রক্ত পরীক্ষা Blood Testরোগ ও ব্যাধি Health Conditionল্যাব টেস্ট Lab Test

ব্লাড কালচার টেস্ট: উদ্দেশ্য, পদ্ধতি ও ফলাফল। Blood Culture Test: Purpose, Procedure and Result.

ব্লাড কালচার অর্থাৎ রক্তের কালচার পরীক্ষার সাহায্যে রক্তের মধ্যে কোনও ক্ষতিকর রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু উপস্থিত আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে একটি বিশেষ পাত্রে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে রাখা হয়। ল্যাবরেটরির কৃত্রিম পরিবেশে জীবাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটলে সহজেই রোগের কারণ সনাক্ত করা সম্ভব হয়। এই প্রতিবেদনে ব্লাড কালচার টেস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

ব্লাড কালচার পরীক্ষার সাহায্যে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের মতো রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু সনাক্ত করা হয়। এছাড়া জীবাণুটির বৃদ্ধি পরিমাপ করে রোগের তীব্রতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। রোগীর দেহ থেকে সংগ্রহ করা রক্তের নমুনা একটি পেট্রি ডিস বা টেস্ট টিউবে রাখা কৃত্রিম মাধ্যমে মেশানো হয়। এই মাধ্যমটি জীবাণুকে বড় হতে ও সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এবার রক্তের নমুনা মিশ্রিত মাধ্যমটিকে নির্দিষ্ট তাপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে রাখা হয়। এরপর পেট্রি ডিস বা টেস্ট টিউবটি কয়েকদিন বা এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করা হয়। জীবাণু বৃদ্ধি পেয়েছে কিনা সেটা দেখা হয় এবং কত দ্রুত জীবাণুর বৃদ্ধি ঘটেছে সেটাও পর্যবেক্ষণ করা হয়। জীবাণুর বৃদ্ধি দেখা গেলে আরও কিছু পরীক্ষা করা হয়। প্রয়োজনে আবার অন্য মাধ্যমে কালচার করা হয়। জীবাণুর পরিচয় জানার জন্য গ্রাম স্টেন নামক রঞ্জক ব্যবহার করে মাইক্রোস্কোপের নিচে দেখা হয়। এছাড়া আরও কিছু উন্নত পরীক্ষা যেমন পলিমারাইজ চেইন রিয়াকশন পরীক্ষা ইত্যাদি করা যেতে পারে।

রক্তের কালচার পরীক্ষার সাহায্যে জীবাণু সনাক্ত করার পাশাপাশি কোন ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে চিকিৎসা করা দরকার সেটাও বোঝা যায়। কোন ধরনের ওষুধে রোগ সেরে যাবে এবং কোন ওষুধে রোগ সারবে না, সেটা জানতে এই টেস্ট বেশ উপযোগী। এই পরীক্ষার সাহায্যে রোগীর জন্য কোন চিকিৎসা পদ্ধতি সবচেয়ে উপযোগী সেটা বেছে নেওয়া সহজ হয়।

আপনার চিকিৎসক যদি মনে করেন যে আপনার রক্তে জীবাণু ছড়িয়ে পড়েছে, সেক্ষেত্রে এই টেস্ট করার পরামর্শ দিতে পারেন। রক্তে সংক্রমণ হওয়া মোটেই ভালো নয়; এটি গুরুত্বর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। সেপসিস হল এরকমই একটি জটিলতা।

আরও বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্লাড কালচার টেস্ট করার প্রয়োজন হতে পারে। জ্বর বা ঠাণ্ডা লাগা, ক্লান্তি, স্বাভাবিকের চেয়ে কম প্রস্রাব হওয়া, বমি বমি ভাব, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস বা দ্রুত হৃদস্পন্দন ইত্যাদি রোগ লক্ষণ দেখা গেলে এই টেস্ট করা প্রয়োজন। এছাড়া শরীরের কোন অঙ্গে প্রদাহ সৃষ্টি হলে, রক্তচাপ খুব কমে গেলে বা কোনো অঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দিলে এই টেস্ট করার দরকার হয়।

যাদের রক্তে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে তাদের এই টেস্ট করা হয়। ডায়াবেটিস, এইচআইভি, ক্যান্সার, অটো ইমিউন রোগ ইত্যাদি সমস্যা থাকলেও এই টেস্ট করার প্রয়োজন পড়ে। যে কোনও ধরনের অস্ত্রোপচারের পর এই টেস্ট করা উচিত। যারা ইমিউনোসাপ্রেসিভ থেরাপি গ্রহণ করছেন অর্থাৎ যাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দমিয়ে রাখা হয়েছে তাদের এই টেস্ট করা দরকার। নবজাতক শিশুদের জ্বর হলে সেপসিসের লক্ষণ না থাকলেও বারে বারে ব্লাড কালচার টেস্ট করা হয়। এছাড়া এন্ডোকারডাইটিস নামক রোগ অর্থাৎ হৃৎপিণ্ডের ভালবে জীবাণু সংক্রমণ সনাক্ত করতে এই টেস্ট করা হয়।

রক্তের কালচার পরীক্ষা করার জন্য তেমন কোন প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করার আগে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়, কারণ অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষার ফলাফল কে প্রভাবিত করতে পারে। একারণে পরীক্ষার আগে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করে থাকলে অবশ্যই আপনার ডাক্তারকে জানাতে হবে।

একজন ফ্লেবোটোমিস্ট অর্থাৎ মেডিকেল ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান কালচার পরীক্ষার জন্য রক্ত সংগ্রহ করেন। আঙ্গুলে সূচ-বিদ্ধ করে রক্ত সংগ্রহ করা হয় না; হাতের শিরা থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। রক্ত সংগ্রহ করার আগে বাহুতে একটি রাবার ব্যান্ড বাধা হয়, ফলে শিরাগুলি ফুলে ওঠে ও সহজে দেখা যায়। এবার রক্ত সংগ্রহ করার স্থানটি জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হয় ও একটি স্টেরিলাইজ সিরিঞ্জের সাহায্যে সূচ বিদ্ধ করে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। জীবাণুর সংক্রমণ শনাক্ত করার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করার জন্য একাধিক নমুনা সংগ্রহ করা হয়। দুই থেকে তিনটি নমুনা অবশ্যই সংগ্রহ করা উচিত।  রক্ত সংগ্রহ করার পর রোগীর হাতের ক্ষতস্থানটি একটি ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়।

সংগ্রহ করা রক্তের নমুনা একটি স্টেরিলাইজড অর্থাৎ জীবাণুমুক্ত বিশেষ ধরণের টেস্ট টিউবে সঞ্চয় করা হয়। ব্লাড কালচার করার জন্য মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবে বিশেষ ধরনের মিডিয়া অর্থাৎ মাধ্যমে রক্তের নমুনাগুলি মেশানো হয়। রক্তে কোন জীবাণু উপস্থিত থাকলে এই মিডিয়া অর্থাৎ মাধ্যমে জীবাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে। 

কোনোরকম জীবাণু শনাক্ত করা গিয়েছে কিনা তার উপর ব্লাড কালচার পরীক্ষার ফলাফল নির্ভরশীল। পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ বা পজিটিভ হিসেবে প্রকাশ করা হতে পারে।

পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ হলে বলা যায় যে কালচারে কোন জীবাণু বৃদ্ধি পায়নি অর্থাৎ রোগীর রক্তে জীবাণু নেই।

পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ হওয়ার অর্থ হল কালচারের জীবাণু পাওয়া গিয়েছে অর্থাৎ রোগীর রক্তে জীবাণু উপস্থিত আছে।

ব্লাড কালচার টেস্ট পজিটিভ হলে অর্থাৎ জীবাণু উপস্থিতি থাকলে সেই জীবাণুর প্রকৃতি সম্পূর্ণভাবে জানার জন্য জীবাণুকে এক বা একাধিকবার কালচার করা হয়। এরপর বেশ কিছু পরীক্ষার সাহায্যে সঠিকভাবে জীবাণু চিহ্নিত করা হয়। কোন ওষুধে জীবাণুর সংক্রমণ দূর করা যাবে সেটা সম্পর্কেও ধারণা লাভ করা হয় এবং টেস্ট রিপোর্টে সম্ভাব্য ওষুধ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়। এর ফলে ব্লাড কালচারের রিপোর্ট দেখে চিকিৎসা করা সহজ হয়।

WebMd, Healthline, testing.com, University of Rochester,