ল্যাব টেস্ট Lab Test

পেনিসে ছত্রাকের সংক্রমণ: কারণ, রোগ লক্ষণ ও চিকিৎসা। Male Yeast Infection | Penile Yeast Infection: Cause, Symptoms and Treatment.

পেনিস অর্থাৎ পুরুষের লিঙ্গে ছত্রাকের সংক্রমণ একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আমাদের জীবনযাত্রা এবং পোশাক পরিচ্ছদের উপর সংক্রমণের তীব্রতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। পেনিসে ছত্রাকের সংক্রমণের কারণ, রোগ লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

আমাদের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক বসবাস করে। সুস্থ মানুষের মধ্যে সাধারণত এই ছত্রাকগুলি তেমন কোন সমস্যার সৃষ্টি করে না। কিন্তু উপযুক্ত পরিবেশ পেলে এই ছত্রাকগুলির অতিরিক্ত বৃদ্ধি ঘটে এবং ত্বকের গভীরে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এর ফলে ত্বকে ফুসকুড়ি বা প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে। লিঙ্গের মাথায় অর্থাৎ গ্লান্স পেনিসে ছত্রাকের সংক্রমণকে ব্যালানাইটিস (Balanitis) বলা হয়।

প্রধানত ক্যানডিডা (Candida) নামক ছত্রাক পুরুষের লিঙ্গে সংক্রমণ ঘটায়। উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশে সহজেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বসবাস করলে, জীবনযাত্রার মান উন্নত না হলে, সংক্রমণের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ত্বক ঘেমে থাকলে বা ভিজে থাকলে, ত্বকে সাবান লেগে থাকলে এই সংক্রমণ সহজে ঘটে।

অন্য ব্যক্তির পোশাক ব্যবহার করলে বা সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে যৌন মিলনে এই ধরনের সংক্রমণ হতে পারে। এছাড়া যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল বা যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের খুব সহজেই এই সংক্রমণ ঘটে। যে সকল ব্যক্তির ওজন বেশি, যারা টানা বেশি দিন ধরে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছেন তাদের এই ধরনের সংক্রমণ ঘটার সম্ভাবনা বেশি থাকে। 

পেনাইল ইস্ট সংক্রমণের কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যায়। প্রস্রাবের সময় জ্বালা পোড়া করে, ঘন সাদা দুর্গন্ধযুক্ত রাস নির্গত হয়। পুরুষাঙ্গের মাথার চারপাশে লালচে দাগ দেখা যায়। চুলকানি হয়, ফুলে যেতে পারে এবং ব্যথা হয়। চামড়ায় সাদা ফাটা দাগ দেখা যায় ও লালচে ছোট ফুসকুড়ি নির্গত হতে পারে। এছাড়া সহবাসের সময় জ্বালা হয়।

পেনিসে ছত্রাকের সংক্রমণ হয়েছে কিনা বোঝার জন্য চিকিৎসকেরা প্রথমে একটি শারীরিক পরীক্ষা করবেন। সংক্রমণের প্রকৃতি ও রোগ লক্ষণ দেখে এই রোগ শনাক্ত করা সম্ভব। বিশেষ করে লাল ফুসকুড়ি হলে এটাকে সহজেই ছত্রাকের সংক্রমণ বলে চিহ্নিত করা যায়। তবে অনেক সময় সংক্রমণ নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করার জন্য, ত্বকের কিছু অংশ চেঁচে নিয়ে প্যাথলজিক্যাল ল্যাবে পাঠানো হয়। ল্যাবরেটরিতে মাইক্রোস্কোপের নিচে পরীক্ষা করে ছত্রাকের সংক্রমণ সহজেই শনাক্ত করা যায়।

পেনিসে ছত্রাকের সংক্রমণ হলে প্রধানত অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ ব্যবহার করে চিকিৎসা করা হয়। আপনার চিকিৎসক অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম, লোশন ইত্যাদি ব্যবহার করতে দিতে পারেন। অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম বা লোশন সরাসরি ক্ষতের উপর প্রয়োগ করতে হয়। যে সকল অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ ব্যবহার করা হয় সেগুলি হল; মাইকোনাজোল (Miconazole), ক্লোট্রিমাজোল (Clotrimazole) ন্যাসট্যাটিন (Nystatin) ইমিডাজোল (Imidazole) ইত্যাদি। এই সকল ওষুধ কেনার জন্য সাধারণত প্রেসক্রিপশনের প্রয়োজন হয় না।

সংক্রমণের মাত্রা তীব্র হলে ওষুধ লাগানোর সাথে সাথে ওষুধ খাওয়ারও প্রয়োজন পড়ে। সাধারণত ফ্লুকোনাজোল (Fluconazole) জাতীয় ওষুধ খেতে দেওয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ওষুধ খেতে হবে।

পুরুষাঙ্গে ছত্রাকের সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে বা সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চলা যেতে পারে। গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, মহিলাদের ক্ষেত্রে যোনিতে ছত্রাকের সংক্রমণ রোধ করতে ঘরোয়া চিকিৎসা বেশ ভাল কাজ করে। একইভাবে পুরুষাঙ্গে সংক্রমণ রোধ করতেও ঘরোয়া প্রতিকার কার্যকরী হতে পারে।

দই এর মধ্যে ল্যাকটোব্যাসিলাস নামক উপকারী জীবাণু থাকে। দই-এ উপস্থিত প্রবায়োটিক গ্রহণ করলে অন্ত্রের পরিবেশ উন্নত হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ছত্রাকের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সহজ হয়।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক ধ্বংসকারী  বৈশিষ্ট্য আছে। 250 মিলিলিটার জলে এক টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে পান করলে, ছত্রাকের সংক্রমণ কমে।

রসুন বা রসুন-যুক্ত পরিপূরক খাদ্যে খাদ্য গ্রহণ করলে, ছত্রাকের সংক্রমণ দ্রুত সেরে যায়। এটা গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে। তবুও বলা যায় যে, খাদ্যে রসুন ব্যবহার করলে ছত্রাকের সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়।