ভিটামিন কি? What is Vitamin?
ভিটামিন কি? What is Vitamin?
রোগ আক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে এবং শরীরের স্বাভাবিক কাজকর্ম বজায় রাখতে ভিটামিনের গুরুত্ব অপরিসীম। ভিটামিন বলতে কী বোঝায় এবং কিভাবে ভিটামিন রোগ প্রতিরোধের সাহায্য করে, সেটা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
যে খাদ্য উপাদান স্বাভাবিক খাদ্যে স্বল্পমাত্রায় থেকে দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং যার অভাবে দেহে বিভিন্ন রোগ লক্ষণ দেখা যায়, তাকে ভিটামিন বা খাদ্য প্রাণ বলে।
ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ; ভিটামিন কে বাংলায় বলা হয় খাদ্যপ্রাণ। খাদ্যপ্রাণ কথাটা থেকেই বোঝা যায়, ভিটামিন আসলে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানী লুমিন 1881 খ্রিস্টাব্দে প্রথম লক্ষ্য করেন যে, প্রয়োজনীয় সব রকম খাদ্য গ্রহণ করা সত্ত্বেও, বিশেষ এক প্রকার খাদ্য উপাদানের অভাবে, জীবদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও পুষ্টি ব্যাহত হয়। বিজ্ঞানী হপকিনস ঐ প্রকার খাদ্য উপাদানকে অত্যাবশ্যক সহায়ক খাদ্য উপাদান রূপে অভিহিত করেন। 1912 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী ক্যাসিমির ফ্রাঙ্ক এই পদার্থকে, ভাইটামিন নামে অভিহিত করেন। ভিটামিন ও ভাইটামিন একই শব্দের ভিন্ন উচ্চারণ।
ভিটামিনের বৈশিষ্ট্য: Properties of vitamins:
• ভিটামিন এক প্রকার জৈব অনুঘটক, যা বিপাক ক্রিয়ায় কো-এনজাইম রূপে কাজ করে।
• ভিটামিন সাধারণ খাদ্যে খুব অল্প পরিমাণে থাকে।
• ভিটামিন অন্যান্য খাদ্য উপাদানের তুলনায় জীবদেহে খুব কম পরিমাণে প্রয়োজন হয়।
• ভিটামিন পরিপাক ক্রিয়ায় নষ্ট হয় না অর্থাৎ পৌষ্টিকতন্ত্রে পাচিত হওয়ার সময় নষ্ট হয় না
• উচ্চ তাপমাত্রায়, জারণ ক্রিয়ায়, রন্ধন-কালে অর্থাৎ রান্না করার সময়, তীব্র সূর্যের আলোতে এবং ক্ষারীয় পরিবেশে কোনও কোনও ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায় বা তাদের কার্যকারিতা হ্রাস পায়।
ভিটামিনের রাসায়নিক প্রকৃতি: Chemical Nature of Vitamins:
ভিটামিনের রাসায়নিক প্রকৃতি বিভিন্ন এবং একটি ভিটামিনের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য অন্যটি হতে আলাদা। কোন ভিটামিন প্রোটিন জাতীয়, কোনটি স্টেরয়েড জাতীয়, কোনটি অ্যালকোহল জাতীয় আবার কোনটি কুইনোন জাতীয়।
ভিটামিনের প্রকারভেদ: Types of Vitamins:
ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম এবং দ্রাব্যতার উপর ভিত্তি করে ভিটামিনদের দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়।
জলে দ্রবীভূত ভিটামিন যেমন ভিটামিন B কমপ্লেক্স, C, H, P এবং ভিটামিন M
স্নেহ পদার্থ অর্থাৎ তেল বা চর্বি জাতীয় পদার্থে দ্রবীভূত ভিটামিন যেমন ভিটামিন A, D, E এবং ভিটামিন K
সুস্থভাবে জীবন ধারণ করার জন্য প্রতিদিন খুব অল্প পরিমাণে ভিটামিন প্রয়োজন হয়; সেটা কয়েক মিলিগ্রাম বা আরও কম হতে পারে। প্রত্যেক প্রাণীর ভিটামিনের চাহিদা এক নয়। সকল সুষম খাদ্যে পরিমিত ভিটামিন থাকে। ত্রুটিপূর্ণ খাদ্য অভ্যাসের কারণে বা রান্না করার সময় সঠিক পদ্ধতি মেনে না চলার কারণে, আমাদের ভিটামিনের অভাব হয়। ভিটামিনের অভাবকে অ্যাভিটামিনোসিস বলে।
যেসব জৈবযৌগ থেকে প্রাণী দেহ বিভিন্ন ভিটামিন সংশ্লেষ বা উৎপাদন করে, সেই যৌগ গুলিকে প্রো-ভিটামিন বা আদি ভিটামিন বলা হয়। যেমন বিটা ক্যারোটিন হল, ভিটামিন A এর প্রো-ভিটামিন।
যেসব জৈব যৌগ, ভিটামিনের আকৃতি সম্পন্ন কিন্তু ভিটামিনের গুণসম্পন্ন নয়, তাদের সিউডো ভিটামিন বলে। যেমন মিথাইলকোবালামিন ভিটামিন B 12 এর সিউডো ভিটামিন।
কিছু জৈব পদার্থ আছে যাদের রাসায়নিক গঠন ভিটামিনের মত এবং জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে ভিটামিন এর স্থানে যুক্ত হয় ও ভিটামিনের কাজে বাধা দেয়, তাকে অ্যাণ্টি ভিটামিন বলা হয়। অ্যাণ্টি ভিটামিন, ভিটামিনের স্থান দখল করে নেয়। ফলে দেহে ভিটামিন থাকা সত্ত্বেও ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, গ্যালাকটোফ্লাভিন ভিটামিন B 12 অর্থাৎ রাইবোফ্লাবিনের অ্যাণ্টিভিটামিন।