Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাল্যাব টেস্ট Lab Testসংবাদ News

বীর্য পরীক্ষা: রিপোর্ট বুঝে নিন। Semen Analysis: Semen Test:

বীর্য পরীক্ষা: রিপোর্ট বুঝে নিন। Semen Analysis: Semen Test:

বন্ধত্ব বা সন্তানহীনতার অন্যতম প্রধান কারণ হল বীর্যে শুক্রানুর অভাব। সিমেন বা বীর্য পরীক্ষার সাহায্যে একজন পুরুষের শুক্রানুর পরিমাণ ও গুণগত মান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। পুরুষটি সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম কিনা সেটাও এই পরীক্ষার সাহায্যে বোঝা যায়। এই প্রতিবেদনে সিমেন অনালিসিস বা বীর্য পরীক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

বীর্য পরীক্ষা কি? What is Semen Analysis?

সিমেন বা বীর্য হল এক প্রকার তরল ঘন তরল যা যৌন ক্রিয়াকলাপের সময় পুরুষের লিঙ্গ থেকে নির্গত হয়। বীর্যের মধ্যে শুক্রাণু থাকে।  

 বীর্য পরীক্ষার সাহায্যে একজন পুরুষ সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম না অক্ষম সেটা জানা যায়। জন্মনিয়ন্ত্রণ করার ভ্যাসেকটমি অপারেশন সফল হয়েছে কিনা সেটাও বোঝা যায়। বীর্যে শুক্রানুর সংখ্যা, শুক্রাণুর আকার, আকৃতি, চলাচলের ক্ষমতা ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়। বীর্যে কোন ইনফেকশন হয়েছে কিনা সেটাও দেখা হয়।

বীর্য পরীক্ষার প্রস্তুতি: Preparation for the Semen Analysis:

সিমেন বা বীর্যের নমুনা সংগ্রহ করার আগেে বেশ কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। বীর্যের নমুনা সংগ্রহ করার আগে দুই থেকে পাঁচ দিন যৌন মিলন বা হস্তমৈথুন করা নিষেধ। এর ফলে বীর্যের পরিমাণ ও শুক্রাণুর সংখ্যা স্বাভাবিক থাকবে। তবে দুই সপ্তাহের বেশি বীর্যপাত বন্ধ রাখবেন না। এর ফলে শুক্রাণু কম সক্রিয় হতে পারে। বীর্য পরীক্ষার আগে অ্যালকোহল পান করা উচিত নয়। কোন ওষুধ বা ভেষজ সম্পূরক গ্রহণ করলে সেটা আপনার চিকিৎসাকে জানান।

বেশ কিছু ওষুধ বীর্য পরীক্ষার ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে। টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধিকারী ওষুধ, এনাবলিক স্টেরয়েড, মারিজুয়ানা, আফিম ইত্যাদি শুক্রাণুর উৎপাদনে বাধা দিতে পারে। সবচেয়ে ভালো তথ্য পেতে একাধিক নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। প্রথম পরীক্ষার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে আর একবার টেস্ট করা ভাল।

 কিভাবে বীর্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয়? How to obtain a Semen Sample?

 বীর্য পরীক্ষা করার জন্য প্রধানত চারটি উপায়ে বীর্য সংগ্রহ করা হয়। একটি পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত পাত্রে বীর্য সংগ্রহ করা হয়।

 হস্তমৈথুন করে বীর্য সংগ্রহ করা যেতে পারে।

 কণ্ডোম ব্যবহার করে যৌন মিলনের পর কণ্ডোমের মধ্যে সঞ্চিত বীর্য সংগ্রহ করা যেতে পারে।

 স্বাভাবিক যৌন মিলনের সময়  বীর্যপাতের ঠিক আগে যৌন মিলন বন্ধ করে, বীর্য সংগ্রহ করা যেতে পারে।

হস্তমৈথুন করে বীর্য সংগ্রহ করা সর্বাপেক্ষা সহজ ও ভাল পদ্ধতি। কণ্ডোম ব্যবহার করে বীর্য সংগ্রহ করলে কণ্ডোমে থাকা রাসায়নিকের কারণে শুক্রাণুর ক্ষতি হতে পারে। তাই এই পদ্ধতি ব্যবহার না করাই ভাল।

বাড়িতে নমুনা সংগ্রহ করলে বীর্যপাতের সময়টি লিখে রাখতে হবে এবং অল্প সময়ের মধ্যে পরীক্ষাগারে আনতে হবে।

বীর্য পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাখ্যা: What do the Semen Test Result mean?

বীর্য পরীক্ষার সময় বিভিন্ন বিষয় নজর দেওয়া হয় এবং বীর্যের মান নির্ণয় করা হয়। সিমেন বা বীর্যের ফিজিক্যাল, মাইক্রোস্কোপিক ও কেমিক্যাল পরীক্ষা করা হয়।

বাহ্যিক গঠন: Appearance:

বীর্যের স্বাভাবিক রং সাদা বা ধূসর হয়। এটি স্বচ্ছ হবেনা অস্পষ্ট হবে। স্বাভাবিক বীর্য হবে ঘন ও বিশেষ ধরনের গন্ধযুক্ত। বীর্যে রক্ত উপস্থিত থাকলে বীর্য লাল বা বাদামী রঙের হতে পারে। এটা অস্বাভাবিক। বীর্যে পুঁজ, শ্লেষ্মা বা রক্ত থাকলে ইনফেকশন হয়েছে বলে মনে করা হয়।

তরলীকরণ: Liquefaction:

বীর্যপাতের সঙ্গে সঙ্গে বীর্য জমাট বেধে যায়। 15 থেকে 30 মিনিটের মধ্যে ওই বীর্য তরল হয়। তরল হলে শুক্রাণু নাড়াচাড়া করতে পারে। যদি বীর্য 15 থেকে 30 মিনিটের মধ্যে তরল না হয়, তাহলে গর্ভধারণ প্রক্রিয়া প্রভাবিত হতে পারে।

পরিমাণ: Volume:

সুস্থ স্বাভাবিক পুরুষের 2 থেকে 5 মিলিটার বীর্যপাত হয়। বীর্যের পরিমাণ 1.5 মিলিলিটারের কম হলে, বীর্যে শুক্রাণুর অভাব থাকতে পারে। একইভাবে 5 মিলিলিটারের বেশি পরিমাণ বীর্য অস্বাভাবিক। এক্ষেত্রে শুক্রানুর ঘনত্ব কমে যায়।

পি এইচ

সিমেন বা বীর্য অ্যাসিটিক না অ্যালকালাইন সেটা পিএইচ স্কেলের সাহায্যে পরিমাপ করা হয়। বীর্যের স্বাভাবিক পি এইচ হল 7.2 থেকে 7.8 এর মধ্যে। পি এইচ 8 এর বেশি হলে বীর্যের সংক্রমণ আছে বলা যায়। আবার 7 কম হলে বীর্যে অন্য কোন পদার্থ মিশে গিয়েছে বলে মনে করা হয়।

শুক্রানুর সংখ্যা: Sperm Count:

স্বাভাবিক পুরুষদের প্রতি মিলিলিটার বীর্যে 40 মিলিয়ন থেকে 300 মিলিয়ন শুক্রাণু উপস্থিত থাকে। শুক্রাণুর সংখ্যা প্রতি মিলিলিটারে 10 মিলিয়নের কম থাকলে, সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

প্রতি মিলিলিটার বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা 300 মিলিয়নের বেশি হলে, শুক্রাণুর ঘনত্ব বেশি আছে বলা যেতে পারে। শুক্রাণু সংখ্যা বেশি থাকলেও সেটা গর্ভধারণে অতিরিক্ত কোন সুবিধা প্রদান করে না।

শুক্রাণুর আকৃতি: Sperm Shape:

স্বাভাবিক ব্যক্তিদের 50 শতাংশের বেশি শুক্রাণুর আকৃতি স্বাভাবিক থাকে। স্বাভাবিক আকৃতির শুক্রাণুর সংখ্যা হ্রাস পেলে বন্ধত্বের সমস্যা দেখা দেয়। বীর্য পরীক্ষার সময় শুক্রানুর মাথা, মধ্যভাগ ও লেজে কোন গঠনগত ত্রুটি আছে কিনা, সেটা পরীক্ষা করে দেখা হয়।

শুক্রানুর গতিশীলতা: Sperm Motility:

ডিম্বানুকে নিষিদ্ধ করার জন্য শুক্রাণু কতটা ভালোভাবে সাঁতার কাটতে পারে এবং কত দ্রুত ডিম্বানুর কাছে পৌঁছাতে পারে সেটাও পরীক্ষা করে দেখা হয়। বীর্যপাতের এক ঘন্টা পর 50 শতাংশের বেশি শুক্রাণুর নাড়াচাড়া স্বাভাবিক থাকা উচিত। শুক্রাণুর চলাচল বা গতিশীলতা গর্ভধারণের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ফ্রুক্টোজের মাত্রা: Fructose Level:

সিমেন বা বীর্যের মধ্যেে ফ্রুক্টোজের মাত্রা  খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রুক্টোজের মাত্রা কম থাকতে পারে, দেহে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম থাকলে বা সেমিনাল ভেসিকলের সক্ষমতা হ্রাস পেলে।

অন্যান্য মাইক্রোস্কোপিক পর্যবেক্ষণ: Other Microscopic Observation:

বীর্যের মধ্যে শুক্রাণুর গতিশীলতা পরীক্ষা করার সময় আরো কিছু বিষয় পর্যবেক্ষণ করা হয়। বীর্যের মধ্যে এপিথেলিয়াল সেল, টেস্টিকিউলার সেল, পাস সেল ইত্যাদি সংখ্যা পর্যবেক্ষণ করা হয়। পাস সেলের সংখ্যা বেশি হলে বীর্যে ইনফেকশন আছে বলে মনে করা হয়। স্বাভাবিক বীর্যে 1 থেকে 2 টি পর্যন্ত পাস সেল উপস্থিত থাকে। এছাড়া বীর্যে কোন লোহিত রক্ত কণিকা বা ক্রিস্টাল উপস্থিত থাকলে, সেটাও লক্ষ্য রাখা হয়। যেকোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা বীর্য পরীক্ষার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

বীর্য পরীক্ষার অস্বাভাবিক ফলাফলের ব্যাখ্যা:

বীর্য পরীক্ষার ফলাফল অস্বাভাবিক হলে, গর্ভধারণে জটিলতার সৃষ্টি হয়। বীর্যে উপস্থিত শুক্রাণুর গঠনগত বা কার্যগত ত্রুটি থাকলেও বন্ধত্বের সমস্যা দেখা যায়।

বিভিন্ন কারনে বীর্যের বা সিমেনের ক্ষতি হতে পারে। শুক্রাশয়ে ইনফেকশন হলে, হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে বা জিনের ত্রুটির কারণে বীর্যের ক্ষতি হয়। এছাড়া ডায়াবেটিস হলে, অতিরিক্ত রেডিয়েশন গ্রহণ করলে বা অত্যাধিক গরম পরিবেশে থাকলে বীর্যের ক্ষতি হয।