রোগ ও ব্যাধি Health Conditionসংবাদ News

পেট ব্যথা: কারণ ও চিকিৎসা Abdominal Pain: Types, Causes and Treatment.

পেট ব্যথা হল পেটের ভিতরে বা বাইরের পেশিতে ব্যথা। বেশিভাগ সময় পেট ব্যথা তেমন কোন জটিল বা গুরুতর সমস্যা নয়। তবে কখনও কখনও পেট ব্যথা গুরুতর হতে পারে এবং জরুরী চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। এই প্রতিবেদনে পেট ব্যথার কারণ ও চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

পেটের যে কোন জায়গায় অর্থাৎ পাঁজর ও পেলভিসের মধ্যবর্তী যে কোন স্থানে ব্যথা হতে পারে। আমরা সাধারণত পেট ব্যথা কে শুধুমাত্র পাকস্থলীর সমস্যা বলে মনে করি। কিন্তু পাকস্থলী ছাড়াও অন্যান্য অঙ্গের অসুস্থতার কারণে পেটে ব্যথা হতে পারে। পেটের মধ্যে থাকা যকৃত, গল-ব্লাডার, অগ্ন্যাশয়, ক্ষুদ্রান্ত, বৃহদন্ত্র, ইত্যাদি অঙ্গে সমস্যা হলে পেট ব্যথা হয়। এগুলি আমাদের পাচনতন্ত্রের অন্তর্গত অঙ্গ।

পেটের পেশি এবং ত্বকেও ব্যথা হতে পারে। আবার অনেক সময় বুকের ব্যথা, পিঠের ব্যথা ইত্যাদি, পেট ব্যথা বলে মনে হতে পারে।

পেট ব্যথা কত তাড়াতাড়ি শুরু হয় এবং কতক্ষণ স্থায়ী হয় তার উপর ভিত্তি করে পেট ব্যথার প্রকারভেদ করা হয়।

তীব্র পেটব্যথা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শুরু হয় এবং এর সাথে অন্য কিছু রোগ লক্ষণও থাকতে পারে। এটি খুব পরিচিত এবং সাধারণ একটি সমস্যা। এক্ষেত্রে তেমন উদ্বেগের কিছু নেই। যেমন পেটে গ্যাস অম্বলের সমস্যা বা বদহজম হলে এমন পেট ব্যথা দেখা যেতে পারে। তবে অল্প কিছু ক্ষেত্রে এই ধরনের পেট ব্যথা গুরুতর কোন রোগের কারণে হতে পারে, যেমন অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলে এই রকম ব্যথা হতে পারে।

এই ধরনের ব্যথা তিন মাস বা তার বেশি সময় স্থায়ী হয়। ব্যথা হয়, ব্যথা চলে যায়, আবার ফিরে আসে। দীর্ঘস্থায়ী পেট ব্যথার সাথে অন্যান্য উপসর্গও দেখা যেতে পারে। ক্রোনস ডিজিজ, ইনফ্লামেটরি বাওয়েল ডিজিজ ইত্যাদি রোগে এমন ব্যথা হয়। এছাড়া দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া রোগে এইরকম ব্যথা হতে পারে।

সময়ের সাথে সাথে এই ধরনের পেট ব্যথা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ব্যথার সঙ্গে অন্যান্য উপসর্গ দেখা যায়। কি কারণে ব্যথা তার উপর উপসর্গগুলি নির্ভর করে। এটি সাধারণত ক্রোনস ডিজিজ, ক্যান্সার, ইত্যাদি গুরুতর অসুস্থতার লক্ষণ।

এই ধরনের ব্যথা হঠাৎ করে শুরু হয় এবং হঠাৎ করে থেমে যায়। এটি একটি জটিল সমস্যা। কিডনিতে পাথর হলে বা পৌষ্টিক  নালীতে সংকোচন হলে এই ধরনের ব্যথা হয়।

পেট ব্যথার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। হালকা বা গুরুতর সমস্যার কারণে পেট ব্যথা হতে পারে।

স্বল্পমেয়াদী পেট ব্যথার সাধারণ কারণ গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল; বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, অ্যাসিড রিফ্লাক্স ইত্যাদি।

তীব্র পেট ব্যথার কারণ হতে পারে; অ্যাপেন্ডিসাইটিস, কিডনিতে পাথর, পিত্ত-থলিতে পাথর, মূত্রনালির সংক্রমণ, পেটে জীবাণুর সংক্রমণ ইত্যাদি। এছাড়া পেটে আলসার, অন্ত্রের সংকোচন, তীব্র প্যানক্রিয়াটাইটিস, কোলেসিসটাইটিস, ফুসফুসে রক্ত জমা, হার্ট অ্যাটাক, ইত্যাদি রোগে পেটে তীব্র ব্যথা হতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদি পেট ব্যথার অন্যতম কারণ গুলি হল; ইরিট্যাবল বাওয়েল সিনড্রোম, ইনফ্লামেটরি বাওয়েল ডিজিজ, আলসারেটিভ কোলাইটিস, হেপাটাইটিস, হার্নিয়া, প্যানক্রিয়াটাইটিস ইত্যাদি। এছাড়া পেটের ক্যান্সার, লিভার এবং কোলেরেক্টাল ক্যান্সার, খাবারে অ্যালার্জি ইত্যাদি রোগেও দীর্ঘস্থায়ী ক্রমবর্ধমান পেটব্যথা দেখা যায়।

মহিলাদের দেহে প্রজনন অঙ্গের রোগের কারণে পেট ব্যথা হতে পারে। পিরিয়ড হলে, ওভারিতে সিস্ট হলে, ফাইব্রয়েড, এন্ডোমেট্রিওসিস, পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ, একটোপিক প্রেগন্যান্সি ইত্যাদি সমস্যা হলে পেট ব্যথা হয়।

পেটের কোন স্থানে ব্যথা হচ্ছে, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। পেট ব্যথার অবস্থান ভালোভাবে বোঝার জন্য পেটকে চারটি কাল্পনিক চতুর্ভুজে ভাগ করা হয়। কোন অংশে ব্যথা হচ্ছে সেটা দেখে ব্যথার কারণ অনুসন্ধান করা যেতে পারে।

পেটের নিচের বাম দিকে ব্যথা হতে পারে; কিডনিতে পাথর, কিডনি সংক্রমণ, ওভারিয়ান সিস্ট, একটোপিক গর্ভাবস্থা ইত্যাদি সমস্যায়।

অ্যাপেন্ডিসাইটিস, ক্রোনস ডিজিজ, টেস্টিকুলার টর্শন, ওভারিয়ান সিস্ট, হার্নিয়া, এন্ডোমেট্রিওসিস ইত্যাদি রোগে পেটের নীচের ডান দিকে ব্যথা হতে পারে।।

পেটের উপরের বাম দিকে ব্যথা হতে পারে; গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ, পেপটিক আলসার, প্যানক্রিয়াটাইটিস, প্লীহা বড় হওয়া ইত্যাদি রোগে।

গল-ব্লাডারের রোগ, হেপাটাইটিস, পেপটিক আলসার ইত্যাদি সমস্যায় পেটের উপরে ডান দিকে ব্যথা হতে পারে।

এটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে, পেটের কোন নির্দিষ্ট অংশেই ব্যথা হবে এমন নয়। অনেক সময় সমগ্র পেট জুড়ে ব্যথা হতে পারে।

পেটে কেন ব্যথা হচ্ছে তার কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা করার জন্য আপনার চিকিৎসক প্রথমে রোগের ইতিহাস জানবেন এবং কিছু শারীরিক পরীক্ষা করবেন। ব্যথা কোন স্থানে হয়, কখন হয়, কেমন ব্যথা লাগে, কতক্ষণ স্থায়ী হয়, ইত্যাদি প্রশ্ন করবেন। পেট ব্যথার কারণ নির্ণয় করতে বেশ কিছু পরীক্ষা যেমন; রক্ত, প্রস্রাব, মল ইত্যাদি পরীক্ষা করতে দিতে পারেন। এছাড়া পেটের এক্সরে, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি, এন্ডোসকপি, সিটি স্ক্যান ইত্যাদি করতে হতে পারে।

কী কারণে পেট ব্যথা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা করা হয়। সাধারণ পেট ব্যথার ক্ষেত্রে ঘরোয়া প্রতিকার করে যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়। স্বল্পমেয়াদী পেট ব্যথার জন্য তেমন কোন চিকিৎসার প্রয়োজন নাও হতে পারে। কিছু ওভার-দা-কাউন্টার ওষুধ ব্যবহার করে সাধারণ পেটব্যথা, ক্র্যাম্প, ফোলা ভাব, বমি বমি ভাব, ইত্যাদি দূর করা যায়।

তীব্র পেট ব্যথা বা দীর্ঘস্থায়ী পেটব্যথা ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে হবে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। সমস্যা গুরুতর হলে অবশ্যই টানা চিকিৎসা করা উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ শুরু বা বন্ধ করা উচিত নয়।

Cleveland Clinic, Medline Plus, Mayo Clinic, WebMd, Health Direct, MedicineNet,