Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাসংবাদ News

প্রাকৃতিক উপায়ে হাড় মজবুত করুন: Natural ways to keep your bones healthy.

প্রাকৃতিক উপায়ে হাড় মজবুত করুন: Natural ways to keep your bones healthy:

স্বাস্থ্যকর মজবুত হাড়, সুস্থ সচল থাকার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোন কারণে হাড় পর্যাপ্ত শক্ত না হলে, অল্প আঘাতে হাড় ভেঙে যেতে পারে। সৌভাগ্যক্রমে পুষ্টিকর খাদ্য ও উন্নত জীবনযাত্রা, আমাদের হাড় শক্ত ও মজবুত করতে সাহায্য করে।

এই প্রতিবেদনে, হাড় শক্ত করার 10টি প্রাকৃতিক উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

শাকসবজি আমাদের হাড়ের জন্য খুব ভাল। শাকসবজির মধ্যে থাকা ভিটামিন C, হাড় গঠনকারী কোষগুলিকে উদ্দীপিত করে। এছাড়া বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ভিটামিন C আণ্টি অক্সিডেণ্টের মতো কাজ করে ও হাড়ের ক্ষতি রোধ করে। হাড়ের ঘনত্ব রক্ষা করে ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য খনিজ উপাদান। সবজিতে থাকা খনিজ উপাদান হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, মহিলাদের হাড়, দুর্বল হওয়ার প্রবণতা কমায় শাকসবজি। বিশেষ করে পেঁয়াজ গ্রহণ করলে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমে। সবুজ শাকসবজি যেমন ব্রকলি, বিভিন্ন ধরনের শাক, বিনস, রাজমা, মটরশুঁটি, ছোলা, পেঁয়াজ ইত্যাদির মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন K থাকে। এই খনিজ উপাদানগুলি হাড়ের গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং হার মজবুত করে।

হাড়ের প্রায় 50% প্রোটিন দিয়ে তৈরি। সুস্থ ও সবল হাড়ের জন্য পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করা দরকার। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে কম প্রোটিন গ্রহণ করলে, ক্যালসিয়ামের শোষণ হ্রাস পায় এবং হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। তবে অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ করলেও হাড়ের ক্ষতি হতে পারে। প্রোটিন বেশি খেলে রক্তে অ্যাসিড বেড়ে যায় এবং এই অ্যাসিড প্রশমিত করার জন্য হাড় থেকে ক্যালসিয়াম বেরিয়ে আসে। এর ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তবে প্রতিদিন পর্যাপ্ত উদ্ভিজ্জ খাদ্যের সাথে 100 গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন গ্রহণ করলে এই ধরনের সমস্যা হয় না। একারণে হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে খাদ্য তালিকায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন চর্বিহীন মাংস, মাছ, দুগ্ধজাত খাবার, লেবু, বাদাম, সয়াবিন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান খনিজ উপাদান হল ক্যালসিয়াম। যেহেতু হাড়ের মধ্যে থাকা বয়স্ক কোষগুলি ক্রমাগত ধ্বংস হয় এবং নতুন কোষে সেই স্থান দখল করে, তাই প্রতিদিন ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা জরুরী। সাধারণত আমাদের প্রতিদিন প্রায় 1000 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন হয়। কিশোর কিশোরী ও বয়স্ক মহিলাদের আর একটু বেশি ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়। আমাদের শরীর একসাথে অনেকটা ক্যালসিয়াম শোষণ করতে পারে না; প্রতিটি খাবার থেকে অল্প অল্প ক্যালসিয়াম শোষণ করে। একারণে দিনের সব খাবারের ক্যালসিয়াম থাকা দরকার। ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেণ্ট এর পরিবর্তে খাবার থেকে ক্যালসিয়াম পাওয়া বেশি ভাল। ক্যালসিয়াম যুক্ত খাদ্যগুলি হল দুগ্ধজাত খাদ্য, সবুজ শাকসবজি, বাদাম, ছোলা, মটর, তিল, আমণ্ড, মিষ্টি আলু, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি।

নিয়মিত ব্যায়াম করলে বিশেষ করে ওজন নিয়ে ব্যায়াম করলে হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, খেলাধুলো, ছোটাছুটি ইত্যাদি, হাড় তৈরীর পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। শিশুদের ক্ষেত্রে এটা বিশেষভাবে কার্যকরী। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও হাড়ের ক্ষয় রোধ করার জন্য হাঁটাচলা, ব্যায়াম ইত্যাদি যথেষ্ট উপকারী। ভারি মাত্রার ব্যায়াম যেমন ওজন নিয়ে ব্যায়াম, সাইকেল চালানো, সাঁতার ইত্যাদি আমাদের পেশির শক্তি বৃদ্ধি করে এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। একারণে হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে ও সামগ্রিকভাবে হার মজবুত করতে ব্যায়াম করা দরকার।

ভিটামিন D এবং ভিটামিন K শক্তিশালী হাড় গঠনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন D আমাদের অন্ত্রে ক্যালসিয়ামের শোষণ সাহায্য করে এবং হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। অস্টিওপেনিয়া, অস্টিওপোরোসিস ও অন্যান্য হাড়ের রোগ থেকে রক্ষা পেতে রক্তে কম করে 30 ন্যানো গ্রাম প্রতি মিলি লিটার (75 ন্যানো মোল প্রতি লিটার) ভিটামিন D থাকা দরকার। গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে ভিটামিন D এর অভাবে হাড় দুর্বল হয়ে যায়। দুর্ভাগ্যবশত ভিটামিন D এর অভাব, খুব সাধারণ একটা সমস্যায় পরিণত হয়েছে। যাই হোক, ভিটামিন D এর অভাব মেটাতে দিনে কম করে 30 মিনিট সূর্যালোকে থাকতে হবে এবং ভিটামিন D যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। চর্বিযুক্ত মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি গ্রহণ করলে ভিটামিন ডি এর অভাব মেটে। এছাড়া প্রয়োজনে ভিটামিন D যুক্ত সম্পূরক খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।

হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় ভিটামিন K হল আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন। ভিটামিন K অস্টিওক্যালসিন নামক প্রোটিনে, পরিবর্তন ঘটাতে সাহায্য করে। এর ফলে অস্টিওক্যালসিন হাড়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান গুলিকে আবদ্ধ করে হাড়কে মজবুত করে। পাতাযুক্ত সবুজ শাকসবজিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন K পাওয়া যায়। এছাড়া মাংস, ডিম, পনির, সয়াবিন ইত্যাদি তে অল্প পরিমাণে ভিটামিন K উপস্থিত থাকে।

কোলাজেন সম্পূরক গ্রহণ করলে হাড় শক্ত হয়। কোলাজেন হল হাড়ের মধ্যে পাওয়া প্রধান প্রোটিন। এতে আছে গ্লাইসিন, প্রোলিন এবং লাইসিন নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড যা হাড়, পেশী, লিগামেন্ট ইত্যাদি তৈরীতে সাহায্য করে। গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, কোলাজেন হাড়ের ক্ষয় রোধ করে; তবে এ বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে।

পর্যাপ্ত ক্যালরি যুক্ত সুষম খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। কম ক্যালরি গ্রহণ করলে হাড়ের ক্ষতি হতে পারে। ওজন কমাতে বা অন্য কোন কারণে খুব কম ক্যালরি যুক্ত ডায়েট কখনোই গ্রহণ করা চলবে না। হাড় শক্ত রাখতে সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। প্রতিদিন কম করে 1200 ক্যালোরি শক্তি গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকা দরকার।

হাড় শক্ত রাখতে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করার সাথে সাথে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা দরকার। ওজন কম থাকলে অস্টিওপেনিয়া ও অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ে। মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজের পর ওজন কমে গেলে, হার দুর্বল হয়ে পড়ে। আবার বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ওজন বেশি হলেও হাড়ের ক্ষতি হতে পারে। অতিরিক্ত ওজনের কারণে হার ভেঙ্গে যাওয়া ও ক্ষয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

হাড় শক্ত রাখতে ক্যালসিয়াম ছাড়াও, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাগনেসিয়াম ভিটামিন D কে সক্রিয় করে, ফলে ক্যালসিয়াম শোষণ বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, পর্যাপ্ত ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করলে হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে অল্প পরিমাণ জিঙ্কেরও প্রয়োজন হয়। জিঙ্ক হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। শাকসবজি, বাদাম, ডাল শস্য, দুগ্ধজাত পণ্য, চিংড়ি, ডিম, মাংস ইত্যাদির মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়।

স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা আমাদের হাড় মজবুত করতে পারে। তামাকজাত দ্রব্য ত্যাগ করলে হাড়ের উপকার হয় ও হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে। এছাড়া অ্যালকোহল পানের পরিমাণ কম করা দরকার। অত্যধিক অ্যালকোহল পান করলে, অন্ত্রে ক্যালসিয়ামের শোষণ বাধা পায়, ফলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে।