Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাখাদ্য ও পানীয় Food & Drinksরূপ চর্চা Beauty Tips

নিয়মিত শসা খেলে শরীরে যে পরিবর্তন ঘটে? What Happens to Your Body If You Eat Cucumber Everyday?

সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করা অপরিহার্য। স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকায় শসাকে অবশ্যই স্থান দিতে হবে। শসা হল একটি কম ক্যালরি যুক্ত সবজি বা ফল যা পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যায়। প্রতিদিন শসা খেলে আমাদের শরীরে কি পরিবর্তন ঘটে সেটা নিয়ে আলোচনা করা হল এই প্রতিবেদনে।

আমাদের দেহের কাজ স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে জল। দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ও পুষ্টি পরিবহন করতে জল গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া দেহে উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনেও জলের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। দেহে জলের চাহিদা পূরণ করার জন্য আমরা জল পান করি। তবে খাদ্য থেকেও আমরা জল পেয়ে থাকি। ফল, সবজি ইত্যাদি থেকেও আমরা জল পাই।

2013 সালের একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, সবজি ও ফল বেশি খেলে দেহে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যেহেতু শসার মধ্যে প্রায় 96 শতাংশ জল থাকে, তাই শসা দেহে জলের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করতে পারে।

ভিটামিন K রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে এবং হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। শসার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন K থাকে। ভিটামিন K অন্ত্রে ক্যালসিয়ামের শোষণ বৃদ্ধি করে, ফলে আমাদের হাড় শক্ত হয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, শসা খেলে দেহে ভিটামিন K এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।

শসায় লীগনান (Lignan) নামক পলিফেনাল (Polyphenols) থাকে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। এই উদ্ভিজ্জ যৌগগুলি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং কিছু ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। গবেষকরা দেখেছেন যে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত মহিলারা লিগনান গ্রহণ করলে এই রোগে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে। এছাড়া আরও কিছু গবেষণায় ধারণা পাওয়া গিয়েছে যে, লীগনান অন্যান্য ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায়। খাদ্যনালীর ক্যান্সার, গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার, অ্যাডেনোকার্সিনোমা, কোলন ক্যান্সার ইত্যাদির সম্ভাবনা কমায় লীগনান।

শসাতে উচ্চমাত্রায় তিক্ত স্বাদের পুষ্টি উপাদান কিউকারবিটাসিন (Cucurbitacin) থাকে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ হেলথ সার্ভিসেস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে কিউকারবিটাসিন ক্যান্সার কোষের পুনরুৎপাদনে বাধা দিয়ে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

যদিও শসার মধ্যে বেশিভাগই জল, তবুও শসাতে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান থাকে। শসাতে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ উপস্থিত থাকে। শসাতে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন C, ভিটামিন K, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান আছে। খোসা সহ শসা খেলে সর্বাধিক পরিমাণ পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। এছাড়া খোসার মধ্যে ফাইবারের পরিমাণও বেশি থাকে।

বেশ কিছু প্রাণীর উপর গবেষণা করে জানা গিয়েছে যে, শসা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে। অর্থাৎ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে শসা। 2016 সালের একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, শসা অক্সিডেটিভ ট্রেস কমাতে এবং ডায়াবেটিসের জটিলতা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শ থেকে জানা গিয়েছে যে, ফাইবার, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ও হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখে। শসার মধ্যে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফাইবার থাকার কারণে শসা হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। এছাড়া শসার মধ্যে থাকা কিউকারবিটাসিন রক্তনালী সুস্থ রাখে অ্যাথেরোস্ক্লোরোসিস (Atherosclerosis) প্রতিরোধে সাহায্য করে।

কিছু গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, শসার পুষ্টিগুণ ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। স্লাইস করা শসা সরাসরি ত্বকে লাগালে ত্বক ঠাণ্ডা হয় এবং ফোলা ভাব, জ্বালা ইত্যাদি কমে। এটি রোদে পোড়া দাগ দূর করতে পারে। চোখের উপর রেখে দিলে চোখের ফোলা ভাব কমে। এছাড়া শসার নির্যাস ব্যবহার করে টোনার, ফেসপ্যাক ইত্যাদি তৈরি করে নিরাপদে ত্বকের উপর প্রয়োগ করা যায়। এগুলি শুষ্ক-ত্বক, ব্ল্যাকহেডস ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে।

বিভিন্নভাবে শসা ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। শসার মধ্যে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে। অর্থাৎ প্রচুর পরিমাণ শসা খেয়ে পেট ভরানো যেতে পারে। এর ফলে ক্যালরি কম গ্রহণ করা হয় ও ওজন কমে। 2016 সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, শসার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ জল থাকার কারণে ও কম ক্যালরি-যুক্ত হওয়ার কারণে উল্লেখযোগ্য হারে ওজন কমতে পারে।

যদিও শসা খুবই উপকারী, তবুও কিছু ব্যক্তিদের শসা খাওয়া উচিত নয়। হজমের সমস্যা থাকলে, বদহজম, অ্যাসিডিটি ইত্যাদির সমস্যা থাকলে অল্প পরিমাণ শসা খেয়ে দেখতে হবে। সমস্যার জটিলতা বৃদ্ধি পেলে শসা খাওয়া চলবে না। বিশেষ করে ইরিট্যাবল বাওয়েল সিনড্রোম বা অন্য কোন গেস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগ থাকলে সাবধান হতে হবে।

রক্তনালীর মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার রোগ থাকলে বা রক্ত পাতলা করার ওষুধ গ্রহণ করলে, শসা খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ শসার মধ্যে ভিটামিন K বেশি থাকে যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।

অ্যালার্জি-জনিত ঠাণ্ডা লাগার সমস্যা থাকলে শসা খাওয়া উচিত নয়। কারণ অনেক সময় প্রোটিন-যুক্ত তাজা ফল ও শাকসবজি খাওয়ার কারণে অ্যালার্জির সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

Glenmoriston, Healthline, WebMD, Cleveland Clinic, MedicalNewsToday,