Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাখাদ্য ও পানীয় Food & Drinks

ভিটামিনের অভাবজনিত অ্যানিমিয়া: কারণ রোগ লক্ষণ এবং চিকিৎসা। Vitamin Deficiency Anemia: Causes, Symptoms and Treatment.

রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া হওয়ার বিভিন্ন কারণ আছে। তবে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ভিটামিন B 12 এবং ফলেটের (Folate) অভাব। ভিটামিন B 12 এবং ফলেট-যুক্ত খাদ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে না খেলে বা অন্ত্রে এই ভিটামিনগুলির শোষণে সমস্যা হলে এই ধরনের অ্যানিমিয়া হতে পারে।

এই প্রতিবেদনে ভিটামিনের অভাবজনিত অ্যানিমিয়ার কারণ, রোগ লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করব।

দেহে লোহিত রক্ত কণিকার অভাবকে অ্যানিমিয়া বলা হয়। শরীরের পর্যাপ্ত পরিমাণ লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদিত না হলে অ্যানিমিয়া দেখা যায়। দেহে ভিটামিন B 12 বা B 9 অর্থাৎ ফলেটের মাত্রা কম থাকলে অ্যানিমিয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর লোহিত রক্ত কণিকার বদলে বড় আকারের লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদিত হয়। এই লোহিত রক্ত কণিকা গুলি শরীর জুড়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পরিবহন করতে পারে না। এদের আকার অস্বাভাবিক বড় হওয়ার কারণে ভিটামিনের অভাবজনিত অ্যানিমিয়াকে ম্যাক্রোসাইটিক বা মেগালোব্লাসটিক অ্যানিমিয়া বলা হয়। স্বাস্থ্যকর লোহিত রক্তকণিকা সাধারণত 120 দিন বাঁচে। কিন্তু ভিটামিন B 12 ও ফলেটের অভাবে উৎপাদিত বড় আকারের লোহিত রক্ত কণিকা গুলি দ্রুত মারা যায়। একারণে দেহে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া দেখা দেয়।

ভিটামিনের অভাবে অ্যানিমিয়া হলে তার লক্ষণ গুলি তেমন স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না। সমস্যা গুলি খুব ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। বেশ কয়েক মাস বা বছর ধরে ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। ভিটামিনের অভাবে অ্যানিমিয়া হলে মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, বুক ধড়ফড় করা, পেশির দুর্বলতা ইত্যাদি দেখা যায়। এছাড়া হাত-পা অসাড় হয়ে হাত ঝিনঝিন করা, শ্বাসকষ্ট, ওজন কমে যাওয়া, ফ্যাকাসে ত্বক ইত্যাদি রোগ লক্ষণ দেখা যায়। ভিটামিনের অভাবে মানসিক সমস্যা, হতাশা, বিভ্রান্তি, ভুলে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যাও দেখা যেতে পারে।

দেহে ভিটামিন B 12 বা ফলেটের অভাব হলে এই ধরনের অ্যানিমিয়া হতে পারে। ভিটামিন B 12 ও ফলেট-যুক্ত খাদ্য কম গ্রহণ করলে বা পৌষ্টিকতন্ত্রে এই সকল ভিটামিনের শোষণে সমস্যা হলে এই অ্যানিমিয়া হতে পারে। অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করলে, পৌষ্টিকতন্ত্রে অপারেশন বা অস্ত্রোপচার হলে ভিটামিনের শোষণ বাধা পায় ও এই ধরনের অ্যানিমিয়া হতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন B 12 যুক্ত খাদ্য যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, সবুজ শাকসবজি, মটরশুঁটি, বাদাম ইত্যাদি না খেলে ভিটামিনের অভাবে অ্যানিমিয়া হতে পারে। এছাড়া বিশেষ কিছু ওষুধ যেমন খিঁচুনি বিরোধী ওষুধ খেলেও ভিটামিনের শোষণ বাধা পায় ও এই ধরনের অ্যানিমিয়া হতে পারে।

রক্তের প্রাথমিক কিছু পরীক্ষা যেমন হিমোগ্লোবিন টেস্ট, CBC টেস্ট, ইত্যাদির সাহায্যে সহজেই ভিটামিনের অভাবজনিত অ্যানিমিয়া নির্ণয় করা যায়। রক্ত কণিকার আকার ও আকৃতি দেখে ভিটামিনের অভাবজনিত অ্যানিমিয়া সনাক্ত করা যায়। দেহে ভিটামিনের অভাব থাকলে লোহিত রক্ত কণিকার আকার বড় হয় এবং শ্বেত রক্তকণিকা ও অণুচক্রিকার সংখ্যা হ্রাস পায়। এছাড়া ভিটামিনের অভাব নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করার জন্য রক্তের ভিটামিন B 12 ও ফলেটের মাত্রা সরাসরি পরীক্ষা করা যেতে পারে।

ভিটামিনের অভাব দূর করা হল এই ধরনের অ্যানিমিয়ার প্রধান চিকিৎসা। কী পরিমাণ ভিটামিন গ্রহণ করা দরকার সেটা ঠিক করা হয় অ্যানিমিয়া কতটা তীব্র তার উপর। বাজারে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন B 12 ও ফলেটে-যুক্ত সম্পূরক পাওয়া যায়। ট্যাবলেট, ইনজেকশন, স্প্রে, সিরাপ ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার উপায় ভিটামিন B 12 ও ফলেট গ্রহণ করা যেতে পারে। ভিটামিনের মাত্রা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই সকল ওষুধ বা সম্পূরক গ্রহণ চালিয়ে যেতে হবে। এছাড়া লক্ষ্য রাখতে হবে খাদ্য তালিকার দিকে। অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন B 12 ও ফলেট যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা দরকার। খাদ্যে পর্যাপ্ত ভিটামিন গ্রহণ করলে এই সমস্যা সম্পূর্ণরূপে দূর হয়।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ এর মত অনুসারে দৈনিক ভিটামিন B 12 এর প্রস্তাবিত পরিমাণ গুলি দেওয়া হল:-

ভিটামিন B 12 এবং B 9 সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করলে ভিটামিনের অভাবজনিত অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করা যায়। ভিটামিন B 12 যুক্ত খাবার যেমন মাংস, মাছ, ডিম, দই, পনির, দুধ ইত্যাদি গ্রহণ করলে এই ধরনের অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি কমে। ফলেট অর্থাৎ ভিটামিন B 9 এর অভাব মেটাতে শস্য জাতীয় খাদ্য, সবুজ শাকসবজি, পালং শাক ইত্যাদি গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া কিছু ফল যেমন কলা, কমলা, স্ট্রবেরি, তরমুজ, চিনা বাদাম ইত্যাদির মধ্যেও ফলেট পাওয়া যায়।

বেশিভাগ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে খাদ্য থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন শরীরকে রোগ মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু ডায়েট কন্ট্রোল করলে বা গ্যাস্ট্রিক বাইপাস সার্জারি করা থাকলে আলাদাভাবে মাল্টি-ভিটামিন গ্রহণ করতে হবে।

National Institutes of Health, Cleveland Clinic, Mayo Clinic, WebMD, MedicalNewsToday,