ক্ল্যামিডিয়া টেস্ট: পরীক্ষা পদ্ধতি ও ফলাফলের ব্যাখ্যা: Chlamydia Test: Procedure and Interpretation of Result:
ক্ল্যামিডিয়া হল, ক্ল্যামিডিয়া ট্রাকোম্যাটিস (Chlamydia trachomatis) নামক ব্যাকটেরিয়া ঘটিত এক প্রকার সংক্রমণ। এটি একটি যৌন রোগ। যৌন মিলন, পায়ু সঙ্গম এবং ওরাল সেক্সের মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসা না করালে ক্ল্যামিডিয়ার সংক্রমণের ফলে পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ এবং বন্ধ্যত্ব সহ গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
এই প্রতিবেদনে, ক্ল্যামিডিয়া টেস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
ক্ল্যামিডিয়া পরীক্ষার উদ্দেশ্য: Purpose of Chlamydia Test:
এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য হল, দেহে ক্ল্যামিডিয়ার সংক্রমণ আছে কিনা তা নির্ধারণ করা। বেশিরভাগ ক্ল্যামিডিয়া রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের দেহে এই রোগের তেমন কোন উপসর্গ দেখা যায় না। তাই রোগ সনাক্ত করার জন্য কিছু প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এরপর আপনার চিকিৎসক ক্ল্যামিডিয়া হয়েছে বলে মনে করলে ক্ল্যামিডিয়া শনাক্তকারী বিশেষ পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। এছাড়া দেহে ক্ল্যামিডিয়ার রোগ লক্ষণ দেখা গেলে নিশ্চিতভাবে রোগ শনাক্ত করার জন্য ক্ল্যামিডিয়া টেস্ট করতে দেওয়া হয়। ক্ল্যামিডিয়া ও গনোরিয়ার রোগ লক্ষণ অনেকটা একই রকম হওয়ায়, ক্ল্যামিডিয়ার সাথে গনোরিয়া টেস্টও করতে দেওয়া হয়।
কখন ক্ল্যামিডিয়া টেস্ট করতে দেয়া হয়? When is a Chlamydia Test performed?
ক্ল্যামিডিয়ার সংক্রমণ হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তেমন কোন রোগ লক্ষণ দেখা যায় না। একারণে বেশিভাগ ব্যক্তি ক্ল্যামিডিয়ার সংক্রমণ হয়েছে এটা বুঝতে পারে না। চিকিৎসা না করালে ক্ল্যামিডিয়া গুরুতর স্বাস্থ্য সংকট ও বন্ধ্যত্বের কারণ হতে পারে। তাই যাদের ক্ল্যামিডিয়ার সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি, তাদের নিয়মিত এই পরীক্ষা করা উচিত।
25 বছরের কম বয়সী ব্যক্তি যারা অসুরক্ষিত যৌন মিলনে অংশ নিয়েছেন, তাদের এই টেস্ট করা উচিত। গর্ভবতী মহিলা ও তার শিশুর জন্য এই রোগ বিপদজনক। একারণে প্রত্যেক গর্ভবতী মহিলাদের ক্ল্যামিডিয়া টেস্ট করা দরকার। দেহে HIV রোগের সংক্রমণ থাকলে বা ক্ল্যামিডিয়া সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি এমন এলাকায় বসবাস করলে এই টেস্ট করা উচিত।
যেসব ব্যক্তি ক্ল্যামিডিয়া সংক্রমণের চিকিৎসা করাচ্ছেন, চিকিৎসায় তাদের কতটা উন্নতি হল সেটা জানার জন্য এই টেস্ট করা দরকার। সাধারণত চিকিৎসা শুরুর একমাস পর এবং আবার তার দুমাস পর এই টেস্ট করা হয়। এছাড়া দেহে ক্ল্যামিডিয়ার রোগ লক্ষণ দেখা গেলে অবশ্যই এই টেস্ট করতে হবে।
ক্ল্যামিডিয়া রোগ লক্ষণ: Chlamydia Symptoms:
ক্ল্যামিডিয়ার সংক্রমণ হলে প্রস্রাবে জ্বালা হওয়া, যোনি, লিঙ্গ বা মলদ্বার থেকে স্রাব নির্গত হওয়া ইত্যাদি রোগ লক্ষণ দেখা যায়। যৌন মিলনে ব্যথা, মিলনের পর রক্তপাত হওয়া ইত্যাদি ক্ল্যামিডিয়ার লক্ষণ হতে পারে। এছাড়া অণ্ডকোষে ব্যথা, ঘন ঘন প্রস্রাব, তলপেটে ব্যথা ইত্যাদিও দেখা যেতে পারে।
ক্ল্যামিডিয়া পরীক্ষা পদ্ধতি: Chlamydia Test Methods
ক্ল্যামিডিয়া শনাক্ত করার জন্য বেশ কয়েকটি পদ্ধতি আছে। তবে সবচেয়ে প্রচলিত ও গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হল, নিউক্লিক অ্যাসিড অ্যামপ্লিফিকেশন টেস্ট, সংক্ষেপে NAAT পরীক্ষা। এই পরীক্ষার সাহায্যে ক্ল্যামিডিয়া রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ক্ল্যামিডিয়া ট্রাকোম্যাটিস এর জেনেটিক উপাদান DNA বা RNA সনাক্ত করা হয়। এই টেস্ট করার জন্য মূত্রের নমুনা ব্যবহার করা হয়। এছাড়া মূত্রনালি, যোনি, মলদ্বার, চোখ ইত্যাদি স্থানে হওয়া সংক্রমণ থেকে প্রাপ্ত তরল ব্যবহার করা যেতে পারে।
খুব কম ক্ষেত্রে ক্ল্যামিডিয়া পরীক্ষা করার জন্য সেল কালচার পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে যোনি, মূত্রনালি, মলদ্বার ইত্যাদি স্থানের সংক্রমণ থেকে তরলের সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিম পরিবেশে নমুনার মধ্যে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটানো হয়। এর ফলে ক্ল্যামিডিয়ার ব্যাকটেরিয়া সনাক্ত করা সহজ হয়। এছাড়া ক্ল্যামিডিয়ার চিকিৎসায় কাজ না হলে, কোন ওষুধে রোগ সারবে সেটা এই পরীক্ষা করে বোঝা যায়।
ক্ল্যামিডিয়া পরীক্ষার প্রস্তুতি: Preparation of Chlamydia Test
পরীক্ষার 24 ঘণ্টা আগে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বন্ধ করার প্রয়োজন হতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে যোনিতে কোন ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা চলবে না। প্রস্রাবের নমুনা দেওয়ার আগে কমপক্ষে এক ঘণ্টা প্রস্রাব বন্ধ রাখতে হবে। ক্ল্যামিডিয়া হয়েছে বলে সন্দেহ হলে পরীক্ষার ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত সহবাস বন্ধ রাখা উচিত।
ক্ল্যামিডিয়া পরীক্ষার ফলাফল: Chlamydia Test Result:
NAAT পদ্ধতিতে ক্ল্যামিডিয়া পরীক্ষার ফলাফল পেতে 24 ঘণ্টা বা তার বেশি সময় লাগে। কিছু র্যাপিড টেস্ট আছে যেগুলির ফলাফল প্রায় সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায়। আর সেল কালচার পরীক্ষার ফলাফল পেতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লাগে।
ক্ল্যামিডিয়া পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ মানে কি? What does a positive Chlamydia Tes result mean?
পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ মানে রোগীর দেহে ক্ল্যামিডিয়ার সংক্রমণ হয়েছে। ফলাফল পজিটিভ হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করতে হবে। রোগীর যৌন সঙ্গীরও ক্ল্যামিডিয়া টেস্ট করতে হবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা করাতে হবে। চিকিৎসা শেষ করার তিন সপ্তাহ পর আবার ক্ল্যামিডিয়া টেস্ট করতে হবে। তিন মাস পর আবার একবার টেস্ট করে ফলোআপ করতে হবে।
ক্ল্যামিডিয়া পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ মানে কি? What does a negative Chlamydia Tes result mean?
ফলাফল নেগেটিভ মানে রোগীর দেহে ক্ল্যামিডিয়া রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার DNA শনাক্ত করা যায়নি অর্থাৎ ক্ল্যামিডিয়ার সংক্রমণ ঘটেনি। তবে রোগ লক্ষণ থাকলে পুনরায় আবার টেস্ট করার প্রয়োজন হতে পারে।