পন্য Productসংবাদ News

বিষাক্ত প্লাস্টিকের খেলনা থেকে বিপদ হতে পারে: The Hidden Dangers of Toxic Plastic Toys:

প্লাস্টিক আমাদের জীবনে একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। খাদ্য প্যাকেজিং থেকে শুরু করে জলের বোতল, রান্নাঘরের পাত্র ও খেলনা সহ সবকিছুতে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। তবে বর্তমানে বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে যে, প্লাস্টিক নীরবে মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন জানিয়েছে যে, প্লাস্টিকের মধ্যে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ থেকে আমাদের দেহে হরমোন ঘটিত রোগ, ক্যান্সার, বৃদ্ধি ও বিকাশের সমস্যা ইত্যাদি হতে পারে। এই প্রতিবেদনে বিষাক্ত প্লাস্টিকের খেলনা থেকে কী ধরণের বিপদ হতে পারে, সেটা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

বাচ্চাদের জন্য খেলনা কেনার সময় মা-বাবারা প্রধানত খেলনার চাকচিক্য ও দামের দিকে খেয়াল রাখেন। তবে সব খেলনা শিশুদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তৈরি হয় না, বিশেষ করে প্লাস্টিকের খেলনা শিশুদের জন্য নিরাপদ নাও হতে পারে। কম দামের ক্ষতিকর প্লাস্টিকের খেলনা গুলি আপনার বাচ্চার বৃদ্ধি ও বিকাশের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে, তাই এ বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

প্লাস্টিকের মধ্যে রাখা খাবারের ও প্লাস্টিকের জলের বোতল থেকে খাদ্যে বেশ কিছু বিষাক্ত রাসায়নিক মিশে যেতে পারে। একইভাবে প্লাস্টিকের খেলনা থেকেও আমাদের শিশুদের দেহে বিষাক্ত রাসায়নিক প্রবেশ করতে পারে। এর ফলে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, মস্তিষ্কের বিকাশ ইত্যাদি ব্যাহত হতে পারে।

প্লাস্টিকের খেলনাগুলি সাধারণত বিভিন্ন ধরনের সিনথেটিক উপাদান দিয়ে তৈরি। এই সকল উপাদানগুলির মধ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে। প্লাস্টিককে নরম করার জন্য ফ্যালেটস (Phthalates) নামক রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। এই পদার্থটি শিশুদের বিকাশ ও বৃদ্ধি ব্যাহত করতে পারে। প্লাস্টিক উৎপাদনে বিসফেনল A নামক রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। এটি আমাদের দেহে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। এর ফলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় ও স্থুলতা, প্রজননের সমস্যা ইত্যাদি রোগ হতে পারে। সস্তার খারাপ প্লাস্টিকের মধ্যে লেড বা সীসা বেশি পরিমাণে থাকতে পারে। সীসা একটি ভারী ধাতু ও এটি আমাদের বুদ্ধির চরম ক্ষতি করতে পারে। এর ফলে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত হয়। এছাড়া প্লাস্টিকের খেলনা ব্যবহার করলে শিশুদের ত্বকে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে।

অনেক সময় ছোট শিশুরা খেলতে খেলতে খেলনা মুখে নেয়। এর ফলে প্লাস্টিকের মধ্যে থাকা রাসায়নিক শিশুর দেহে প্রবেশ করে ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। সাধারণত ছোট ছোট যন্ত্রাংশ যোগ করে খেলনা তৈরি করা হয়। এই ছোট ছোট টুকরোগুলি ভেঙ্গে গিয়ে শিশুদের পেটে চলে যেতে পারে বা অনেক সময় শ্বাসরোধের কারণ হতে পারে। ভাঙ্গা টুকরো প্লাস্টিক থেকে হাত পা কেটে যেতে পারে ও শিশু আহত হতে পারে। আবার বেশ কিছু প্লাস্টিকের খেলনায় ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়, এই ব্যাটারি লিক হলে বিষাক্ত অ্যাসিড বা রাসায়নিক বেড়িয়ে এলেও বিপদ হতে পারে। এছাড়া ব্যাটারির মধ্যে লেড বা সীসা থাকতে পারে, এটা খুব ক্ষতিকর।

খেলনা কতটা নিরাপদ সেটা বোঝার জন্য প্রথমে লেবেল গুলি মনোযোগ সহকারে পড়া দরকার। কী কী সার্টিফিকেশন আছে সেগুলি এই লেবেলে লেখা থাকার কথা। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সংস্থা সার্টিফিকেট প্রদানের দায়িত্ব পালন করে। ভারতে বুড়ো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড খেলনার মান নির্ধারণ করে ও ISI মার্ক প্রদান করে। কম দামের সস্তা প্লাস্টিকের খেলনা কেনা উচিত নয়, এগুলির মধ্যে বিষাক্ত পদার্থ থাকতে পারে।

বিষাক্ত প্লাস্টিকের বিষক্রিয়া থেকে বাঁচার সহজ উপায় হল প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে তৈরি খেলনা ব্যবহার করা। কাঠের খেলনা বা বাঁশের তৈরি খেলনা যথেষ্ট টেকসই ও নিরাপদ। তবে এই ধরনের খেলনায় বিষাক্ত রং বা বার্নিশ না থাকা ভালো। সুতির কাপড়ের তৈরি খেলনা ও বেশ ভালো। এগুলি ক্ষতিকর রাসায়নিক মুক্ত ও খেলার জন্য যথেষ্ট নিরাপদ।

কিছু খেলনা নির্মাতা আছেন যারা বিষাক্ত নয় এমন প্লাস্টিক দিয়ে খেলনা তৈরি করেন। এগুলির দাম একটু বেশি, কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ। এছাড়া সিলিকন দিয়ে তৈরি খেলনাগুলির মধ্যেও তেমন কোন খারাপ রাসায়নিক থাকে না, এগুলিও নিরাপদ। বর্তমানে জৈব পদার্থ থেকে পচনশীল প্লাস্টিক আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে, এই ধরনের প্লাস্টিক দিয়েও খেলনা তৈরি করা যেতে পারে। এছাড়া বাড়িতে গৃহস্থালির বিভিন্ন বস্তু ব্যবহার করে খেলনা তৈরি করা যেতে পারে। এগুলি পরিবেশ বান্ধব ও কম খরচে তৈরি করা যায়।

খেলনা থেকে বিপদ হতে পারে, তবে এ বিষয়ে সচেতন থাকলে বিপদের সম্ভাবনা কম। বিষাক্ত প্লাস্টিক সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং খেলনা কেনার সময় সচেতন থাকতে হবে। এমন কোম্পানির খেলনা কিনুন যারা নিরাপত্তার নিয়ম মেনে চলে। সস্তার বদলে নিরাপত্তাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। নিয়মিত খেলনা পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কার করার জন্য নির্বিষ ক্লিনার ব্যবহার করতে হবে। ছোট ছোট অংশযুক্ত খেলনা বা বেশি ছোট খেলনা ব্যবহার না করা ভালো, কারণ এগুলি বাচ্চারা খেয়ে ফেলতে পারে। পুরানো বা বিপদজনক খেলনা গুলি অবশ্যই নিয়ম মেনে নষ্ট করুন। পরিবেশ দূষণ কমাতে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা অনুসরণ করুন।

প্লাস্টিকের খেলনা গুলি অবশ্যই খুব আকর্ষণীয়, কিন্তু বিষাক্ত রাসায়নিক থেকে ক্ষতির কথা কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যাবে না। সচেতন থেকে ও সচেতনভাবে নিরাপদ খেলনা পছন্দ করলে আপনার শিশু নিরাপদ থাকবে। শিশুদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সকলের, তাই বিষাক্ত প্লাস্টিকের খেলনা থেকে সাবধান থাকতে হবে। আমরা আমাদের ছেলেবেলায় যেমন স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ খেলনা ব্যবহার করতাম, তেমন খেলনা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কেউ দেওয়া যেতে পারে। একারণে চিরাচরিত খেলনাগুলিকে আবার ফিরিয়ে আনার সময় হয়েছে।

Netional Env. Health, Bumbutoys.com, CARE Hospital, Earth Day etc.