Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাখাদ্য ও পানীয় Food & Drinksরূপ চর্চা Beauty Tips

খাওয়ার বিষয়ে আয়ুর্বেদের এই 10টি নিয়ম অবশ্যই মেনে চলুন: 10 Food Rules of Ayurveda to be always followed:

খাদ্য হজমে সমস্যা হলে বা বদ হজম হলে, আমাদের দেহে বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি হয়। একারণে আয়ুর্বেদে খাদ্য গ্রহণ করার ব্যাপারে কিছু কঠোর নিয়ম মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। এই নিয়মগুলি মেনে চললে খাদ্য থেকে সঠিক পরিমাণ পুষ্টি সংগ্রহ করা সম্ভব হয় এবং হজমের প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে।

এই প্রতিবেদনে, খাওয়ার বিষয় আয়ুর্বেদের 10টি নিয়ম মেনে চলা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

আয়ুর্বেদে খাদ্য গ্রহণের পর কখন জল পান করা দরকার, সেটা সম্পর্কে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আয়ুর্বেদের মতে, ভোজনান্তে বারি বিষ প্রদাম; অর্থাৎ খাদ্য গ্রহণের শেষে জল পান করা বিষ পান করার সমান। যেকোন ধরনের তরল পানীয় যেমন শরবত, ফলের রস ইত্যাদি পান করাও সমান ক্ষতিকর। খাদ্য গ্রহণের পর পরই তরল পানীয় গ্রহণ করলে হজমকারী উৎসেচক বেশি তরল হয়ে যায়, ফলে হজমের সমস্যা হতে পারে। এর ফলে পেটে গ্যাস অম্বলের সমস্যা বেড়ে যায়। তাই খাদ্য গ্রহণের 30 থেকে 40 মিনিট পর জল পান করতে হবে।

ঘুম আমাদের শরীর ও মন সুস্থ রাখতে খুব গুরুত্বপূর্ণ। খাওয়ার পর পরই শুয়ে পড়লে, বিশেষ করে রাতের খাওয়ার পর শুয়ে পড়লে, হজমের প্রক্রিয়া বাধা পায়। ঘুমিয়ে পড়লে আমাদের পৌষ্টিকতন্ত্রে রক্ত চলাচলের গতি কমে যায়; এর ফলে খাদ্য সঠিকভাবে হজম হয় না ও কফ অর্থাৎ মিউকাস জমা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই অভ্যাস বজায় রাখলে কোষ্ঠকাঠিন্য, মোটা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। তবে বসে বসে অল্প একটু সময় ঝিমিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এটা আমাদের ক্লান্তি দূর করে।

বিভিন্ন রোগ ব্যাধিকে আয়ুর্বেদে তিন প্রকার দোষ বা বিকৃতি হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বায়ু দোষ, পিত্ত দোষ ও কফ দোষ; এই তিন প্রকার শারীরবৃত্তীয় সমস্যার কথা আয়ুর্বেদে বলা হয়েছে। বায়ু, পিত্ত ও কফ এর ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে রোগের জন্ম হয়। সাধারণত আমাদের সকলেরই কোন না কোন দোষ থাকে। একারণে বায়ু, পিত্ত ও কাফের সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য বিশেষ ধরনের খাদ্য, গ্রহণ করতে হবে বা বাদ দিতে হবে। বায়ু প্রধান ব্যক্তিদের ঠাণ্ডা খাবার ও চা কফি ইত্যাদি কম গ্রহণ করতে হবে এবং মিষ্টি নোনতা টক ইত্যাদি খাবার বেশি গ্রহণ করলে উপকার হবে। পিত্ত প্রধান ব্যক্তিদের মিষ্টি তেতো ও কটু খাবার গ্রহণ করা ভাল; তবে গরম ও মসলাদার খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। কফ প্রধান ব্যক্তিদের নোনতা খাবার কম খেতে হবে এবং মিষ্টি, তেতো, ঝাল ইত্যাদি বেশি খাওয়া ভাল। 

খাবারে কোনও স্বাদ সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া চলবে না। আমাদের খাদ্য তালিকায় যে 6টি স্বাদ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে সেগুলি হল; মিষ্টি, টক, নোনতা, তেতো, কটু এবং ঝাল। প্রতিদিন এই 6টি স্বাদের খাবার গ্রহণ করলে শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ উদ্দীপিত হয় এবং শরীর সুস্থ থাকে। প্রতিটি খাবারে প্রতিটি স্বাদ অল্প বা পরিমিত পরিমাণে যোগ করার চেষ্টা করতে হবে।

সূর্য যখন শীর্ষে থাকে তখন পেটের অগ্নি অর্থাৎ হজম ক্ষমতা সর্বাধিক শক্তিশালী থাকে। একারণে দুপুরে বেশি পরিমাণ খাবার খেলে সহজে হজম হয় এবং খাদ্য থেকে সর্বাধিক পরিমাণ পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। দুপুরের খাবারে সব ধরনের স্বাদের খাবার গ্রহণ করা যায়। এছাড়া দুপুরে বেশি খাবার খেলে শরীরে শক্তির অভাব হয় না, বিশেষ করে বিকেলে বা সন্ধ্যায় শক্তির অভাব ঘটে না।

আয়ুর্বেদ অনুসারে খাদ্য হজমের তিনটি পর্যায়ে আছে। খাবার খাওয়ার প্রথম ঘণ্টায় কফ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে শরীর ফুলে ওঠে ও ভারী হয়ে যায়। পিত্তর উপাদানগুলি পরের 2 থেকে 4 ঘণ্টা পর্যন্ত হজমকে প্রভাবিত করে। এই সময় দেহে তাপ বৃদ্ধি পায় ও খাদ্য থেকে পুষ্টি শোষিত হয়। খাদ্য গ্রহণের 4 থেকে 5 ঘণ্টা পর বায়ু উপাদান সক্রিয় হয়। এই সময় শরীর হালকা হয়, পূর্বের স্থানে ফিরে আসে এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়। ভারি খাবারের মাঝে হালকা কোন খাবার খেলে এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় ও বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। আয়ুর্বেদ, দিনে তিনবার ভারি খাবার গ্রহণ করার পরামর্শ দেয়। 

যতটা পারা যায় ততটা খাবার গ্রহণ করা মোটেই ভাল নয়। খাবার খেতে খেতে এমন একটা সময় আসে যখন আর একটু খাবার খেলেও চলে আবার না খেলেও চলে। এই সময় থামতে হবে। সম্পূর্ণ পেট ভর্তি করে খাবার না খেয়ে, অল্প পরিমাণ কম খাবার খেতে হবে। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকবে এবং ওজন বৃদ্ধির সমস্যা হবে না। অত্যধিক পরিমাণ খাবার খেলে, শরীরে ক্ষতিকর ফ্রি রাডিক্যালসের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে বার্ধক্য এগিয়ে আসে।

আয়ুর্বেদের মতে, আমাদের হজম ক্ষমতা হল পেটের মধ্যে অভ্যন্তরীণ গর্জনকারী আগুনের মত। হজম তখনই ভাল হয় যখন এই অভ্যন্তরীণ আগুন ভাল থাকে। একারণে হজম ক্ষমতা ভাল রাখতে ঠাণ্ডা খাবার বা ঠাণ্ডা পানীয় বর্জন করতে হবে। ক্রমাগত ঠাণ্ডা খাবার গ্রহণ করলে পেটের অগ্নি নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে। বায়ু ও কফ দোষ যুক্ত ব্যক্তিদের সকল সময় গরম খাবার গ্রহণ করা উচিত। তবে পিত্ত দোষ যুক্ত ব্যক্তিরা অল্প পরিমাণ ঠাণ্ডা খাবার গ্রহণ করতে পারেন।

আয়ুর্বেদ অনুসারে প্রাণ যুক্ত খাবার যা সরাসরি পৃথিবী থেকে আসে, এমন খাবার খাওয়া উচিত। ভিটামিন, খনিজ উপাদান এবং পুষ্টি-যুক্ত তাজা খাবারকে প্রাণ যুক্ত খাবার বলা যেতে পারে। ফলস্বরূপ বলা যায় যে ঋতু অনুসারে তাজা খাবার গ্রহণ করতে হবে। অসময়ের খাবার না খাওয়া ভাল। ফসল কাটার সময় খাবার খেলে সর্বাধিক পরিমাণ প্রাণ পাওয়া যায়।

আয়ুর্বেদের বিশেষজ্ঞরা খাবারের সাথে শরীরের অন্তর্নিহিত শক্তির সংযোগ স্থাপনের কথা বলেন। খাওয়ার সময় খাবারের দিকে মন দেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফোন, টেলিভিশন, বই ইত্যাদি ব্যবহার করতে করতে খাবার খেলে আমাদের শরীর খাবার সম্পর্কে সচেতন হতে পারে না। বিশৃঙ্খলা থেকে দূরে থাকতে হবে এবং শান্তভাবে খাবার খেতে হবে। খাবারের প্রত্যেকটি স্বাদ প্রাণ ভরে অনুভব করতে হবে।