Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাখাদ্য ও পানীয় Food & Drinksরোগ ও ব্যাধি Health Condition

কিডনি সুস্থ রাখতে এই খাবারগুলি খাবেন না: Worst Foods for Kidney:

কিডনি সুস্থ রাখতে এই খাবারগুলি খাবেন না: Worst Foods for Kidney:

সুস্থ থাকার জন্য বৃক্ক বা কিডনি ভালো থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর কিডনি আমাদের রোগ থেকে রক্ষা করে এবং শরীরে উৎপন্ন হওয়া বিষাক্ত পদার্থ শরীরের বাইরে নিষ্কাশন করে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ও খাদ্য কিডনিকে ভালো রাখে। বেশ কিছু খাদ্য আমাদের কিডনির ক্ষতি করতে পারে। কিডনি সুস্থ রাখতে কোন খাদ্য গুলি ভুলেও খাওয়া উচিত নয় সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

কিডনির শত্রু Kidney’s Enemies

বিভিন্ন কারণে আমাদের কিডনির ক্ষতি হতে পারে। বেশ কিছু ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন থেকে কিডনির ক্ষতি হয়। যেমন হে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস, করোনা ভাইরাস ইত্যাদির আক্রমণে কিডনির ক্ষতি হতে পারে। ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশনের কারণেও কিডনির কিডনির ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া ডায়াবেটিস হলে, উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের রোগে কিডনির প্রচণ্ড ক্ষতি হয়। আবার সাদা চামড়ার মানুষ অপেক্ষা কালো চামড়ার মানুষদের কিডনি রোগের সম্ভাবনা বেশি।

আমাদের জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের উপর কিডনির স্বাস্থ্য নির্ভর করে। সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস ও প্রোটিনের মাত্রা কিডনির কার্যকারিতা কে প্রভাবিত করে। মাত্রাতিরিক্ত ফসফরাস কিডনিকে বিপদে ফেলতে পারে। দেহে ফসফরাস বেশি থাকলে হারে ক্যালসিয়ামের অভাব হয় ও কিডনি দুর্বল হয়ে পড়ে।

অতিরিক্ত পটাশিয়াম আর একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। কিডনি অসুস্থ হলে দেহে পটাশিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। হার্ট সুস্থ রাখতে পটাশিয়ামের মাত্রা স্বাভাবিক রাখা দরকার। সোডিয়াম ও পটাশিয়াম উভয়ই কিডনির কাজ স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। দেহে সোডিয়ামের মাত্রা বেশি হলে রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং কিডনির ক্ষতি হয়।

কিডনি সুস্থ রাখতে কি খাবেন না? Worst Food for Kidney:

কিডনি অসুস্থ হলে বা কিডনি সুস্থ রাখতে যে খাবারগুলি খাবেন না বা কম খাবেন সেগুলি হল:-

চিনি: Sugar:

কিডনির রোগ থাকলে চিনি ও ফলের রস থেকে দূরে থাকতে হবে। বিশেষ করে চিনিযুক্ত মিষ্টি পানীয় না খাওয়াই ভালো। ডায়াবেটিস হলে কিডনির খুব ক্ষতি হয়, তাই ডায়াবেটিস হলে চিনি যুক্ত খাদ্য যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো। ডায়াবেটিস রোগে দীর্ঘ সময় রক্তে সুগারের মাত্রা বেশি থাকে। এর ফলে কিডনি, স্নায়ু ও হার্টের ক্ষতি হয়। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাদ্য গুলি হল; মিষ্টি, কেক, চকলেট, কুকিজ, কোলড্রিংস ইত্যাদি।

কলা: Banana:

কলার মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। এই পটাশিয়াম, কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস করে। গ্রীষ্ম প্রধান দেশের বেশিরভাগ ফলে পটাশিয়াম বেশি থাকে, তাই পটাশিয়াম কম আছে এমন ফল খেতে হবে।

বাদামি চাল: Brown Rice:

সাদা চাল অপেক্ষা বাদামি চালে বেশি পরিমাণে পটাশিয়াম ও ফসফরাস থাকে। তাই বাদামি চাল কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করে কিডনির ক্ষতি করতে পারে। অল্প পরিমাণ বাদামি চাল অবশ্যই খাওয়া যেতে পারে। কারণ এটি অন্যান্য পুষ্টিগুণে ভরপুর। তবে বেশি পরিমাণ বাদামি চাল গ্রহণ করা উচিত নয়।

অ্যালকোহল: Alcihol:

অত্যধিক মদ্যপান কিডনির সর্বনাশ করে। অ্যালকোহল ডায়াবেটিসের ওষুধের কার্যকারিতা হ্রাস করে। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ কর করতে সমস্যা হয়। অতএব অ্যালকোহল থেকে সাবধান হতে হবে। অল্প পরিমাণে অ্যালকোহল গ্রহণ করা গেলেও, মাত্রা-রিক্ত অ্যালকোহল একেবারেই চলবে না।

প্যাকেট-জাত খাদ্য: Packaged Food:

প্যাকেট-জাত খাদ্য খুব সহজলভ্য। রেডিমেড খাবারে অত্যধিক পরিমাণে সোডিয়াম থাকে। খাবার দীর্ঘদিন ভালো রাখার জন্য সোডিয়াম বেশি দেওয়া হয়। যেহেতু সোডিয়াম কিডনির উপর চাপ বাড়িয়ে দেয়, কিডনির কাজ বাড়ায়, তাই প্যাকেট-জাত খাদ্য কম খেতে হয় হবে।

দুগ্ধজাত খাদ্য: Dairy Products:

দুগ্ধ জাত খাদ্যে পটাশিয়াম ও ফসফরাস বেশি থাকে এবং প্রোটিনের পরিমাণও বেশি থাকে। প্রোটিন বেশি খেলে প্রোটিন জাতীয় বর্জ্য পদার্থ বেশি উৎপন্ন হয়। কিডনি সুস্থ থাকলে দুগ্ধজাত খাদ্য গ্রহণ করা বেশ ভালো। কিন্তু কিডনি অসুস্থ হলে বা দুর্বল হলে এই অতিরিক্ত প্রোটিন-জাত বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করা বেশ কঠিন। এর ফলে হজমের সমস্যা, হার্টের জটিলতা এবং ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি হতে পারে।

সোডা: Soda:

সোডায় কোন পুষ্টি উপাদান থাকে না। থাকে শুধু প্রচুর পরিমাণে চিনি। সোডা-যুক্ত ঠাণ্ডা পানীয় কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়। সোডা-যুক্ত ঠাণ্ডা পানীয়তে অতিরিক্ত ক্যালরি থাকে। ফলে খুব সহজে দেহের ওজন বাড়ায়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে সোডা অস্টিওপোরোসিস, মেটাবলিক ডিজিজ, কিডনির রোগ, দাঁতের রোগ ইত্যাদি সৃষ্টি করে। কিডনি সুস্থ রাখতে সোডা-যুক্ত ঠাণ্ডা পানীয় কম খেতে হবে।

শুকন ফল: Dry Fruits:

শুকনো ফলে সমস্ত পুষ্টি উপাদান ঘনীভূত অবস্থায় থাকে। শুকনো ফল যেমন খেজুর, কিসমিস ইত্যাদিতে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। একারণে কিডনি ভালো রাখতে শুকনো ফল কম খেতে হবে।

পাতাযুক্ত সবুজ শাক: Leafy Greens:

বিভিন্ন প্রকার শাক অল্প পরিমাণে খাওয়া ভালো। তবে যেহেতু পাতাযুক্ত শাকসবজিতে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে, তাই কিডনি অসুস্থ হলে শাকসবজি কম খেতে হবে বা সম্পূর্ণ বাদ দিতে হবে।

টমেটো: Tomatoes

টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। তাই টমেটো কম খাওয়া ভালো। সমস্যা হল, বেশ কিছু প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে টমেটো থাকে। টমেটো যুক্ত খাদ্য কম খেতে হবে।

স্নাক্স: Snack:

ক্রাকার, চিপস ইত্যাদি স্বাদে ভালো। কিন্তু এই খাবারগুলি লবণের পরিপূর্ণ। দেহে সোডিয়ামের মাত্রা কম রাখলে কিডনি ভালো থাকে। তাই স্নাক্স কম খেতে হবে।

আচার: Pickled:

বিভিন্ন ধরনের ফল ও শাকসবজি দিয়ে আচার তৈরি করা হয়। আচারের অন্যতম উপাদান হল খাদ্য লবণ। অর্থাৎ আচারে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে। একারণে আচার কম খেতে হবে।

আলু: Potato:

আলু এবং মিষ্টি আলু উভয়েই প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। তবে রান্নার আগে জলে ভিজিয়ে রাখলে পটাশিয়ামের মাত্রা কমে। কিডনি সুস্থ রাখতে আলু কম খান।