Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাখাদ্য ও পানীয় Food & Drinksরূপ চর্চা Beauty Tips

খালি পেটে লেবুর রস ও হালকা গরম জল খাওয়ার অসাধারণ উপকারিতা | Health Benefits of Drinking Lemon Water

খালি পেটে লেবুর রস ও হালকা গরম জল খাওয়ার অসাধারণ উপকারিতা: Health Benefits of Drinking Lemon Water:

জীবনযাত্রার সামান্য একটু পরিবর্তন আমাদের স্বাস্থ্যের উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন খালি পেটে লেবুর রস ও হালকা গরম জল পান করলে শরীরে অসাধারণ পরিবর্তন ঘটতে পারে। এই প্রতিবেদনে, লেবু জল পান করার উপকারিতা সম্পর্কে গবেষণা কী বলে সেটা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

লেবু আকারে ছোট হলেও লেবুর উপকারিতা প্রচুর। লেবু পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। লেবুতে আছে ভিটামিন সি,  ভিটামিন বি, ফ্ল্যাভনয়েডস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফলিক অ্যাসিড ইত্যাদি। এছাড়া লেবুতে আছে প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের লেবু পাওয়া যায়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পাতি লেবু, বাতাবি লেবু, কাগজি লেবু ইত্যাদি।

পর্যাপ্ত জল পান করা আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। মানব দেহের 55 – 60% হল জল। জলের সাহায্যে সারা দেহে পুষ্টি পরিবাহিত হয় এবং বর্জ্য পদার্থ শরীর থেকে অপসারিত হয়। দেহে জলের অভাব হলে ক্লান্তি, অতিরিক্ত তৃষ্ণা, শুষ্ক ত্বক ও ঠোঁট, মাথাব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। পর্যাপ্ত জল পান করলে এই সকল সমস্যা মেটে। সাধারণ জল অপেক্ষা লেবুর রস মিশ্রিত জল আমাদের কাছে বেশি উপভোগ্য। সুস্থ স্বাভাবিক ব্যক্তিদের প্রতিদিন 2 থেকে 3 লিটার জল পান করা উচিত।

ওজন কমানোর চেষ্টা করলে খাদ্য তালিকায় অবশ্যই লেবু জল রাখতে হবে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, লেবু জল পান করার পর খাবার খেলে, কম খাবারে পেট ভরে যায়। এছাড়া লেবুতে পলিফেনালস থাকে যা ক্ষুধা নিবারণে সাহায্য করে। খাওয়ার আগে লেবু জল পান করা, ওজন কমানোর একটি ভাল কৌশল।

লেবুর মধ্যে আছে ভিটামিন সি, যা খুব ভাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ভিটামিন সি আমাদের দেহের কোষকে রোগসৃষ্টিকারী, প্রদাহ সৃষ্টিকারী ফ্রী রাডিকেল থেকে রক্ষা করে। এছাড়া ভিটামিন সি আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে, যেমন প্রোটিনের বিপাক, হরমোন উৎপাদন, কোলাজেন সংশ্লেষণ, লোহা শোষণ ইত্যাদিতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি ক্যান্সার সৃষ্টিতে বাধা দেয়, হার্ট ও ধমনির রোগ সৃষ্টিতেও বাধা দেয়। লেবু জল খেলে খুব সহজেই ভিটামিন সি এর অভাব মেটে।

গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হতে বাধা দেয়। অনেক সময় কিডনিতে জমে থাকা পাথর ভাঙতে সাহায্য করে। লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম অক্সালেট নামক কিডনি পাথর গঠনে বাধা দেয়।

খাওয়ার আগে লেবু জল পান করলে হজমের উন্নতি হয়। গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, সাইট্রিক অ্যাসিড আমাদের অন্ত্রে, হজমে সাহায্যকারী অ্যাসিড ও উৎসেচক নিঃসরণে সাহায্য করে। এর ফলে পৌষ্টিকতন্ত্রে খাদ্য সহজে ভেঙে যায় ও হজম সহজ হয়। লেবু জল পান করলে পৌষ্টিকতন্ত্রের চলন স্বাভাবিক থাকে ও বদহজমের সমস্যা কমে।

ঠাণ্ডা পানীয়, সোডা, এনার্জি ড্রিংকস ইত্যাদির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। আর এই অত্যধিক চিনিযুক্ত পানীয় গ্রহণ করলে, বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। ওজন বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনির রোগ, লিভারের রোগ ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে অত্যধিক চিনি খেলে। এছাড়া দাঁতের ক্ষয়, দাঁতে গর্ত, বাতের সমস্যা ইত্যাদিও হতে পারে। তাই চিনিযুক্ত এই ধরনের পানীয়র বদলে লেবু জল পান করা যথেষ্ট স্বাস্থ্যকর।

পটাশিয়াম ছাড়া আমাদের শরীর কাজ করতে পারে না। পটাশিয়াম, স্নায়ু ও পেশির যোগাযোগ রক্ষায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, এবং পুষ্টি ও বর্জ্য পদার্থ পরিবহনে সাহায্য করে। তাই দেহে পটাশিয়ামের চাহিদা পূরণ করার জন্য লেবু জল পান করা যেতে পারে, কারণ লেবুর মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম আছে।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে লেবুর ভূমিকা অতুলনীয়। হাজারো বিউটি প্রোডাক্ট যা করতে পারে না, লেবু, তা সহজেই করতে পারে। লেবুতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ত্বকের উজ্জ্বলতা রক্ষা করে। সেই সঙ্গে, বয়সের ছাপ কমিয়ে আনার সাথে সাথে ব্ল্যাক হেডস, বলিরেখা ইত্যাদি কমাতেও সাহায্য করে। তাই সকালে কুসুম কুসুম গরম জলে লেবুর রস পান করা সৌন্দর্যের অন্যতম চাবিকাঠি।

সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে লেবুর শরবত খেলে, শরীরের pH স্বাভাবিক থাকে। আমাদের রক্তের pH 7.365 থাকলে শরীর কর্মচঞ্চল ও সুস্থ থাকে। লেবুর মধ্যে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড pH ব্যালেন্স ঠিক রাখে।

স্বাস্থ্যকর লেবু জল তৈরি করার জন্য প্রথমে এক গ্লাস হালকা কুসুম কুসুম গরম জল নিতে হবে। এবার একটি লেবুকে অর্ধেক করে তার মধ্যে থাকা রস জলে মেশাতে হবে। স্বাদ আরও বৃদ্ধি করার জন্য চা চামচের এক চামচ মধু মেশানো যেতে পারে। এছাড়া তাজা আদা, শসার টুকরো, দারুচিনি, হলুদ ইত্যাদিও যোগ করা যেতে পারে। এক গ্লাস উষ্ণ লেবু জল দিয়ে সকালটা শুরু করা দরকার।

লেবু জল পান করা সাধারণত নিরাপদ। তবে কিছু সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে যা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, লেবু জলে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকার কারণে দীর্ঘ মেয়াদে লেবু জল পান করলে দাঁতের এনামেলের ক্ষতি হতে পারে। তাই দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে লেবু জল পান করার পর সাধারণ জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলা দরকার। এছাড়া সাইট্রিক অ্যাসিড থেকে পাকস্থলীতে গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডের উৎপাদন বাড়ে এবং গ্যাস-অম্বল, বুক জ্বালা ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।