রক্ত পরীক্ষা Blood Testরোগ ও ব্যাধি Health Conditionল্যাব টেস্ট Lab Test

ডি ডিমার টেস্ট: ফাইব্রিন ডিগ্রেডেশন ফ্র্যাগমেন্ট টেস্ট: D Dimer Test: Fibrin Degradation Fragment Test:

রক্তনালীর মধ্যে রক্ত জমে গিয়ে মারাত্মক কোন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে কিনা জানার জন্য ডি ডিমার অর্থাৎ ফাইব্রিন ডিগ্রেডেশন ফ্র্যাগমেন্ট টেস্ট করা হয়। কেন এবং কখন ডি ডিমার টেস্ট করা দরকার সেটা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

আমাদের দেহের কোন অংশে কেটে গেলে বা রক্তপাত হয়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই কাটা স্থানে রক্ত জমাট বেঁধে রক্তপাত বন্ধ হয়। এটি শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। রক্তপাত বন্ধ হয়ে গেলে জমাট বাঁধা রক্ত পিণ্ডটির আর কোন প্রয়োজন থাকে না। একারণে আমাদের শরীর এই রক্তপিণ্ডটিকে ধাপে ধাপে ভেঙে ফেলে। এই রক্তপিণ্ড ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে আমাদের রক্তের মধ্যে কিছু অবশেষ দেখা যায়। ঠিক যেমন বাড়ি তৈরি হয়ে গেলেও কিছু ইট বালি পাথর পড়ে থাকে, তেমনিই। এই অবশেষগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ডি ডিমার। এটি একপ্রকার প্রোটিন জাতীয় পদার্থ। সাধারণত কয়েক দিনের মধ্যেই শরীর থেকে এটি দূর হয়।

কিন্তু দেহে ডিপ ভেন থ্রমবোসিস হলে অর্থাৎ দেহের প্রধান কোন শিরার মধ্যে বেশি পরিমাণে রক্ত জমাট বাঁধলে ডি ডিমারের পরিমাণ বেশ বেশি হতে পারে। ডিপ ভেন থ্রমবোসিস একটি বিপদজনক ও মারাত্মক সমস্যা।

বুকে অসহ্য ব্যথা হলে, শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হলে এবং এর ফলে বিপদজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ডি ডিমার টেস্ট করতে দেওয়া হয়।

পায়ের মধ্যে ডিপ ভেন থ্রমবোসিস হওয়ার ফলে পায়ে যন্ত্রণার সৃষ্টি হলে, পা ফুলে গেলে, পায়ের রং বদলে গেলে ডি ডিমার টেস্ট করতে দেওয়া হয়। পালমোনারি এম্বলিজম অর্থাৎ জমাট বাধা রক্ত পিণ্ড ফুসফুসের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্রিয়ায় বাধার সৃষ্টি হলে, শ্বাস নিতে কষ্ট হলে এই টেস্ট করা প্রয়োজন। শ্বাস নেওয়ার সময় কাশি হলে, কফের মধ্যে রক্ত এলে, ফুসফুসে জনিত কারণে বুকে ব্যথা হলে এবং বুক ধড়ফড় করলে ডি ডিমার টেস্ট করা দরকার।

হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি পেলেও ডি ডিমার টেস্ট করতে হয়। মারি থেকে রক্ত পড়লে, নাক দিয়ে রক্তপাত হলে, পেট ব্যথা ও বমি হলে এই টেস্ট করা দরকার। এছাড়া মূত্রের পরিমাণ কমে গেলেও ডি ডিমার টেস্ট করার প্রয়োজন হতে পারে।

বড় মাপের অপারেশনের পর অথবা কোন আঘাত লাগার পর রক্ত জমাট বাধার সম্ভাবনা থাকলে, ডি ডিমার টেস্ট করা প্রয়োজন।

কোন প্রস্তুতির প্রয়োজন ছাড়াই ডি ডিমার টেস্ট করা যায়। বিশেষ কোন প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ে না। যেকোন সময় রক্তের নমুনা দেওয়া যায় অর্থাৎ খালি পেটে বা ভর্তি পেটে রক্তের নমুনা দেওয়া যায়।

শিরা থেকে রক্ত নিয়ে ডি ডিমার টেস্ট করা উচিত। আঙুলে সূচ-বিদ্ধ করে রক্ত সংগ্রহ করা চলবে না। সংগ্রহ করা রক্ত জমাট বাঁধলে বা রক্তকণিকা ভেঙ্গে গেলে, ঐ রক্তের নমুনা ব্যবহার করা চলবে না। রক্তের সাথে সোডিয়াম সাইট্রেট নামক রাসায়নিক পদার্থ যোগ করে, রক্ত জমাট বাধা বন্ধ করা হয়। এবার প্লাজমা আলাদা করে ল্যাবরেটরিতে পাঠাতে হয়।

রোগীর দেহে অস্বাভাবিক রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা না থাকলে ডি ডিমার টেস্ট নেগেটিভ হয়। এই টেস্ট নেগেটিভ মানে রক্তকণিকা ভেঙ্গে যায়, এমন কোন জটিল রোগও নেই। ডি ডিমার নেগেটিভ হওয়ার গুরুত্ব এখানেই। নেগেটিভ অর্থাৎ থ্রমবোসিস বা রক্তনালীর মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা বেশ কম।

ডি ডিমার টেস্ট পজিটিভ অর্থাৎ রক্তনালীর মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধেছিল এবং সেটা ভেঙে গিয়ে ডি ডিমারের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে। এই পরীক্ষার সাহায্যে এটা সহজে বোঝা যায় যে রক্ত জমাট বেধেছে। কিন্তু কোথায় জমাট বেঁধেছে বা বেঁধেছিল সেটা বোঝা যায় না। ফলে কি কারণে রক্ত জমাট বেঁধেছে সেটা শনাক্ত করা যায় না।

রক্তে ডি ডিমারের পরিমাণ বেশি হলে, রক্ত নিশ্চিতভাবে জমাট বেঁধেছিল এটা সব সময় বলা যায় না। বেশ কিছু ক্ষেত্রে রক্ত জমাট না বাঁধলেও, শুধুমাত্র রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্যকারী উপাদান ফাইব্রিন বেশি পরিমাণে উৎপাদিত হয়ে ভেঙে গেলেও, ডি ডিমারের পরিমাণ বেশি হয়। কোন সার্জিক্যাল অপারেশনের পর বা কোন আঘাত লাগলে ডি ডিমারের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া হার্ট অ্যাটাক হলে, ইনফেকশন হলে, ক্যান্সার হলে এবং লিভারের রোগে ডি ডিমারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ফাইব্রিন উৎপন্ন হয় এবং ভেঙে যায় এবং এরফলে ডি ডিমারের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এই কারণে গর্ভবতী মায়েদের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাধার সমস্যা হলে ডি ডিমারের সাথে আরও কতকগুলি টেস্ট করা প্রয়োজন।

ডি ডিমার টেস্ট খুব সেনসিটিভ বা স্পর্শকাতর। কিন্তু এই টেস্ট দ্বারা নিশ্চিত ভাবে কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না। তবে রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেধেছে কিনা জানতে, ডি ডিমার টেস্ট অবশ্যই সাহায্য করে। ফলাফল সম্পর্কে নিশ্চিত ধারণা পেতে আরও কিছু পরীক্ষার সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন।

ডি ডিমারের পরিমাণ বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে একটু বেশি থাকে। রিউমাটয়েড ফ্যাক্টর বেশি থাকলে ডি ডিমারের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও, ভুল রিপোর্ট আসে। এক্ষেত্রে ডি ডিমার পজেটিভ হয়। রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস নামক রোগে ভোগা রোগীদের ক্ষেত্রে এটা হতে পারে।