চোখের অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পাওয়ার 7টি উপায়। 7 Ways to Find Relief From Eye Allergies:
চোখের অ্যালার্জি অর্থাৎ অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস সাধারণত পরাগ-রেণু, ধুলো, ছত্রাক এবং পোষ্য প্রাণীর লোম থেকে হয়ে থাকে। এই সকল অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থের বিরুদ্ধে চোখ প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং চোখে জ্বালাপোড়া হয়, চোখ লাল হয়ে যায় ও চোখ চুলকায়।
এই প্রতিবেদনে অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পাওয়ার 7টি উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
চোখে অ্যালার্জির লক্ষণ: Eye Allergy Symptoms:
যখন আমাদের চোখ অ্যালার্জেন অর্থাৎ অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থের সংস্পর্শে আসে, তখন আমাদের শরীর তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য হিস্টামিন তৈরি করে। হিস্টামিন নিঃসরণের ফলে চোখের পাতা ও চোখের সাদা অংশকে ঢেকে রাখা স্বচ্ছ টিস্যু কনজাংটিভায় জ্বালা হতে পারে। এছাড়া চোখ লাল হয়ে যায়, চুলকায়, চোখ দিয়ে জল পড়ে, চোখ ফুলে যায় ও অস্বস্তি হয়। সাধারণত উভয় চোখেই এই সমস্যা দেখা যায়।
অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিসের সাথে অন্যান্য আরও কিছু অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা যেতে পারে। মাথাব্যথা, নাক বন্ধ হওয়া, হাঁচি, কাশি, নাক চুলকানো, নাক থেকে জল পড়া, ক্লান্তি, চোখের নিচে কালো দাগ ইত্যাদি সমস্যা দেখা যেতে পারে।
চোখের অ্যালার্জি থেকে মুক্তির উপায়: Relief From Eye Allergies:
কৃত্রিম অশ্রু: Artificial Tears:
কৃত্রিম অশ্রু হল একপ্রকার পিছলকারী তেল। এটি কেনার জন্য প্রেসক্রিপশনের প্রয়োজন হয় না। এই কৃত্রিম অশ্রু চোখকে তৈলাক্ত করতে সাহায্য করে। চোখের ড্রাই আই রোগ ও অ্যালার্জির সমস্যা দূর করতে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। কৃত্রিম অশ্রু অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া বন্ধ করতে পারে না, কিন্তু এটি জ্বালা দূর করে অ্যালার্জির কষ্ট কমায়। এছাড়া এটি অ্যালার্জেনকে ধুয়ে ফেলতে সাহায্য করে।
কয়েক প্রকার কৃত্রিম অশ্রুর মধ্যে প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয়। এই প্রিজারভেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে। তবে অনেক সময় এই প্রিজারভেটিভ থেকেও অ্যালার্জি হতে পারে ও চোখ জ্বালা করতে পারে। বেশিক্ষণ জ্বালা করলে প্রিজারভেটিভযুক্ত কৃত্রিম অশ্রু ব্যবহার করা চলবে না। এক্ষেত্রে পিজারভেটিভমুক্ত কৃত্রিম অশ্রু ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ধরনের কৃত্রিম অশ্রু রেফ্রিজারেটরের মধ্যে সংরক্ষণ করতে হয়।
ডিকনজেস্ট্যান্ট: Decongestant:
চোখের ডিকনজেস্ট্যান্ট রক্তনালীগুলিকে সংকুচিত করে চোখের উপর প্রভাব ফেলে অ্যালার্জির লক্ষণগুলি দূর করতে সাহায্য করে। ডিকনজেস্ট্যান্ট চোখের অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া বন্ধ করতে পারেনা, তবে এগুলি অ্যালার্জি-জনিত লাল ভাব কমায়। দীর্ঘমেয়াদে ডিকনজেস্ট্যান্ট ব্যবহার করা উচিত নয়। আমেরিকান কলেজ অফ অ্যালার্জি, অ্যাসমা এন্ড ইমিউনোলজি, চোখ লাল হওয়ার সমস্যা কমাতে মাত্র কয়েক দিন ডিকনজেস্ট্যান্ট ব্যবহার করার কথা বলেছে। কোনো ভাবেই এটি দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করা চলবে না। দীর্ঘদিন এই ওষুধ ব্যবহার করলে চোখের ধমনীগুলি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রসারিত হতে পারে।
আন্টিহিস্টামিন চোখের ড্রপ: Antihistamine Eye Drops:
চোখে অ্যালার্জি হলে হিস্টামিন নিঃসৃত হয়। অ্যান্টিহিস্টামিন হল এমন এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যা হিস্টামিনের কাজে বাধা দিয়ে অ্যালার্জি-জনিত জ্বালা যন্ত্রণা কমায়। বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিহিস্টামিন বিভিন্ন মাত্রায় উপশম প্রদান করে। এগুলি মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য কাজ করে, তাই দিনে একাধিকবার এই ওষুধ ব্যবহার করতে হতে পারে।
কিছু কিছু আন্টিহিস্টামিন ড্রপ, মাস্ট শেলের বিরুদ্ধেও কাজ করতে পারে। মাস্ট শেলগুলি আমাদের শরীরে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। মাস্ট শেলগুলির কাজে বাধা দেওয়া সম্ভব হলে হিস্টামিন নিঃসরণের সম্ভাবনা কমে ফলে অ্যালার্জি-জনিত সমস্যাও কমে।
ওরাল অ্যান্টিহিস্টামিন: Oral Antihistamines:
চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খেলে সহজে চোখের অ্যালার্জি-জনিত সমস্যা দূর করা যায়। ওষুধ খেলে সারা দেহে প্রভাব পড়ে ও যেকোনো ধরনের অ্যালার্জির সমস্যা কমাতে পারে। অনেক সময় অ্যালার্জেন অর্থাৎ অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থ সরাসরি চোখের সংস্পর্শে না আসা সত্ত্বেও অ্যালার্জি হয়, এক্ষেত্রে ওষুধ খেলে ভাল কাজ হয়। এই ধরনের ওষুধ চোখের ড্রপের চেয়ে বেশি সময় ধরে কাজ করে। বেশ কিছু ওষুধ আছে যা 12 থেকে 24 ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করে। বার বার চোখের ড্রপ প্রয়োগ করতে সমস্যা হলে অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
অ্যালার্জেন ইমিউনোথেরাপি: Allergen Immunotherapy:
অ্যালার্জেন ইমিউনোথেরাপি যাকে অ্যালার্জির টিকা বলা হয়, এই টিকা বেশ ভালো কাজ করে। এক্ষেত্রে খুব অল্প পরিমাণ অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থ শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেহের সহনশীলতা বৃদ্ধি করা হয়। অ্যালার্জির টিকা তাৎক্ষণিক-ভাবে অ্যালার্জি থেকে রক্ষা করে না, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা পদ্ধতি। এই ধরনের চিকিৎসা ধীরে ধীরে অ্যালার্জির সমস্যা কমায়। এই পদ্ধতিতে শরীর বুঝতে পারে যে, সব অ্যালার্জেন শরীরের জন্য বিপদজনক নয়। এর ফলে শরীর কোন অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখায় না।
অ্যালার্জির টিকা সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে কাজ করে না। উচ্চমাত্রায় অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে এলে এই চিকিৎসায় তেমন কাজ নাও হতে পারে।
অন্যান্য ওষুধ: Other Medication:
চোখের অ্যালার্জির কারণে তীব্র অস্বস্তি হলে আপনার চিকিৎসক আরও কিছু ওষুধ ব্যবহার করার কথা বলতে পারেন। ব্যথা ও অস্বস্তি কমানোর জন্য প্রদাহ বিরোধী ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করলে এই সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এগুলি প্রদাহ ও অ্যালার্জি-জনিত অস্বস্তি কমায়।
জীবনযাত্রার পরিবর্তন: Lifestyle Modification:
পরিবেশের অ্যালার্জেন থেকে চোখের অ্যালার্জি হলে যতটা সম্ভব ঘরে থাকা দরকার। ঘরের জানলা বন্ধ রাখতে হবে। ফ্যানের ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে। অপরিষ্কার হাতে চোখ স্পর্শ করবেন না। বাড়ির বাইরে গেলে চোখে চশমা পরা উচিত। শুকনো ধুলোবালি, ঝাড়ু দেওয়া ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন। বিছানার চাদর ও পোশাক ফুটন্ত গরম জল দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। বিছানা যতটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মাইট প্রতিরোধী কাপড় ব্যবহার করতে হবে। ছত্রাকের বৃদ্ধি রোধ করার জন্য ঘরের আর্দ্রতা 30 থেকে 50 শতাংশের মধ্যে রাখা উচিত। পোষ্য প্রাণী থেকে দূরে থাকুন। ঘরের বাতাস শুদ্ধ করার জন্য পিউরিফায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনো অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থে হাত দিলে অবিলম্বে আপনার হাত ধুয়ে নিন। বাড়ির বাইরে গেলে ফিরে এসে জামা কাপড় পরিবর্তন করুন, প্রয়োজনের স্নান করুন।
চোখের অ্যালার্জি-জনিত সমস্যা সঠিক সমাধানের জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চোখের ড্রপ বা অ্যালার্জির ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা নিরাপদ নাও হতে পারে, এটা খেয়াল রাখুন। অকারণ অতিরিক্ত চিন্তা না করে সঠিক চিকিৎসা নিন ও জীবনযাত্রা উন্নত করুন।
তথ্যসূত্র:
American College of Allergy Asthma and Immunology, Mayo Clinic, Cleveland Clinic, Healthline, e.t.c.