমনীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। তবে রেড-মিট সম্পূর্ণ বন্ধ করা উচিত নয়, কারণ রেড-মিট রক্ত উৎপাদনে সাহায্য করে ও শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু চর্বিযুক্ত রেড-মিট বেশি খেলে এটি ভাজা খাবারের মতো ক্ষতি করে। রেড-মিটে বেশি পরিমাণ স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। একারণে পুষ্টিবিদরা সপ্তাহে একবারের বেশি রেড-মিট গ্রহণ করতে নিষেধ করেন।
কলা: Bananas:
সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য কলা খাওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু কলা থেকে কতটা উপকার পাওয়া যাবে সেটা নির্ভর করছে কলাটা পাকা না কাঁচা তার উপর। কাঁচা কলা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। তবে পাকা কলা অবশ্যই বেশ ভালো, কারণ পাকা কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পারে। তবে কলা ছাড়াও অন্যান্য ফাইবার-যুক্ত খাদ্য, ফল বা সবজি খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
তথ্যসূত্র:
WebMd, Health.com, healthline.com, Mayo Clinic, Cleveland Clinic etc.