Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রারোগ ও ব্যাধি Health Condition

কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ: Early Warning Signs of Kidney Disease:

কিডনির রোগকে বলা হয়  সাইলেন্ট কিলার বা গুপ্তঘাতক। লক্ষ লক্ষ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও বুঝতেই পারেনা যে কিডনির রোগে ভুগছেন। কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলি জেনে নিতে প্রতিবেদনটি পড়তে থাকুন।

আমাদের দেহে দুটি কিডনি বা বৃক্ক থাকে। এদের কাজ হল আমাদের রক্তকে ছেঁকে, তার মধ্যে থাকা বিপাক-জাত দূষিত পদার্থ যেমন ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন, ইউরিক অ্যাসিড ইত্যাদিকে মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বহিষ্কার করা।

আমাদের কিডনির কাজ করার ক্ষমতা প্রয়োজনের তুলনায় বেশ খানিকটা বেশি থাকে। কিডনি 30 থেকে 40 শতাংশ কম কাজ করলেও আমাদের তেমন কোনও সমস্যা হয় না। ফলে কিডনি রোগাক্রান্ত হয়ে বেশ খানিকটা অসুস্থ না হওয়া পর্যন্ত, আমরা কিছুই বুঝতে পারি না। আর যখন বুঝতে পারি, ততদিনে কিডনি অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। এই কারণে কিডনির রোগকে সাইলেন্ট কিলার বা গুপ্ত ঘাতক বলা হয়।

আমরা আমাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা পেতে; ব্লাড প্রেশার মাপি, সুগার পরীক্ষা করি, কোলেস্টেরল চেক করি, কিন্তু কিডনির রোগ শনাক্তকারী পরীক্ষা, রক্তের ক্রিয়েটিনিন টেস্ট করতে ভুলে যায়। ক্রিয়েটিনিন টেস্ট সম্পর্কে আমরা তেমন কিছু জানিই না। ভারতবর্ষে মারাত্মক রোগ গুলির মধ্যে, কিডনি রোগের স্থান হল অষ্টম। রক্তের ক্রিয়েটিনিন টেস্ট করলে কিডনির স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভাল ধারণা পাওয়া যায়।

কিডনি রোগাক্রান্ত হলে বেশ কিছু প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যায়। কিন্তু আমরা সেগুলিকে গুরুত্ব দিই না বা অন্য কোন রোগের কারণ কারণে হচ্ছে বলে মনে করি। সেকারণে, কিডনি রোগের লক্ষণ গুলি আমাদের জানা উচিত এবং সচেতন হওয়া উচিত। প্রয়োজনে রক্ত, মূত্র ইত্যাদি পরীক্ষা করার সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। নেফ্রোলজিস্টের পরামর্শ নিলে ভাল হয়।

উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে, ডায়াবেটিস বা সুগার হলে, ওজন বেশি হলে কিডনির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। হার্টের রোগ বা ধমনীর রোগ হলে বা পরিবারের কেউ কিডনি রোগে ভুগছেন বা কিডনি রোগে মারা গিয়েছেন, এমন হলে অবশ্যই প্রতিবছর নিয়ম করে কিডনির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। এছাড়া প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

কিডনি রোগাক্রান্ত কিনা সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা করার পর। তবে কিছু প্রাথমিক লক্ষণ দেখেও ধারণা পাওয়া যায়।

কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হল পা, গোড়ালি, পায়ের পাতা ইত্যাদি ফুলে যাওয়া। এই ফোলা স্থানে চাপ দিলে গর্ত সৃষ্টি হয় এবং ঠিক হতে কিছুটা সময় লাগে। কিডনির কাজ করার ক্ষমতা কমতে থাকলে দেহে সোডিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং পায়ের চামড়া ফুলে যায়। এককথায় পা ফুলে গেলে অবশ্যই কিডনি ফাংশন টেস্ট করতে হবে এবং নেফ্রোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে।

চোখের চারিপাশের কোষ গুলির মধ্যে ফ্লুয়িড বা কোশ-রসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে চোখের চারপাশ ফুলে যায়। এটি কিডনি রোগের প্রাথমিক ও গুরুত্বপূর্ণ একটি লক্ষণ। সুস্থ ব্যক্তিদের সাধারণত মূত্রের মাধ্যমে প্রোটিন নির্গত হয় না। কিডনি রোগাক্রান্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলে মূত্রের মাধ্যমে প্রোটিন নির্গত হতে পারে। যাদের মূত্রে প্রোটিন নির্গত হচ্ছে তাদের এই লক্ষণটি বেশি দেখা যায়।

কিডনি রোগাক্রান্ত হওয়ার একটি প্রধান লক্ষণ হল দুর্বলতা। কিডনি যত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দুর্বলতা তত বৃদ্ধি পায়। কিডনি রোগগ্রস্ত হলে শম-সাধ্য কাজ করা একেবারেই সম্ভব হয় না। কিডনি অসুস্থ হলে শরীরের মধ্যে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি পরিমাণ বিপাক-জাত বর্জ্য পদার্থ বা দূষিত পদার্থ জমা হওয়ার কারণে এটা ঘটে। কিডনি রোগ ছাড়া ছাড়াও অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতায় দুর্বলতা দেখা যায়। আর এই কারণে দুর্বলতাকে কিডনি রোগের লক্ষণ বলে গুরুত্ব দিতে ভুলে যায়।

কিডনি রোগের কারণে দেহে ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন, ইউরিক অ্যাসিড ইত্যাদি বৃদ্ধি পেলে হজম শক্তি কমে যায়। কিডনি রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে, মুখে খাবারের সাথে স্বাদ বদলে যায়। খাদ্য গ্রহণ করার ইচ্ছে কমে যায়। এইরকম লক্ষণ দেখা গেলে অবশ্যই কিডনি ফাংশন টেস্ট করা প্রয়োজন। নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হওয়া কিডনি রোগের লক্ষণ।

বারে বারে অল্প অল্প পরিমাণে প্রস্রাব করা, ফেনার মত মূত্র ত্যাগ, মূত্রের পরিমাণ স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি বা কম হওয়া ইত্যাদি কিডনি রোগের কারণে হতে পারে। প্রস্রাবের বেগ থাকা সত্ত্বেও প্রস্রাব না হলে, বারে বারে মূত্রনালিতে ইনফেকশন হলে, প্রস্রাব করার সময় জ্বালা যন্ত্রণা হলে, কিডনি কেমন আছে সেটা দেখা উচিত। মূত্রের মধ্যে রক্ত এলে ও প্রোটিন নির্গত হলেও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

রক্তের পরিমাণ কম হওয়ার তেমন কোন কারণ না থাকা সত্ত্বেও, রক্ত ও হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়া কিডনি রোগের লক্ষণ। কিডনি থেকে এরিথ্রোপয়েটিন নামক হরমোন উৎপন্ন হয়। এই হরমোন লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদনে সাহায্য করে। কিডনি রোগাক্রান্ত হলে এরিথ্রোপয়েটিন হরমোনের উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং অ্যানিমিয়া দেখা দেয়।

কিডনির অবস্থা বেশ কিছুটা খারাপ হলে আমাদের ত্বক শুকনো হয়ে যায়, ফেটে যায় এবং ত্বক চুলকায়। কিডনি রোগাক্রান্ত হয়ে শরীরের দূষিত পদার্থগুলিকে শরীর থেকে নির্গত করতে না পারলে, সেগুলি দেহে জমা হয়। এই সকল দূষিত পদার্থের দেহে জমা হওয়ার কারণে ত্বকের সমস্যা দেখা যায় এবং শরীর থেকে দুর্গন্ধ বেরোয়।

কিডনি অসুস্থ হলে শরীরের দূষিত পদার্থ বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণও কমে যায়। ফলে রক্তের অক্সিজেন পরিবহন করার ক্ষমতা কমে যায়। মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন না পৌঁছলে ভাবনা চিন্তায় সমস্যা হয়, মনঃসংযোগে বিঘ্ন ঘটে, মেমোরি লস হয় এবং মাথা ঝিমঝিম করে।

পলিসিসটিক কিডনি ডিজিজের ক্ষেত্রে এবং কিডনিতে স্টোন হলে, পিঠে ব্যথা হতে পারে। বিশেষ করে যে স্থানে কিডনি থাকে তার উপর দিকে ব্যথা হতে পারে। আবার মূত্র-থলি বা মূত্রনালিতে ইনফেকশন হলে বা স্টোন হলে তলপেটে ব্যথা হতে পারে। এইরকম ব্যথা হলে অবশ্যই এক্স-রে বা আল্ট্রাসাউন্ড দ্বারা কিডনি, মূত্র-থলি ও গবিনির ছবি করে দেখে নেয়া প্রয়োজন।

উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কিডনি রোগের কারণেও হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিলে কিডনি ফাংশন টেস্ট করা অবশ্য প্রয়োজন। কিডনির স্বাস্থ্য খারাপ হলে, শরীরের সোডিয়াম ও জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়; ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে মাথা ধরা, পেট ব্যথা, চোখে অন্ধকার দেখা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। এগুলি কিডনি রোগের কারণে হতে পারে।