Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রারোগ ও ব্যাধি Health Condition

টেস্টোস্টেরনের কমে যাওয়ার 10টি লক্ষণ। Warning Sign of Low Testosterone:

টেস্টোস্টেরন প্রধানত একটি পুরুষ হরমোন হলেও মহিলাদের দেহ অল্প পরিমাণে উপস্থিত থাকে। এটি পুরুষদের যৌন স্বাস্থ্য  রক্ষা করতে ও সার্বিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। বয়স বাড়ার সাথে সাথে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যাওয়া স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু টেস্টোস্টেরনের মাত্রা অতিরিক্ত কমে গেলে বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। চিকিৎসার সাহায্যে সহজেই এই সকল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এই প্রতিবেদনে টেস্টোস্টেরনের কমে যাওয়ার 10টি লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

পুরুষদের অণ্ডকোষ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে টেস্টোস্টেরন উৎপাদিত না হওয়াকে টেস্টোস্টেরনের অভাব বলা হয়। এই অবস্থাকে হাইপোগনাডিজম (Hypogonadism) বলে। টেস্টোস্টেরন কম হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল বার্ধক্য। বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রতি বছর টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কিছুটা করে কমে যায়।

আমেরিকান ইউরোলজি অ্যাসোসিয়েশনের মতে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের রক্তে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা 300 ন্যানো-গ্রাম/লিটার এর কম হলে দেহে টেস্টোস্টেরনের অভাব আছে বলা হয়। তবে কোন কোন গবেষক টেস্টোস্টেরনের মাত্রা 250 ন্যানো-গ্রাম/ লিটার এর কম হলে টেস্টোস্টেরন কম আছে বলে মনে করেন।

টেস্টোস্টেরনের অভাব হলে যেকোন বয়সী পুরুষ প্রভাবিত হতে পারে। যে সকল ব্যক্তির বয়স বেশি, যাদের ওজন বেশি বা যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের দেহে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন কিডনি কম কাজ করলে বা লিভারের সিরোসিস রোগ থাকলে টেস্টোস্টেরনের অভাবে ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া HIV পজিটিভ হলে বা স্লিপ অ্যাপনিয়া থাকলে রোগের জটিলতা বেড়ে যেতে পারে।

দেহে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলেও অনেক সময় রোগ লক্ষণ বোঝা যায় না। কারণ টেস্টোস্টেরনের অভাবজনিত লক্ষণ গুলি ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। তবে কিছু ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে হঠাৎ করে টেস্টোস্টেরনের অভাবজনিত রোগ লক্ষণ দেখা যায়। বিশেষ করে অন্য কোন রোগের চিকিৎসা করার সময় টেস্টোস্টেরনের মাত্রা হঠাৎ করে কমে গেলে এমন হতে পারে। পুরুষদের দেহে যে সকল লক্ষণগুলি দেখা যায় সেগুলি হল:-

চুলের বৃদ্ধিতে টেস্টোস্টেরনের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। টাকপড়া সাধারণত বংশগত রোগ, তবে টেস্টোস্টেরনের অভাব হলেও চুল পড়তে পারে। তাই চুল বা দাড়ি হঠাৎ করে পাতলা হয়ে গেলে, সেটা টেস্টোস্টেরনের অভাবের কারণে হতে পারে।

টেস্টোস্টেরন পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে যৌন আকর্ষণ সৃষ্টি করে। কোন শারীরিক সমস্যা ছাড়াই লিবিডো অর্থাৎ যৌন মিলনের ইচ্ছা কমে গেলে সেটা টেস্টোস্টেরনের অভাবের কারণে হতে পারে। তবে টেস্টোস্টেরনের অভাব ছাড়াও মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব, অসুস্থতা ইত্যাদি কারণে যৌন ইচ্ছা কমে যেতে পারে।

হট ফ্লাশ হল হঠাৎ করে গরম লাগা অর্থাৎ মুখ, ঘার এবং বুক ঘেমে যাওয়া। হট ফ্ল্যাশ সাধারণত মেয়েদের মেনোপজের পর দেখা যায়। তবে পুরুষদের ক্ষেত্রে হট ফ্ল্যাশ হতে পারে। দেহে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে হট ফ্লাশ দেখা যায়। অবশ্য বিশেষজ্ঞরা এখনও এর সঠিক কারণ উদ্ধার করতে পারেন নি।

টেস্টোস্টেরনের অভাবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হল লিঙ্গ শিথিলতা। সেক্স ড্রাইভ কম হলে ও লিঙ্গ শিথিল হয়ে থাকলে সেটা টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম থাকার কারণে হতে পারে। এছাড়া এই হরমোনের অভাব হলে অণ্ডকোষ ও পেনিসের আকার ছোট হতে পারে।

টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম হলে বন্ধ্যত্বের সমস্যা দেখা যেতে পারে। শুক্রাণু তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় প্রধান হরমোনগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল টেস্টোস্টেরন। তাই এই হরমোনের মাত্রা কমে গেলে শুক্রাণুর মাত্রা কমে যায়। কিছু ক্ষেত্রে শুক্রাণু উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। একারণে গর্ভধারণে সমস্যা হলে অবশ্যই টেস্টোস্টেরনের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়।

দেহে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা পর্যাপ্ত থাকলে কিছু পরিমাণ টেস্টোস্টেরন ইস্ট্রোজেনে রূপান্তরিত হয়। এই ইস্ট্রোজেন হাড়কে শক্ত করে ও হারকে রক্ষা করে। টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে ইস্ট্রোজেনে রূপান্তরিত হয় না, ফলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে ও ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া হাড়ের মধ্যে খনিজ উপাদানের পরিমাণ কমে যায়।

পুরুষদের মধ্যে হতাশা ও আবেগ প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে টেস্টোস্টেরনের অভাব হলে। এই হরমোন আমাদের মেজাজ ভাল রাখে। মেজাজ খারাপ থাকলে বেশ কিছু রোগ বালাই বেড়ে যেতে পারে।

পেশীর বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হরমোন হল টেস্টোস্টেরন। দেহে টেস্টোস্টেরন কম থাকলে পেশীর ভর কমতে শুরু করে। 2016 সালের একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, টেস্টোস্টেরন কম থাকলে পেশীর পরিমাণ কমে; তবে পেশির শক্তি তেমন কমে না।

বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে এবং স্মৃতিশক্তিও কমে। এটা থেকে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, টেস্টোস্টেরন স্মৃতিশক্তি রক্ষা করতে সাহায্য করে। 2019 সালের একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, দেহে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি করলে স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়। এছাড়া মনঃসংযোগ করতে সাহায্য করে টেস্টোস্টেরন।

টেস্টোস্টেরন কম হলে দেহে শক্তির অভাব ঘটে ও ক্লান্তির অনুভূতি হয়। প্রচুর ঘুম হওয়া স্বত্বেও ক্লান্ত হয়ে পড়লে এবং হাঁটাচলা করার ইচ্ছে কম হলে, সেটা টেস্টোস্টেরন কম থাকার লক্ষণ হতে পারে।

Lybrate.com, Urologycarefoundation, healthline.com, Cleveland Clinic, MedicalNewsToday, etc.