কিভাবে আপনার লিভার সুস্থ রাখবেন? How to keep your liver healthy?
আমাদের পুষ্টি, বৃদ্ধি ও বিকাশে আমাদের লিভারের গুরুত্ব অপরিসীম। কিভাবে আমরা আমাদের লিভার কে সুস্থ রাখতে পারি, সেটা জানতে প্রতিবেদনটি পড়তে থাকুন।
আমাদের পৌষ্টিকতন্ত্রের প্রধান একটি অঙ্গ হল লিভার বা যকৃৎ। এটি হচ্ছে এমন একটি অঙ্গ যার যত্ন না করলে খুব সহজেই এর কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস পায় বা কমে যায়। আমরা খাদ্য, পানীয়, ওষুধ যা কিছু গ্রহণ করি, সবকিছু লিভারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে লিভারের যত্ন করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য। আমাদের শরীরে উৎপন্ন হওয়া বিষাক্ত রাসায়নিকগুলিকে লিভার শরীরের বাইরে বের করতে সাহায্য করে, ফলে রক্ত পরিশুদ্ধ হয়।
লিভার পিত্ত উৎপাদন করে এবং এই পিত্ত আমাদের খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। বিশেষ করে তেল ও চর্বি জাতীয় খাদ্য হজমে ভূমিকা নেয়। এছাড়া লিভার গ্লুকোজ জমা রাখে। শরীরে তাৎক্ষণিক-ভাবে শক্তির চাহিদা হলে, লিভারে জমা থাকা গ্লুকোজ এই শক্তির চাহিদা মেটায়।
লিভারের স্বাস্থ্য ভাল রাখা তেমন কোন কঠিন কাজ নয়। সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, লিভারকে সুস্থ রাখার প্রধান উপায়। লিভার সুস্থ রাখতে কি করবেন না, কি খাবেন না, তার থেকে কি করবেন এবং কি খাবেন এটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার যকৃতের যত্ন: Care for your liver:
অ্যালকোহল পান নিয়ন্ত্রণ করুন। Do not drink a lot of alcohol.
অ্যালকোহল পান করলে লিভারের কোষগুলির তীব্র মাত্রায় ক্ষতি হতে পারে। ফলে লিভার ফুলে যেতে পারে, লিভারের ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে এবং সিরোসিস অফ লিভার নামক রোগ হতে পারে। সিরোসিস অফ লিভার রোগে মৃত্যুও হতে পারে।
দিনে 60 ml এর বেশি অ্যালকোহল পান করলে লিভারের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা তীব্র মাত্রায় বৃদ্ধি পায়।
নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা: Regular exercise and have an active lifestyle:
লিভার সুস্থ রাখার প্রধান চাবিকাঠি হল নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটাচলা, প্রাণায়াম ইত্যাদি। জীবনযাত্রার সক্রিয় হলে লিভার টক্সিন মুক্ত হয়, লিভারের উপর চাপ কমে এবং এর ফলে মোটা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে ফ্যাটি লিভার ও সিরোসিস অফ লিভার হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ: কম চর্বিযুক্ত এবং অধিক ফাইবার যুক্ত খাদ্য গ্রহণ: Have a balanced and healthy diet: Less fatty food and more fiber:
লিভারের রোগ ফ্যাটি লিভার হওয়ার প্রধান কারণ হল রক্তের মধ্যে অধিক মাত্রায় চর্বি বা কোলেস্টেরলের উপস্থিতি। খাদ্যে কৃত্রিমভাবে উৎপন্ন করা চর্বি জাতীয় পদার্থ যেমন বনস্পতি, মার্জেরিন ইত্যাদি কম পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত বা একেবারেই গ্রহণ করা উচিত নয়।
বেশি পরিমাণ তেলেভাজা, রেড মিট ও অতিরিক্ত পরিমাণ দুগ্ধজাত পদার্থ গ্রহণ করলে লিভারের স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। ফাইবার যুক্ত খাদ্য বেশি গ্রহণ করা উচিত; যেমন শাকসবজি, ফল, গোটা দানা শস্য ইত্যাদি। প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করার জন্য মাছ, সাদা মাংস, ডিম, বাদাম ইত্যাদি খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ থেকে সাবধান। Watch out for certain medicines.
কিছু ওষুধ আমাদের লিভারের ক্ষতি করতে পারে। কোলেস্টেরল কম করার ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বেশি পরিমাণ ব্যথার ওষুধ যেমন অ্যাসিটামিনোফেন বেশি ব্যবহার করলে লিভারের ক্ষতি হতে পারে। আরও বেশ কিছু মেডিসিন আছে যারা লিভারের রোগ সৃষ্টি করে। একারণে ডাক্তার বাবু ও ফার্মাসিস্ট এর কাছে ওষুধের পরিমাণ ও খাওয়ার নিয়ম অবশ্যই জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
অপরীক্ষিত লিভারের ওষুধ ও চিকিৎসা হতে সাবধান। Be careful with traditional medicine and remedies.
খবরের কাগজ ও টিভির বিজ্ঞাপন দেখে কোন অপ্রমাণিত পদ্ধতিতে লিভারের চিকিৎসা করা বা লিভার ভাল রাখার ওষুধ খাওয়া কখনোই উচিত নয়। অনেক সময় এই সকল ওষুধে ভারী ধাতু (Heavy metals) ও বিষাক্ত পদার্থ থাকে। এই পদার্থ গুলি লিভারের মধ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং লিভারের রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি মারাত্মক অপূরণীয় ক্ষতিও করতে পারে। সুতরাং এই জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করার আগে প্রশিক্ষিত ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে কথা বলা প্রয়োজন।
ভাইরাল হেপাটাইটিস হয়েছে কিনা পরীক্ষা করুন: Get tested for viral hepatitis:
আমাদের লিভার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলেও অনেক সময় আমরা সেটা জানতেই পারি না। কারণ অনেক সময় ভাইরাল হেপাটাইটিস এর কোন লক্ষণ দেখা যায় না। লিভারে ভাইরাসের ইনফেকশন হলে চিকিৎসার প্রয়োজন এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের প্রয়োজন। ভাইরাল হেপাটাইটিস হয়েছে কিনা, সেটা না জানার ফলে আমরা লিভারের যত্ন নিতে পারি না এবং শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে।
হেপাটাইটিসের ভ্যাকসিন গ্রহণ: Get vaccinated:
আমাদের দেশে হেপাটাইটিস A এবং হেপাটাইটিস B খুবই প্রচলিত লিভারের রোগ। সংক্রমিত খাদ্য ও পানীয়র মাধ্যমে হেপাটাইটিস A ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। হেপাটাইটিস B ভাইরাস ছড়ায় সংক্রমিত রক্ত, সিরিঞ্জ ও যৌন মিলনের মাধ্যমে। এই সকল রোগের হাত থেকে লিভারকে রক্ষা করার উপায় হল ভ্যাকসিন নেওয়া।
ওজন কমানোর ওষুধ থেকে সাবধান। Be careful of weight loss pills or fad diets.
বিজ্ঞাপন দেখে ওজন কমানোর ওষুধ একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। শারীরিক কসরত না করে ওজন কমাতে গিয়ে লিভারের চূড়ান্ত ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। বাজারে কিছু কৃত্রিম খাদ্য বিক্রি হয়, যেগুলি ওজন কমানোর দাবি করে। এই জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা উচিত নয়। ওজন কমাতে বা লিভার সুস্থ রাখতে প্রয়োজনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও ডিগ্রিধারী ডাক্তার বা পুষ্টি বিশারদের সাহায্য নিন।
ডায়াবেটিস বা সুগার, উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ। Take care if you have diabetes.
ডায়াবেটিস হলে, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে বা শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে ফ্যাটি লিভার নামক রোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। আগে উল্লেখ করা রোগ গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করলে, লিভারকে রোগের হাত থেকে অনেকাংশে রক্ষা করা যায়। অনেক সময় কোলেস্টেরল কম করার ওষুধ থেকেও লিভারের সমস্যা হতে পারে।
ধূমপান কম করা বা বন্ধ করা। Cut down smoking or stop smoking.
বেশ কয়েকটি গবেষণায় এটা প্রমাণিত যে, ধূম্র পান করলে লিভার ক্যান্সারের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। ধূমপান বেশ কিছু ওষুধ যেমন প্যারাসিটামল নামক ওষুধের বিষক্রিয়া বৃদ্ধি করে এবং লিভারের ক্ষতি করে।
মন্তব্য: Remarks:
আমাদের দেহের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির মধ্যে লিভার অন্যতম। আমাদের কর্তব্য হল, লিভারকে সুস্থ রাখা ও সার্বিকভাবে ভাল থাকা।
তথ্য সূত্র:
webMD.com, healthline.com, MedicalNewsToday, British Liver Trust,