রক্তের ই এস আর পরীক্ষা: Blood for ESR Test (Bengali)
রক্তের ই এস আর পরীক্ষা: Blood for ESR Test.
নাম থেকেই বোঝা যায় লোহিত রক্তকণিকার থিতিয়ে পড়ার হার পরীক্ষা করা হল ই এস আর। এই রক্ত পরীক্ষা তে রোগীর দেহ থেকে রক্ত সংগ্রহ করার পর এন্টিকোয়াগুলেন্ট (Anticoagulant) অর্থাৎ রক্ত জমাট বাঁধতে বাধাদানকারী পদার্থ মিশ্রিত করার পর একটি কাঁচের মধ্যে দিয়ে থিতিয়ে পড়ার জন্য রেখে দেওয়া হয়। এর ফলে রক্তের প্রধান কণিকা, লোহিত রক্তকণিকা, থিতিয়েয়ে পড়ে। একঘণ্টা ও দুঘণ্টা পর দেখতে হয় কতটা থিতিয়ে পড়েছে এবং মিলি মিটার স্কেলে এর মান নথিভুক্ত করতে হয়।
কখন টেস্ট করা হয়? (When to get tested ESR?)
এস আর কোনও নির্দিষ্ট রোগ সনাক্ত করার পরীক্ষা নয়। প্লাজমা অর্থাৎ রক্তরসে উপস্থিত প্রোটিনের পরিবর্তন, এই পরীক্ষা দ্বারা বোঝা যায়। আর প্লাজমা প্রোটিন এর পরিবর্তন ঘটে শরীরের মধ্যে কোন ইনফেকশনের কারণে। অর্থাৎ ই এস আর বৃদ্ধি পেলে বুঝতে হবে, দেহের মধ্যে কোন প্রদাহ অর্থাৎ ইনফেকশন আছে। আবার কমতে থাকলে বুঝতে হবে, প্রদাহ অর্থাৎ ইনফেকশন ভালো হয়ে উঠছে। তাই বলা যায় ইএসআর টেস্ট করে আমরা আমাদের শরীরের সুস্থতা সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা পেতে পারি। রিউমাটিজম এবং টিউবারকিউলোসিস, এই দুটি রোগের সেরে ওঠার হার পরীক্ষা করতে ই এস আর ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া জ্বর হলে, ওজন কমতে থাকলে, গাঁটে ব্যথা হলে, বা জয়েণ্ট শক্ত হওয়া যা সকালে 30 মিনিটের বেশি স্থায়ী হলে, গলায় ও ঘাড়ে ব্যথা হলে, হজমের সমস্যা হলে বা অ্যানিমিয়া হলে, ইএসআর পরীক্ষা রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করতে পারে। মাথাব্যথা, বিশেষ করে মাথার মাঝখানে ব্যথা হলে,ডায়রিয়া হলে,মলের মধ্যে রক্ত পড়লে, অস্বাভাবিক পেটে ব্যথা হলে এই টেস্ট করা প্রয়োজন।
ই এস আর এর নরমাল রেঞ্জ বা স্বাভাবিক মাত্রা: (Normal Range of ESR)
পরীক্ষা পদ্ধতির উপর স্বাভাবিক মান নির্ভর করে।
Westergren Method (ওয়েস্টারগ্রিন পদ্ধতি)
Male(পুরুষ) 5 – 15 mm/hr. (5 – 15 মিলিমিটার/ঘণ্টা)
Female (মহিলা) 2 – 20 mm/hr. (5 – 20 মিলিমিটার/ঘণ্টা)
Winrtob Method (উইনট্রোব পদ্ধতি)
Male (পুরুষ) 0 – 9 mm/hr. (0 – 9 মিলিমিটার/ঘণ্টা )
Female (মহিলা) 0 – 20 mm/hr. (0 – 20 মিলিমিটার/ঘণ্টা)
Landau Method (ল্যানডাউ পদ্ধতি)
Male (পুরুষ) 0 – 5 mm/hr. (0 – 5 মিলিমিটার/ঘণ্টা )
Female (মহিলা) 0 – 8 mm/hr. (0 – 8 মিলিমিটার/ঘণ্টা )
আমাদের দেশে ওয়েস্টারগ্রিন পদ্ধতি সর্বাপেক্ষা বেশি প্রচলিত।
ই এস আর পরীক্ষার প্রস্তুতি: (Preparation before ESR Test)
সামান্য নিয়ম মানার প্রয়োজন হয়। কোন ওষুধ গ্রহণ করলে, সেটা আপনার ডাক্তারকে জানান। কিছু স্টেরয়েড জাতীয় এবং কিছু ব্যথার ওষুধ, ই এস আর পরীক্ষার ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে। যেকোনো সময় ই এস আর পরীক্ষার জন্য রক্ত দেওয়া যায়। অর্থাৎ খালি পেটে অথবা ভর্তি পেটে ই এস আর পরীক্ষার জন্য রক্ত দেওয়া যায়, কিন্তু খালি পেটে রক্ত দেওয়া ভাল।
এই পরীক্ষা করার সময় কোন বিপদের সম্ভাবনা আছে ? (Are there any potential dangers while doing ESR Blood Test?)
কোন বিপদের সম্ভাবনা নেই। হাতের শিরা থেকে রক্ত নেওয়া হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে শিরা খুব সরু হওয়ার কারণে বিশেষ যত্ন নিতে হয়। রক্ত দেখে মাথা ঘুরতে পারে।
ই এস আর পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাখ্যা: ( Interpretation of ESR test results: )
শুধুমাত্র ই এস আর পরীক্ষার ফলাফল দেখে কোন নির্দিষ্ট রোগ সনাক্ত করা সম্ভব নয়। ই এস আর পরীক্ষার সাথে অন্যান্য রোগ নির্ণয়কারী পরীক্ষার ফলাফল বিচার করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
ই এস আর এর কম মাত্রা: (Low levels of ESR)
ই এস আর এর মাত্রা কম হতে পারে, সিকেল সেল অ্যানিমিয়া হলে, অর্থাৎ এমন একটি সমস্যা, যেখানে লোহিত রক্ত কণিকা কাস্তের মত বাঁকা হয়ে যায়, লিউকেমিয়া অর্থাৎ রক্তের ক্যানসার হলে, লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা বেশি হলে, কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউর নামক রোগে, রক্তে ফাইব্রিনোজেনে নামক প্রোটিনের পরিমাণ কমে গেলে, হাইপারভিসকোসিটি অর্থাৎ রক্তের ঘনত্ব বেড়ে গেলে বৃদ্ধি এবং শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে।
ই এস আর এর মাঝারি মাত্রা: (Moderate levels of ESR)
ই এস আর এর মাত্রা সামান্য বেশি হতে পারে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস নামক রোগে, রক্তাল্পতা হলে অর্থাৎ লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা হ্রাস পেলে, থাইরয়েডের রোগে, কিডনির রোগে,
লোহিত রক্তকণিকার অস্বাভাবিকতায় যেমন ম্যাক্রোসাইটোসিস অর্থাৎ রক্ত কণিকার আকার বৃদ্ধি পেলে, কয়েক ধরণের ক্যান্সার যেমন, লিম্ফোমা হলে, যক্ষ্মা হলে বা ফুসফুসের সংক্রমণে,হাড়ের সংক্রমণে, হার্ট ইনফেকশন হলে এবং দেহের কোন স্থানে ইনফেকশন হলে।
ই এস আর এর উচ্চ মাত্রা: (High levels of ESR)
ই এস আর এর মাত্রা অত্যন্ত বেশি হতে পারে,মাল্টিপল মাইলোমা নামক রোগে, প্লাজমা কোষের ক্যান্সার হলে, ওয়াল্ডেনস্ট্রমের ম্যাক্রোগ্লোবুলিনেমিয়া নামক রোগে, শ্বেত রক্তকণিকার ক্যান্সারে, টেম্পোরাল আর্টেরাইটিস বা পলিমায়ালজিয়া রিউম্যাটিকা রোগে, অত্যধিক সংবেদনশীল ভাস্কুলাইটিস রোগে, অ্যালার্জি থেকে রক্তনালীতে প্রদাহ হলে।
রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করতে ডাক্তাররা সাধারণত অন্যান্য পরীক্ষার ফলাফলের সাথে ই এস আর পরীক্ষার ফলাফলের তুলনা করবেন এবং রোগীর উপসর্গ ও লক্ষণগুলি পর্যবেক্ষণ করবেন। এছাড়া পারিবারে রোগের ইতিহাস জেনে নিয়ে চূড়ান্ত রোগনির্ণয় করবেন।
মন্তব্য: (Remarks)
মনে রাখবেন বিশেষ কোন রোগ ছাড়াও স্বাভাবিক হতে পারে গর্ভাবস্থায় ঋতুস্রাবের সময় স্বাভাবিক মাত্রার বাইরে হতে পারে একইভাবে এসপিরিন জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করলেও সাধারণ মাত্রার বাইরে হতে পারে।