Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাখাদ্য ও পানীয় Food & Drinksরোগ ও ব্যাধি Health Condition

8টি উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার। ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ। 8 Calcium Rich Superfood:

ক্যালসিয়াম আমাদের হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ। হার্ট ও পেশির কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণেও ক্যালসিয়ামের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতিদিন কমপক্ষে 1300 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা প্রয়োজন। কিশোর কিশোরী, মেনোপজ হয়ে গিয়েছে এমন মহিলাদের এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের আরও একটু বেশি পরিমাণ ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়।

এই প্রতিবেদনে কয়েকটি উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যা আমাদের ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণে সাহায্য করবে।

আমাদের শরীর বিভিন্নভাবে ক্যালসিয়াম ব্যবহার করে। 99% ক্যালসিয়াম আমাদের হাড় ও দাঁত তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ক্যালসিয়াম আমাদের মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকলাপ স্বাভাবিক রাখে। আমাদের পেশীগুলি ক্যালসিয়াম ছাড়া কাজ করতে পারে না। এছাড়া রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ার জন্য ক্যালসিয়াম প্রয়োজন হয়। খাদ্যের মাধ্যমে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে, বিশেষ করে মলদ্বারের ক্যান্সার রোধে ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ।

এক গ্লাস অর্থাৎ 150 মিলিলিটার গরুর দুধে প্রায় 177 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। এক গ্লাস মহিষের দুধে প্রায় 182 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। একারণে, সহজে ক্যালসিয়াম সংগ্রহ করার সেরা উপায় হল দুধ পান করা। দুধ সহজে হজম হয় এবং অন্ত্রে ক্যালসিয়াম শোষিত হয়। দুধ হজমে সমস্যা হলে দুগ্ধজাত খাদ্য যেমন ছানা পনির দই ইত্যাদি গ্রহণ করা যেতে পারে। দই এর মধ্যে উপকারী জীবাণু থাকে, ফলে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল থাকে।

50 গ্রাম সজনে শাকে প্রায় 157 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে সজনে পাতা খুব কার্যকরী।সজনে পাতার মধ্যে ক্যালসিয়াম ছাড়াও ভিটামিন, খনিজ উপাদান ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। তাই সজনে পাতাকে সুপার ফুড বলা হয়। একারণে খাদ্য তালিকায় অবশ্যই সজনে শাক রাখতে হবে।

এক কাপ সয়াবিনের মধ্যে প্রায় 261 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। এছাড়া সয়াবিনে থাকে প্রোটিন, ভিটামিন ও অন্যান্য খনিজ উপাদান। তাই সয়াবিনকে অবশ্যই খাদ্য তালিকায় স্থান দিতে হবে। সয়াবিন, খণ্ড বা গুঁড়ো আকারে পাওয়া যায়। এগুলি দিয়ে বিভিন্ন প্রকার খাবার তৈরি করা যায়। এছাড়া সয়াবিনের দুধ গ্রহণ করা যেতে পারে।

বেশকিছু বাদাম এবং বীজের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণ ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এক কাপ আমন্ডে প্রায় 457 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। 2 টেবিল চামচ তিলের বীজের মধ্যেও প্রায় 127 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এছাড়া বাদাম ও বীজে থাকে ভিটামিন E, খনিজ উপাদান ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এগুলি আমাদের কোষের ক্ষতি রোধ করে ও আমাদের সুস্থ রাখে। এছাড়া খাদ্য তালিকায় চিয়া বীজকে স্থান দিতে হবে। কারণ প্রতি টেবিল চামচ চিয়া বীজে 90 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।

সামুদ্রিক মাছ যেমন ইলিশ, ভেটকি, ভোলা, পমফ্রেট, টুনা ইত্যাদি মাছে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন D উভয়ই থাকে। এই মাছগুলি হাড় সহ চিবিয়ে খাওয়া সহজ ও নিরাপদ। এই ধরনের চর্বিযুক্ত মাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ সৃষ্টিতে বাধা দেয়। তাই ক্যালসিয়ামের অভাব মেটাতে সামুদ্রিক খাবার গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া কাঁকড়ার মধ্যেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে।

সবুজ শাকসবজিতে ভিটামিন A, C, E, K ইত্যাদি থাকে। আয়রন ও ফাইবার সহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান থাকে শাকসবজিতে। এক কাপ রান্না করা সবজিতে প্রায় 325 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। প্রতি কাপ রান্না করা পালং শাকে থাকে 141 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবার থাকে সবুজ শাকসবজিতে। একারণে ক্যালসিয়ামের অভাব মেটাতে ও সুস্থ থাকতে সবুজ শাকসবজি গ্রহণ করতে হবে।

একটি কমলা লেবুর মধ্যে প্রায় 60 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। এছাড়া কমলা লেবুতে থাকে ভিটামিন D, ভিটামিন C ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ভিটামিন D থাকার কারণে কমলালেবু আমাদের অন্ত্রে ক্যালসিয়ামের শোষণ বৃদ্ধি করে। এছাড়া আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে কমলালেবু।

জনসাধারণের মধ্যে ক্যালসিয়ামের গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি করার জন্য কয়েকটি দেশে উৎকর্ষ বৃদ্ধি করা খাদ্যের প্রচলন আছে। ইউরোপের বেশ কিছু দেশে গমের আটার সাথে কৃত্রিমভাবে ক্যালসিয়াম যোগ করা হয়। এই ধরনের ক্যালসিয়াম যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করার ফলে শিশুদের মধ্যে রিকেট রোগের প্রকোপ কমে। গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে প্রি ক্ল্যাম্পসিয়া নামক মারাত্মক রোগের সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করে এই ধরনের উৎকর্ষ বৃদ্ধি করা খাবার। আটা ছাড়াও ফলের জুস, দুগ্ধ জাত খাদ্য, ইত্যাদিতেও ক্যালসিয়াম যোগ করা হয়।

অন্তে ক্যালসিয়ামের শোষণে সাহায্য করে ভিটামিন D।ভিটামিন D চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন। দেহে ভিটামিন D এর অভাব হলে, ক্যালসিয়ামের শোষণ বাধা পায় ও দেহে ক্যালসিয়ামের অভাব ঘটে। একারণে দেহে ভিটামিন D এর অভাব হলে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে। ভিটামিন D এর অভাব মেটাতে, সূর্যালোকে থাকতে হবে এবং ভিটামিন D যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। দেহে ক্যালসিয়াম বা ভিটামিন D এর অভাব হলে, অবশ্যই একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে কথা বলতে হবে। সঠিক পরিমাণ ভিটামিন D ও ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। অত্যধিক ক্যালসিয়াম গ্রহণ করলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা  বেড়ে যায় যেতে পারে।