Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাখাদ্য ও পানীয় Food & Drinksপন্য Product

কিডনি ডিটক্স করতে বা পরিষ্কার রাখতে কি খাবেন? Foods That Detox Your Kidney:

আমাদের কিডনি আমাদের শরীরে উৎপন্ন বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ গুলিকে শরীরের বাইরে নিষ্কাশন করে। কিডনি দেহে তরলের ভারসাম্য রক্ষা করে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিছু প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত লবণ ইত্যাদি কিডনির ক্ষতি করতে পারে। তবে ভালো খবর হল যে, বেশ কিছু খাবার প্রাকৃতিক ভাবে আমাদের কিডনি ডিটক্স বা পরিষ্কার করতে সাহায্য করতে পারে। কিডনি ডিটক্স করতে বা পরিষ্কার রাখতে কি খাবেন, সেটা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় কিডনির ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিডনি ভালোভাবে কাজ না করলে দেহের মধ্যে বিষাক্ত পদার্থ জমা হয় ও বিভিন্ন জটিল সমস্যার সূচনা হয়। কিডনি ডিটক্স অর্থাৎ কিডনি পরিষ্কার করার জন্য জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সাথে সাথে খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন করা প্রয়োজন। কিডনি ডিটক্সের প্রধান লক্ষ্য হল শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করা ও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করা। যদিও শরীরের নিজস্ব প্রাকৃতিক ডিটক্সিফিকেশন পদ্ধতি আছে, তবে খাদ্য তালিকায় নির্দিষ্ট কিছু খাদ্যে খাবার যোগ করলে ডিটক্স প্রক্রিয়া সহজ হয়। কিডনিকে পরিষ্কার করতে পারে এমন খাদ্য গ্রহণ করলে প্রদাহ কমে, দেহে বিষাক্ত পদার্থের পরিমাণ কমে ও কিডনিতে পাথর হওয়া সম্ভাবনা কমে। এছাড়া দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের হাত থেকেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব হয়।

ফলমূল এবং শাকসবজি ইত্যাদি খাবার প্রাকৃতিক ভাবে আমাদের কিডনিকে পরিষ্কার রাখতে পারে। এই খাবারগুলি অক্সিডেটিভ ট্রেস, প্রদাহ ইত্যাদি কমায় এবং কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখে। কিডনি পরিষ্কার বা ডিটক্স করতে সাহায্য করে এমন কিছু খাবার নিয়ে আলোচনা করা হল।

ক্র্যানবেরি মূত্রনালির সংক্রমণের চিকিৎসায় বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়। ক্র্যানবেরির মধ্যে প্রোঅ্যান্থোসায়ানিডিন নামক একটি প্রাকৃতিক যৌগ আছে যা ব্যাকটেরিয়া বিশেষ করে ই-কোলির সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে। ক্র্যানবেরি মূত্রনালি, মূত্রাশয় ও কিডনির সংক্রমণ প্রতিরোধ করে ও ব্যথা কমায়।

নিয়মিত ক্র্যানবেরি জুস পান করলে বা গোটা ক্র্যানবেরি গ্রহণ করলে কিডনি ও মূত্রনালি পরিষ্কার থাকে। এর ফলে কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় ও কিডনি সুস্থ থাকে।

তরমুজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ জল থাকার কারণে তরমুজ আমাদের দেহের জলের চাহিদা পূরণ করতে পারে। তরমুজ খেলে মূত্র উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ও কিডনি থেকে বিষাক্ত পদার্থ দেহের বাইরে সহজে নির্গত হতে পারে। এছাড়া তরমুজে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম লবণ থাকে, ফলে দেহে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কমে এবং কিডনির উপকার হয়। এছাড়া তরমুজে থাকে লাইকোপিন যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই লাইকোপিন অক্সিডেটিভ ট্রেস কমিয়ে কিডনির ক্ষতি রোধ করে। সামগ্রিকভাবে সুস্থ থাকতে খাদ্য তালিকায় অবশ্যই তরমুজ যোগ করতে হবে।

লেবু জাতীয় ফলের রসে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে যা কিডনিতে পাথর জমতে বাধা দেয়। সাইট্রিক অ্যাসিড প্রস্রাবে সাইট্রেটের মাত্রা বৃদ্ধি করে, ফলে কিডনিতে পাথর জমতে পারে না। এছাড়া কিডনি থেকে বিষাক্ত পদার্থ নিষ্কাশনেও সাহায্য করে সাইট্রিক অ্যাসিড। নিয়মিত লেবুর শরবত বা লেবু জাতীয় ফল খেলে কিডনির সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। তাজা লেবুর রস বা কমলার রস পান করলে প্রাকৃতিক ভাবে কিডনি বিষমুক্ত হয় ও প্রস্রাবের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়।

বেদানার বীজ ও রস উভয়ই কিডনির জন্য উপকারী, কারণ এর মধ্যে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম ও শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে। বেদানার মধ্যে থাকা পুনিক্যালাজিন (Punicalagins) ও অ্যান্থোসানিন কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করতে বিশেষভাবে কার্যকরী। বেদানার রস পান করলে অক্সিডেটিভ ট্রেস কমে ও দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের ঝুঁকি কমে। এছাড়া বেদানা আমাদের হার্টের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটায়।

আমাদের রান্নাঘরের মসলার মধ্যে অন্যতম হল রসুন। রসুন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। রসুনের মধ্যে সালফার যৌগ ও প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য থাকার জন্য রসুন আমাদের কিডনি ডিটক্স করতে সাহায্য করে। এছাড়া রসুন কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে ও রক্তনালীর চাপ কমিয়ে কিডনির উপকার করে। উচ্চ রক্তচাপ কিডনির ক্ষতির অন্যতম প্রধান কারণ। রসুন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ও কিডনির ক্ষতি রোধ করে।

কাঁচা, ভাজা বা হালকা ভাজা রসুন খাওয়া যেতে পারে। শরীরকে বিষমুক্ত করতে প্রতিদিন সকালে হালকা গরম জলের সাথে একটি কাঁচা রসুনের কোয়া খাওয়া যেতে পারে।

হলুদের মধ্যে কারকিউমিন থাকে, এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের। কারকিউমিনের প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য আছে। দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ কিডনি চরম ক্ষতি করতে পারে। খাদ্যে হলুদ ব্যবহার করলে দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের ঝুঁকি কমে। এছাড়া হলুদ কিডনির টিস্যুগুলিকে রক্ষা করে এবং রক্ত ফিল্টার করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কিডনি রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে হলুদ গ্রহণ করলে উপকার পাওয়া যায়।

সাধারণত আমাদের দেশের বেশিরভাগ রান্নায় হলুদ ব্যবহার করা হয়। তরকারি, স্যুপ, চা, গরম দুধ ইত্যাদির মধ্যে হলুদ যোগ করে সেবন করা ভালো। প্রতিদিন মাত্র 1 চামচ হলুদ কিডনি পরিষ্কার করতে যথেষ্ট কার্যকরী।

আপেল ফাইবার সমৃদ্ধ এবং প্রদাহ বিরোধী। আপেলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোলেস্টেরল কমাতে এবং ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া আপেলের প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে, আপেল রক্ত-শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ও ডায়াবেটিস জনিত কিডনির ক্ষতি রোধ করে।

কাঁচা আপেল খাওয়া সব থেকে ভালো। এছাড়া আপেল কে রান্না করেও খাওয়া যেতে পারে। স্যালাডে আপেল যোগ করে বা ওটমিলের মধ্যে আপেল যোগ করে খাওয়া যেতে পারে।

সবুজ শাক সবজির মধ্যে ভিটামিন সি, ফলেট, ফাইবার, ভিটামিন কে ও আরও অনেক ফাইটোনিউট্রিয়েন্স থাকে। এই সকল পুষ্টি উপাদান রক্তচাপ কমায়, রক্তে শর্করার ভারসাম্য রক্ষা করে এবং কিডনির উপর চাপ কমায়। প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও সাহায্য করে এই সকল পুষ্টি উপাদান।

খাদ্য তালিকায় স্বাস্থ্যকর শাকসবজি বিশেষ করে পাতাযুক্ত শাকসবজি অবশ্যই যোগ করা দরকার। বাঁধাকপি, ব্রকলি, শালগম শাক, সরিষার শাক, ফুলকপি, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য বেশ উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে। কিডনিতে পাথর সৃষ্টিকারী উপাদানের পরিমাণ কম করতে পারে ক্যালসিয়াম। উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাদ্য যেমন দুধ, দই, পনির, সোয়াবিন, টোফু, মাংস, ডিম, শস্যজাতীয় খাদ্য ইত্যাদি গ্রহণ করলে দেহের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হয় ও কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কম।

কিডনির স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অপরিহার্য উপাদান হল জল। পরিমিত পরিমাণ জল পান করলে দেহে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ সহজে বাইরে বেরিয়ে যায়। পর্যাপ্ত জল পান করলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমে এবং মূত্রনালির সংক্রমণের সম্ভাবনাও কমে।

দেহে জলের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখার দিকে নজর দিতে হবে এবং পর্যাপ্ত জল পান করতে হবে। জলপানকে উপভোগ করার জন্য ও সতেজতা বৃদ্ধি করার জন্য লেবু, শসা, পুদিনা ইত্যাদি ভেষজ যোগ করা যেতে পারে।

Healthline.com, Medical News Today, National Kidney Foundation, Urologistjaipur e.t.c.