Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাসংবাদ News

দই খাওয়ার সময় এই 7টি ভুল কখনই করবেন না। দই খাওয়ার সঠিক নিয়ম। 7 Reason You Are Eating Curd The Wrong Way: Right Way To Eat Curd:

দই খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ভাল। নিয়মিত দই খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভাল থাকে। শীতের সময় দই কম খেলেও, গরমের সময় আমরা অনেকেই দুপুরে খাওয়ার পর দই খেয়ে থাকি। তবে দই খেতে হলে কিছু নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন। তা না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। দই খাওয়ার সময় এই 7টি ভুল কখনই করবেন না। দই খাওয়ার সঠিক নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা হল এই প্রতিবেদনে।

যেহেতু দই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তাই আমরা যেকোন সময় দই খেয়ে থাকি। অনেকেই আমরা রাত্রে দই খাই। কিন্তু আয়ুর্বেদের মত অনুসারে রাত্রে দই খাওয়া উচিত নয়। এর ফলে কফের সমস্যা বাড়তে পারে। কফ উৎপাদন বেড়ে গেলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে ও শরীর ঝিমঝিম করে। রাত্রে দই খেলে পরিপাকতন্ত্রের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে ও বমি হতে পারে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে রাত্রে দই খেলে স্থূলতার সমস্যা বেড়ে যায়।

দই খাওয়ার উপযুক্ত সময় হল দুপুর বা বিকেল। খাওয়ার আগে নয়, খাওয়ার পর দই খেতে হবে। খাওয়ার আগে দই খেলে বদ হজম ও অ্যাসিডিটি হতে পারে। খাওয়ার পর দই খেলে খাবার ঠিকমত হজম হয় এবং বেশি উপকার মেলে। এছাড়া বিকেলেও দই খাওয়া যেতে পারে।

দইকে গরম করে খাওয়া উচিত নয়। সাধারণ তাপমাত্রায় থাকা দই বা ঠাণ্ডা দই খেতে হবে। আমাদের দেশে, রান্না করার সময় বা ম্যারিনেট করার সময় দই ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে দই এর মধ্যে থাকা উপকারী জীবাণু ল্যাকটোব্যাসিলাস এর মৃত্যু ঘটে। ল্যাকটোব্যাসিলাস নামক জীবাণু হল উপকারী প্রয়োবায়োটিক যা আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। এছাড়া দইকে গরম করলে দই এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। তবুও আমাদের দেশের রান্নায় দই ব্যবহার করা হয়, কারণ এটা খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করে, মাংস নরম করে ও মশলার তীব্র ঝাঁঝ কিছুটা কমায়।

আমরা সাধারণত দই এর সাথে চিনি বা লবণ মিশিয়ে খেতে পছন্দ করি। চিনি মেশালে দই এর মধ্যে ক্যালোরির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। তবে এভাবে দীর্ঘদিন ধরে দই খেলে আমরা বিপদে পড়তে পারি। চিনি মিশিয়ে দই খেলে ডায়াবেটিসের রোগীদের দেহে সুগারের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত চিনি খেলে স্থূলতার সমস্যা হতে পারে, আমাদের ওজন বেড়ে যেতে পারে।

লবণ দিয়ে দই খাওয়া খুব একটা ভাল বিষয় নয়। লবণ বেশি খেলে দেহে সোডিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পায় ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হতে পারে। এছাড়া হার্টের রোগ ও কিডনির রোগ সৃষ্টি হতে পারে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করলে।

চিনি বা লবণ ছাড়া দই খাওয়া বেশ ভাল। প্রয়োজনে দই এর সাথে অল্প পরিমাণ মিষ্টি ফল, মধু, গুড়, মিছরি ইত্যাদি গ্রহণ করা যেতে পারে। সাধারণ লবণের বদলে অল্প পরিমাণ বিট লবণ বা রক সল্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

ফলের সাথে দই মিশিয়ে না খাওয়াই ভাল। কারণ এর ফলে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে। খালি পেটে ফল ও দই মিশিয়ে খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। রাইতা তৈরি করার সময় দই এর সাথে শসা ব্যবহার করা হয়। এটা কিন্তু ভাল নয়। আয়ুর্বেদ বলছে যে, দই এর সাথে কোন ভাবেই টক ফল খাওয়া চলবে না। এমনকি ঠাণ্ডা খাবার যেমন আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিংকস ইত্যাদির সাথেও দই খাওয়া চলবে না। এই নিয়ম মেনে না চললে জ্বর, ঠাণ্ডা লাগা, রক্তাল্পতা, চর্মরোগ ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

দই এর সাথে চিড়ে, মিষ্টি ফল ইত্যাদি গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া ভেজা মুগ ডাল, ভেজা ছোলা, মধু ইত্যাদিও খাওয়া যেতে পারে।

দই আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখে, কারণ দই এর মধ্যে থাকে উপকারী ল্যাকটোব্যাসিলাস। তবে প্রতিদিন দই খেলে বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। প্রতিদিন দই খেলে পেট ফোলা, পেটব্যথা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে, কারণ দইয়ের মধ্যে ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকে। আয়ুর্বেদে বলা হয়েছে যে, প্রতিদিন দই খেলে কফ ও পিত্ত দোষ বেড়ে যায়। আর্থ্রাইটিসের রোগীরা দই গ্রহণ করলে জয়েন্টের ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া প্রতিদিন দই খেলে ত্বকের সমস্যা যেমন ফুসকুড়ি, ব্রণ ইত্যাদি বেড়ে যেতে পারে।

দই এর বদলে ঘোল অবশ্যই খাওয়া যেতে পারে। দই থেকেই ঘোল তৈরি করা হয়। কিন্তু ঘোল খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম দেখা যায়। ঘোলের মধ্যে বিট লবণ, গোল মরিচ ও জিরে ইত্যাদি মশলা যোগ করা বেশ ভাল।

শরীর রোগাক্রান্ত হলে আমরা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খেয়ে থাকি। এই সকল ওষুধ আমাদের অন্ত্রের উপকারী জীবাণু অর্থাৎ প্রবায়োটিকের ক্ষতি সাধন করে। এর ফলে দেহে ভিটামিনের অভাব হয়, ডায়রিয়া, বদ হজম ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা প্রোবায়োটিক ক্যাপসুল খেতে বলেন। এই ওষুধ গুলির মধ্যে উপকারী জীবাণু ভরা থাকে।

আমরা দাম দিয়ে প্রোবায়োটিক ওষুধ খায়, কিন্তু দই এর কথা আমাদের মনে থাকে না। প্রোবায়োটিক ক্যাপসুলের বদলে দই খাওয়া যেতে পারে, কারণ দই হল উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ভাণ্ডার। পৌষ্টিকতন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে দই এর কোন বিকল্প নেই।

মাছ ও মাংস ম্যারিনেট করার জন্য দই ব্যবহার করা হয়। মাছে ও মাংসের বেশ কিছু পদ রান্না করার সময়ও দই ব্যবহার করা হয়। এটা করা উচিত নয় বলে মনে করে আয়ুর্বেদের বিশেষজ্ঞরা। মাছ-মাংসের সাথে দই মেশালে টক্সিন উৎপন্ন হতে পারে ও আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।

রান্নার স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য দই ব্যবহার করলে খুব অল্প পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে। দই ছাড়াও অন্যান্য উপাদান দিয়ে মাছ ও মাংস ম্যারিনেট ও রান্না করা যেতে পারে।