মাষ্টার হেলথ চেকআপ: Master Health Checkup / Full Body Checkup:
“Prevention is better than cure” রোগের চিকিৎসা করা অপেক্ষা রোগ প্রতিরোধ করা বেশি ভাল। রোগ প্রতিরোধ করার প্রথম ধাপ হল মাষ্টার হেলথ চেকআপ বা ফুল বডি চেকআপ। মাষ্টার হেলথ চেকআপ করে শরীরের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ভাল ধারণা পাওয়া। মাষ্টার হেলথ চেকআপ বা ফুল বডি চেকআপ করার সময় কী কী পরীক্ষা করা হয় এবং মাষ্টার হেলথ চেকআপ করে কী উপকার পাওয়া যায় সেটা জানতে প্রতিবেদনটি পড়তে থাকুন।
বর্তমান আধুনিক গতিশীল পরিবেশে আমরা সকলে মানসিক ও শারীরিক চাপের মধ্যে জীবনযাপন করি। এইরকম পরিবেশে আমাদের স্বাস্থ্যের সমূহ ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই কারণে আমাদের সবথেকে মূল্যবান সম্পদ স্বাস্থ্যকে ভাল রাখতে মাষ্টার হেলথ চেকআপ অবশ্য প্রয়োজন।
মাষ্টার হেলথ চেকআপ কী? What is a Master Health Checkup?
মাষ্টার হেলথ চেকআপ হল বেশ কয়েকটি ক্লিনিক্যাল টেস্টের সমষ্টি, যার সাহায্যে কোন ব্যক্তির স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভাল ধারণা পাওয়া যায়। শরীরে কোন সমস্যা হলে, কী কারণে সমস্যা হচ্ছে সেটা খুঁজে পেতে মাষ্টার চেকআপ সাহায্য করে। সাধারণত বছরে একবার এই টেস্ট করে নেওয়া ভাল, তাই মাষ্টার হেলথ চেকআপ কে অ্যানুয়াল হেলথ চেকআপ বা বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষাও বলা হয়।
আমাদের অজান্তে দেহে কোন রোগ আক্রমণ করেছে কিনা বা কোন অঙ্গে কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা সেটা মাষ্টার হেলথ চেকআপের সাহায্যে প্রাথমিক পর্যায়ে বোঝা যায়। এর ফলে খুব তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়।
বয়সের সাথে সাথে আমাদের শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে। আমাদের শরীরের পুষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য যে উপাদান আমরা খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করি সেই উপাদানগুলির চাহিদার পরিবর্তন ঘটে। আমাদের ওজন কম বা বেশি হওয়ার সাথে শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনের ফলে স্বাস্থ্য কেমন আছে, জানতে মাষ্টার হেলথ চেকআপ সাহায্য করে।
মাস্টার হেলথ চেকআপে কী কী টেস্ট করা হয়? What tests are done in Master Health Checkup?
রোগের ইতিহাস: Clinical History:
আপনার বংশে কী ধরনের রোগের সমস্যা আগে দেখা গিয়েছে, আপনি নিজে কী রোগে ভুগেছেন বা বর্তমান কী কী রোগ আপনার শরীরে আছে ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে নেওয়া হয়। আগে কোন টেস্ট করে থাকলে তার রিপোর্ট লিপিবদ্ধ করা হয়।
জীবনযাত্রা: Lifestyle:
আমাদের স্বাস্থ্য অধিকাংশে আমাদের জীবনযাত্রার উপর নির্ভর করে। মাষ্টার হেলথ চেকআপ করার সময় রোগী কী ধরনের খাদ্য গ্রহণ করে, কোন পরিবেশে বাস করে, কোথায় কাজ করে ইত্যাদি সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
শরীরের স্বাভাবিক কাজ করার ক্ষমতা: Normal body function:
শরীরের স্বাভাবিক কাজ করার ক্ষমতা কেমন আছে জানার জন্য, রোগীর হজম ক্ষমতা, নিদ্রা, প্রস্রাব, পায়খানা, ইত্যাদি কেমন আছে সেটা জেনে নেওয়া হয়। এর সাথে কিছু পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়। ওজন, উচ্চতা, ব্লাড প্রেশার, মেটাবলিক রেট ইত্যাদি পরিমাপ করা হয়। যে সকল পরীক্ষা করা হয় সেগুলি হল:-
হিমোগ্লোবিন টেস্ট: Haemoglobin Test:
শরীরে রক্ত কতটা আছে এবং হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক আছে কিনা সেটা টেস্ট করা হয়।
টোটাল কোলেস্টেরল টেস্ট: Total Cholesterol Test:
শরীরে হার্ট ও রক্তনালীর স্বাস্থ্য কেমন আছে সেটা কোলেস্টেরল টেস্ট করে জানা যায়। হার্টের রোগের কোন সম্ভাবনা থাকলে সেটা প্রাথমিক পর্যায়ে বোঝা যায়।
মূত্রের রুটিন পরীক্ষা: Urine Analysis:
মূত্রের রুটিন টেস্ট করে মূত্রনালিতে কোন ইনফেকশন আছে কিনা জানা যায়। এই পরীক্ষার সাহায্যে কিডনির স্বাস্থ্য ও শরীরের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে ভাল ধারণা পাওয়া যায়।
মলের রুটিন টেস্ট: Stool Test:
হজম শক্তি কেমন আছে, লিভার কেমন কাজ করছে, পৌষ্টিকতন্ত্রে কোন সমস্যা আছে কিনা, পেটে কৃমি আছে কিনা ইত্যাদি জানা যায়।
ডায়াবেটিস টেস্ট অর্থাৎ সুগার টেস্ট: Sugar Test:
রক্ত শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে কিনা সেটা দেখা হয় রক্ত পরীক্ষা করার মাধ্যমে। ফাস্টিং এবং পোস্ট প্যারেনডিয়াল এই দুই প্রকার টেস্ট করা হয়। ডায়াবেটিস হলে আমরা সহজেই বুঝতে পারিনা, তাই ডায়াবেটিস কে সাইলেন্ট কিলার বলা হয়। মাষ্টার হেলথ চেকআপে ডায়বেটিস টেস্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা।
থাইরয়েড টেস্ট: Thyroid Test:
থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ করার উপর আমাদের শরীরে সুস্থতা অনেকাংশে নির্ভরশীল তাই TSH টেস্ট করা হয়। এই পরীক্ষার সাহায্যে থাইরয়েড গ্রন্থির সক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
লিভার ফাংশন টেস্ট: Liver Function Test:
এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। লিভারে স্বাস্থ্য কেমন আছে সেটা জানতে এই পরীক্ষা করা হয়।
সিরাম ক্যালসিয়াম টেস্ট: Serum Calcium Test:
এই টেস্টের সাহায্যে আমরা অনেক কিছু জানতে পারি। শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণে কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা, কিডনি ঠিকমত কাজ করছে কিনা, ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা ইত্যাদি। এছাড়া হরমোন কেমন কাজ করছে, মাসলের সংকোচন প্রসারণে কোন সমস্যা আছে কিনা, স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের কাজ স্বাভাবিক আছে কিনা ইত্যাদি জানতে এই টেস্ট করা হয়।
এইচ আই ভি টেস্ট: HIV Test:
দেহে AIDS নামক মারাত্মক রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাসের আক্রমণ হলে এই টেস্টের সাহায্যে জানা যায়।
প্যাপ স্মেয়ার: Pap Smear:
মহিলাদের জরায়ুতে ক্যান্সার সৃষ্টির কোন সম্ভাবনা আছে কিনা বা ক্যান্সার হয়েছে কিনা এটা জানতে প্যাপ স্মেয়ার টেস্ট করা হয়।
ই সি জি: ECG:
হার্টের স্বাস্থ্য কেমন আছে জানার জন্য ইসিজি করা হয়। ECG একটি নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা।
বুকের এক্স-রে: Chest X – Ray:
বুকের এক্স – রে করে ফুসফুসের স্বাস্থ্য দেখে নেওয়া হয়। ফুসফুসের মধ্যে কোন ইনফেকশন হয়ে থাকলে সেটা বোঝা যায়।
দাঁতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা: Dental Checkup:
দাঁতের সমস্যা জানতে বা দাঁতের রোগের সম্ভাবনা জানতে ডেন্টাল চেকআপ করা হয়।
ভিশন এন্ড হেয়ারিং টেস্ট:
চোখের কোন সমস্যা আছে কিনা জানতে চোখ পরীক্ষা করা হয় এবং কানের সমস্যা জানতে কানের স্বাস্থ্য দেখে নেওয়া হয়।
রক্তের চাপ পরীক্ষা: Blood Pressure:
ব্লাড প্রেসার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে আমাদের বিভিন্ন সমস্যা হয়। উচ্চ রক্তচাপ আমাদের মারাত্মক সমস্যায় ফেলতে পারে। স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি রক্তচাপের সমস্যা থেকে ঘটে থাকে। মাষ্টার হেলথ চেকআপ করার সময় রক্তের চাপ পরিমাপ করা হয়।
পেটের ছবি: Abdominal Check:
আল্ট্রাসাউন্ড পদ্ধতি ব্যবহার করে পেটের মধ্যে থাকা অঙ্গগুলির স্বাস্থ্য দেখে নেয়া হয়।
ভিটামিন পরীক্ষা: Vitamin Check:
ভিটামিনের অভাবে শরীরে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। শরীরে ভিটামিনের মাত্রা স্বাভাবিক আছে কিনা সেটা রক্ত পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া হয়।
কিডনির স্বাস্থ্য পরীক্ষা: Kidney Function Test:
রক্তের ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড, সিরাম ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি পরীক্ষা করে কিডনির স্বাস্থ্য কেমন আছে সেটা দেখে নেওয়া হয়।
ডাক্তারের সাথে পরামর্শ: Consultation with a Doctor:
মাষ্টার হেলথ চেকআপের সমস্ত ডায়গনস্টিক পরীক্ষার রিপোর্ট সংগ্রহ করার পর একজন জেনারেল ফিজিশিয়ানের সাথে স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। রোগীর কোন সমস্যা থাকলে প্রয়োজনে স্পেশালিস্ট ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বলা হয়। সমস্যা সাধারণ হলে ডাক্তারবাবু প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করেন।
ডায়াটিশিয়ানের পরামর্শ: Consultation with a Dietitians:
মাষ্টার হয়েছে ক্যাপের এটা শেষ ধাপ। জেনারেল ফিজিসিয়ানের কাছে রোগীর স্বাস্থ্য কেমন আছে সেটা জানার পর ডায়াটিশিয়ান প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন। খাদ্য তালিকা কেমন হওয়া উচিত সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেন ও একটি খাদ্য তালিকা তৈরি করে দেন। সঙ্গে জীবনযাত্রার পরিবর্তন করার জন্য প্রয়োজনীয় শারীরিক কসরত, ব্যায়াম ইত্যাদির পরামর্শ দেন।
তথ্যসূত্র: