ফল খাওয়ার সঠিক সময় ও নিয়ম: The Right Way to Consume Fruits:
ফল হল প্রকৃতির অন্যতম সেরা উপহার। এটি ফাইবার এবং ক্যান্সার প্রতিরোধকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভাণ্ডার। ফল আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যের তালিকায় অবশ্যই থাকা উচিত। কিন্তু ফলগুলি সঠিক সময়ে সঠিক উপায়ে না খেলে এর থেকে সর্বাধিক পরিমাণ উপকার পাওয়া সম্ভব হয় না। প্রায় 90% মানুষের ফল খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও উপায় সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা নেই।
এই প্রতিবেদনে প্রথমে ফল খাওয়ার ছটি ভুল উপায় নিয়ে আলোচনা করা হল। সব শেষে আলোচনা করা হল ফল খাওয়ার সঠিক সময় ও নিয়ম সম্পর্কে।
ফল থেকে সর্বাধিক পরিমাণ পুষ্টি উপাদান পেতে হলে সঠিক নিয়মে ফল খাওয়া জরুরী। ভুল উপায়ে ফল গ্রহণ করলে বদহজম, ত্বকের অ্যালার্জি, চুল পড়া ইত্যাদি সমস্যার সূচনা হতে পারে। এছাড়া সঠিক নিয়মে ফল না খেলে দেহে ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের অভাব হতে পারে।
ফল খাওয়ার 6টি ভুল উপায়: 6 Reasons you are eating fruits the wrong way:
কাটা ফল সংরক্ষণ করা: Cutting and storing fruits:
আমাদের বর্তমান জীবনযাত্রা বড্ড বেশি গতিশীল। আমাদের হাতে সময় খুব কম থাকে। আর একারণে আমরা সুস্থভাবে খাবার খাওয়ার সময় পায় না। আগের রাতে ফল কেটে পরের দিন খাওয়ার জন্য ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখি। আমরা কাটা ফল কর্মক্ষেত্রে নিয়ে যায়। তবে মনে রাখতে হবে যে, ফল অনেকক্ষণ কেটে রেখে দিলে ফলের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। ফল কাটার 20 মিনিটের মধ্যে অবশ্যই খাওয়া উচিত, তা না হলে ফলের শক্তি কমতে শুরু করে। ফল কাটার বেশিক্ষণ পর খেলে অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে। প্রতিদিন এই একই অভ্যাস মেনে চললে শরীর অ্যাসিডিক হয়ে যায়। এর ফলে ত্বকের সমস্যা, চুল ওঠা, ধূসর চুল ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। তাই জল খাবারে অবশ্যই ফল খান এবং খাওয়া ঠিক আগের মুহূর্তে ফল কাটুন।
স্থানীয় মরসুমি ফল না খাওয়া: Not eating local seasonal fruits:
বিদেশি ফলের দিকে আমাদের আকর্ষণ বেশি। ফলের বাজারগুলিতে এখন বিদেশি ফল থরে থরে সাজানো থাকে। আমরা স্থানীয় ফলের চেয়ে বিদেশি ফলগুলিকে বেশি ভাল বলে মনে করি। কিন্তু বাস্তবে বিদেশি ফলের চেয়ে স্থানীয় ফলগুলি আমাদের জন্য বেশি পুষ্টিকর। আমরা যে পরিবেশে বাস করি স্থানীয় ফলগুলিও সেই পরিবেশের জন্য উপযুক্ত। বিদেশি ফলের তুলনায় স্থানীয় ফল হজম করা ও পুষ্টি উপাদান শোষণ করা আমাদের শরীরের জন্য সহজ। বিদেশি ফল সাধারণত রাসায়নিক দ্বারা সংরক্ষণ করা হয় এবং কৃত্রিমভাবে পাকানো হয়। এর ফলে পুষ্টিগুণ কমে যায় ও আমাদের দেহে ক্ষতিকর কীটনাশক প্রবেশ করতে পারে। তাই সবচেয়ে ভাল হল স্থানীয় ফল যেমন কলা, পেঁপে, আম, পেয়ারা ইত্যাদি গ্রহণ করা। যে ঋতুতে যে ফল পাওয়া যায় সেটাই খাওয়া উচিত। অসময়ে উৎপন্ন ফল না খাওয়াই ভাল।
খাওয়ার পর ফল খাওয়া: Eating fruits after meal:
আমরা প্রায় সকলেই খাওয়ার পর মিষ্টি খেতে ভালবাসি। আবার অনেকে মিষ্টির বদলে ফল খেতে পছন্দ করি। আমাদের এখানে একটা প্রচলিত প্রবাদ আছে “ভরা পেটে ফল”। কিন্তু ভারতের প্রাচীন আয়ুর্বেদ এবং আধুনিক গবেষণা এটাকে ভুল বলে মনে করে। কারণ ভরা পেটে ফল খেলে পেটে অ্যালকোহল উৎপন্ন হতে পারে, ফলে বদ হজমের সমস্যা হয়। এছাড়া ফল তাড়াতাড়ি হজম হয় আর ভাত বা রুটি হজম হতে সময় লাগে। ভারী খাবারের পর ফল খেলে, ফলের হজম ব্যাহত হয় ও পেট ফাঁপা পেট ব্যথা ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই ভরা পেটে ফল না খেয়ে সকালের জলখাবারে ভর পেট ফল গ্রহণ করা উচিত।
ফলের জুস পান করা: Drinking fruit juice
ইচ্ছে হলে অবশ্যই ফলের জুস পান করা চলবে। কিন্তু আস্ত গোটা ফল খাওয়া অনেক বেশি ভাল। কারণ ফলের রস বা জুস পান করলে ফলের মধ্যে থাকা ফাইবার গ্রহণ করা হয় না। ফাইবার আমাদের হজমের প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে এবং পেট পরিষ্কার রাখে। ফাইবার গ্রহণ করলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়।
ফলের মধ্যে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। কিন্তু ফাইবার সহ গোটা ফল খেলে রক্তের সুগারের মাত্রা হঠাৎ করে বাড়ে না। কারণ ফাইবার পৌষ্টিকতন্ত্রে সুগারের শোষণে বাধা দেয়। এছাড়া জুস তৈরি করার সময় মিক্সারে উৎপন্ন তাপ, ফলের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান নষ্ট করে দিতে পারে। তাই মাঝেমধ্যে জুস পান করলেও বেশিরভাগ সময় গোটা ফল খাওয়া উচিত।
রাতে ফল খাওয়া: Eating fruits at night:
অনেকে মনে করেন যে, যেহেতু ফল একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য তাই যে কোন সময় ফল খাওয়া যাবে। কিন্তু আধুনিক গবেষণা ও আয়ুর্বেদ সূর্যাস্তের পর ফল না খাওয়ার পরামর্শ দেয়। কারণ সূর্যাস্তের পর আমাদের শরীরের হজমশক্তি হ্রাস পায়, ফলে ফল থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি শোষণ করতে পারে না। ফলের মধ্যে চিনির পরিমাণ বেশি থাকার কারণে, রাত্রে ফল খেলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া সন্ধের পর ফল খেলে পেটে বদহজম ও অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে। ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। কোন ভাবেই বিকেলের পর ফল খাওয়া উচিত নয়।
দুধের সাথে ফল খাওয়া: Combining fruits with milk:
দুধের সাথে ফলের তেমন কোন বন্ধুত্ব নেই। দুধের সঙ্গে টক ফল খাওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে লেবু জাতীয় ফল খাওয়া একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়। এক্ষেত্রে শরীরে বেশ কিছু খারাপ প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। পেটে অ্যাসিডিটি, বদহজম ইত্যাদির সাথে সাথে ত্বকে ফুসকুড়ি বেরোতে পারে। তবে দুধের সাথে মিষ্টি ফল যেমন পাকা আম, কলা, খেজুর ইত্যাদি ফল খাওয়া যেতে পারে।
ফল খাওয়ার সঠিক সময়: The best time to eat fruits:
সকালে খালি পেটে অন্য কোন খাবার খাওয়ার আগে একটি ফল খাওয়া উচিত। খালি পেটে ফল খেলে আমাদের শরীর বিষমুক্ত হয় অর্থাৎ ডিটক্সিফাই হয়। যেহেতু আমাদের পেট সম্পূর্ণ খালি থাকে তাই এই সময় ফল খেলে ফলের পুষ্টি উপাদান সঠিকভাবে শোষিত হয়। এছাড়া সকাল বা বিকেলের জলখাবারে ফল খাওয়া যেতে পারে। দুপুরে ভারী খাবারের দু’ঘণ্টা আগে বা দু’ঘণ্টা পরেও ফল খাওয়া যেতে পারে। পেটে আলসার বা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা থাকলে খালি পেটে ফল খাওয়া চলবে না।
ফল খাওয়ার সঠিক নিয়ম: The right way to eat fruits:
ফল থেকে সম্পূর্ণ পুষ্টি উপাদান এবং সর্বাধিক উপকার পেতে হলে আস্ত গোটা ফল খেতে হবে। ফলের জুস খাওয়া যেতে পারে, তবে গোটা ফল খাওয়া বেশি ভাল। ফলের জুস খাওয়ার সময় চুমুক দিয়ে অল্প অল্প পরিমাণ পান করতে হবে। এর ফলে হজমে সাহায্যকারী লালা রস মিশে যাবে ও হজম সহজ হবে। অত্যধিক পরিমাণ ফল খাওয়া উচিত নয়। পরিমিত পরিমাণ ফল গ্রহণ করা উচিত। ঋতু অনুসারে যখন যে ফল পাওয়া যায়, সেই ফল খেতে হবে। উপকারী বিদেশী ফল খাওয়া যেতে পারে; তবে স্থানীয় ফল অবশ্যই বেশি পরিমাণে খেতে হবে।