মেয়েদের প্রোজেস্টেরন (সেক্স হরমোন) কমে গিয়েছে বুঝবেন কিভাবে? [প্রোজেস্টেরনের অভাবজনিত লক্ষণ।] Sign of Low Progesterone:
প্রোজেস্টেরন হল একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন যা মহিলাদের শরীরের বিভিন্ন কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এই হরমোন গর্ভধারণের জন্য শরীরকে প্রস্তুত করে এবং পিরিয়ড নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া মহিলাদের যৌন ইচ্ছা অর্থাৎ লিবিডোকে প্রভাবিত করে। এই প্রতিবেদনে প্রোজেস্টেরনের অভাবজনিত লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রোজেস্টেরন কী? What is Progesterone?
প্রোজেস্টেরন হল এক প্রকার হরমোন যা ডিম্বাশয়, প্লাসেন্টা এবং অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হয়। প্রোজেস্টেরন মহিলাদের মাসিক ঋতুচক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং গর্ভধারণে সাহায্য করে। ডিম্বোস্ফোটনের সময় জরায়ুর আস্তরণ ঘন করে, ফলে ডিম্বাণু জরায়ুতে স্থাপিত হতে পারে। গর্ভাবস্থায় জরায়ুর মধ্যে ডিম্বাণুর পুষ্টিতে সাহায্য করে প্রোজেস্টেরন। গর্ভাবস্থায় প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বাড়তে থাকে এবং সময়ের আগে প্রসব হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। এছাড়া স্তনের মধ্যে দুগ্ধ উৎপাদনের জন্য শরীরকে উপযুক্ত করে তোলে প্রোজেস্টেরন। মাসিক ঋতুচক্র ও গর্ভাবস্থা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি প্রোজেস্টেরন মহিলাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষা করে। এছাড়া মেজাজ ভাল রাখতে এই হরমোনের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
প্রোজেস্টেরনের অভাবজনিত লক্ষণ: Sign of Low Progesterone:
অনিয়মিত পিরিয়ড: Irregular Periods:
সাধারণত মাসিক ঋতুচক্র প্রায় 28 দিন দীর্ঘ হয়। কিন্তু প্রোজেস্টেরনের অভাব হলে পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে। দেহে প্রোজেস্টেরনের মাত্রা অস্বাভাবিক উঠানামা করলে এই সমস্যা হতে পারে। এর ফলে পিরিয়ডের দৈর্ঘ্য ও তীব্রতা কম বা বেশি হতে পারে।
বন্ধ্যত্ব: Infertility:
গর্ভধারণের সমস্যা হলে সেটা প্রোজেস্টেরনের কারণে হতে পারে। অবশ্য গর্ভধারণের সমস্যা হওয়ার বা গর্ভপাত হওয়ার অন্য অনেক কারণ আছে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রোজেস্টেরনের মাত্রা পরীক্ষা করা দরকার। জরায়ুর গাত্রকে ডিম্বধারণের উপযুক্ত করে তোলে প্রোজেস্টেরন। ডিম্বোস্ফোটনের পর যদি প্রোজেস্টেরনের মাত্রা কম থাকে, সেক্ষেত্রে গর্ভধারণ সম্ভব হয় না। গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে মাসিক পিরিয়ড নিয়মিত হয় এবং গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
মাথাব্যথা বা মাইগ্রেন: Headaches or Migraines:
মাথাব্যথা বা মাইগ্রেনের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তবে প্রোজেস্টেরনের অভাব হলেও মাথাব্যথা বা মাইগ্রেন হতে পারে। বিশেষ করে ঋতুস্রাবের আগে বা ঋতুস্রাব চলাকালীন এই সমস্যা হতে পারে। সাধারণত প্রোজেস্টেরন কম হলে এবং ইস্ট্রোজেন বেশি হলে এমন হয়। ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে গেলে দেহে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও মাথাব্যথা শুরু হতে পারে।
দুশ্চিন্তা ও বিষণ্ণতা: Anxiety and Depression:
দেহে প্রোজেস্টেরনের মাত্রা কম থাকলে দুশ্চিন্তা হয় ও বিষণ্ণতা দেখা যায়। বিরক্তি, রাগ ও অনিদ্রার লক্ষণও থাকতে পারে। দুশ্চিন্তার কারণে রজ:স্রাবের আগে সাদা স্রাব হতে পারে। প্রোজেস্টেরনের ভারসাম্য নষ্ট হলে ঋতুস্রাব-জনিত সমস্যাগুলির মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে পেট ব্যথা এবং রক্তপাত: Abdominal Pain and Bleeding During Early Pregnancy:
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে পেট ব্যথা হলে বা অল্প রক্তপাত হলে সেটা প্রোজেস্টেরনের কম মাত্রার লক্ষণ হতে পারে। প্রোজেস্টেরনের মাত্রা কম হলে জরায়ুর দেয়াল বা আস্তরণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এর ফলে গর্ভপাত হতে পারে, পেটব্যথা ও রক্তপাতও হতে পারে। নাইজেরিয়ান মেডিকেল জার্নালে, যোনিপথে হালকা থেকে মাঝারি রক্তপাতকে গর্ভপাতের লক্ষণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে গর্ভপাতের ঝুঁকি কমে।
থাইরয়েড গ্রন্থির অল্প সক্রিয়তা: Hypothyroidism:
দেহে প্রোজেস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে থাইরয়েড গ্রন্থির কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। থাইরয়েড গ্রন্থি কম কাজ করলে চরম ক্লান্তি, বিষণ্ণতা, মেজাজের পরিবর্তন, অনিয়মিত মাসিক ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়। ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রিনোলজি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্ক যুক্ত। দেহে প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে থাইরয়েড গ্রন্থি আরও ভাল কাজ করে।
যৌন চাহিদা বৃদ্ধি: Increased Sex Drive:
এটা জেনে অবাক লাগতে পারে যে, প্রোজেস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে যৌন চাহিদা বৃদ্ধি পেতে পারে। যৌন চাহিদা মাসিক ঋতুচক্রের সাথে সম্পর্কযুক্ত একটা বিষয়। ইউনিভারসিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরনের মাত্রা মহিলাদের যৌন চাহিদাকে প্রভাবিত করে। ডিম্বোস্ফোটনের আগের দিনগুলিতে যৌন চাহিদা বাড়ে; আবার ডিম্ব-স্ফোটনের পর প্রোজেস্টেরন মাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে যৌন চাহিদা কমে যায়। অর্থাৎ মহিলাদের লিবিডো নিয়ন্ত্রণ করে প্রোজেস্টেরন।
ফাইব্রোসিস্টিক স্তন: Fibrocystic Breast:
প্রোজেস্টেরন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে, স্তনের মধ্যে সিস্ট হতে পারে। কখনও কখনও সিস্টগুলি বেদনাদায়ক হতে পারে। তবে এগুলি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী নয়। মাসিক ঋতুচক্রের সাথে সাথে সিস্টগুলির আকারে পরিবর্তন ঘটতে পারে। ফাইব্রোসিস্টিক স্তনের সমস্যায় প্রোজেস্টেরন ব্যবহার করলে সিস্টের সংখ্যা ও আকার কমে।
ওজন বৃদ্ধি: Weight Gain:
প্রোজেস্টেরনের মাত্রা কম থাকলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারলে ওজন কমে বা নিয়ন্ত্রণে থাকে। হরমোন ঠিক না থাকলে জীবনযাত্রা পরিবর্তন করে বা ব্যায়াম করে, ওজন কমানো সম্ভব হয় না।
প্রোজেস্টেরন টেস্ট: Progesterone Test:
আগে আলোচ্য লক্ষণগুলি দেখা গেলে অবশ্যই রক্তের প্রোজেস্টেরন টেস্ট করতে হবে। প্রোজেস্টেরন টেস্ট সাধারণত ঋতুচক্রের 21 তম দিনে করা হয়। এই টেস্ট সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেতে আমাদের চ্যানেলের হোম পেজ ভিজিট করুন।
তথ্যসুত্র:
Cleveland Clinic, CentreSpringMD, HealthyAndNaturalWorld, Healthywomen, etc.