খাদ্য ও পানীয় Food & Drinksপন্য Productরূপ চর্চা Beauty Tips

নিয়মিত রসুন খেলে শরীরে কী পরিবর্তন ঘটে? রসুনের উপকারিতা। What Happens to Your Body When You Eat Garlic? Garlic: Health Benefits and Uses.

আমরা অনেকেই খাদ্যে রসুন ব্যবহার করতে পছন্দ করি। রসুনের ঔষধি গুণাবলী আমাদের অবাক করতে পারে। কারণ রসুনের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে। নিয়মিত প্রতিদিন রসুন খেলে শরীরে অবাক করা পরিবর্তন ঘটতে পারে। এই প্রতিবেদনে রসুনের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা কর হয়েছে।

রসুনের মধ্যে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও খনিজ উপাদান থাকার সাথে সাথে বেশ কিছু ঔষধি রাসায়নিক যৌগ থাকে। অ্যালিসিন (Allicin), অ্যালাইন (Alliin), ডায়ালিল সালফাইড (Diallyl Sulphide), অজোন (Ajone) ইত্যাদি জৈব রাসায়নিক যৌগ থাকে। এই সকল জৈব যৌগগুলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে ও প্রদাহ রোধ করতে কাজ করে এই উপাদানগুলি। এছাড়া রসুন, হৃৎপিণ্ড, লিভার, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও পৌষ্টিকতন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।

রসুনে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে; কিন্তু রসুনের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি উপাদান থাকে। রসুন ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন B6, ভিটামিন C, সেলেনিয়াম, ফাইবার ইত্যাদির ভাল উৎস। এছাড়া অন্যান্য পুষ্টি উপাদানও অল্প পরিমাণে উপস্থিত থাকে।

দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ আমাদের শ্বেত রক্ত কণিকা ধ্বংস করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ক্ষতি করে। 2021 সালের একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে যে রসুন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং ইমিউন সিস্টেমের উন্নতি ঘটায়। এছাড়া শ্বেত রক্তকণিকার মাত্রা পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে। রসুনে উপস্থিত অ্যালিসিন এই কাজটি করে। 2020 একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে রসুনে উপস্থিত অর্গানোসালফার (Organosulfur) যৌগটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে, রসুন আমাদের দেহে ভাইরাসের প্রবেশে বাধা দেয়।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন-এর সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে, মৃত্যুর অন্যতম কারণ হল হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো রোগ। এই রোগগুলির প্রধান কারণ হল উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা। 2020 সালে একটি গবেষণায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছে যে, রসুন উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কমাতে পারে। রসুন অনেকটা হাই ব্লাড প্রেশারের ওষুধের মত কাজ করে। অ্যানজিওটেনশিন II (Angiotensin II) নামক হরমোন রক্তচাপ বাড়ায়। রসুনে উপস্থিত অ্যালিসিন এই অ্যানজিওটেনশিনের উৎপাদনে বাধা দেয়। এছাড়া অ্যালিসিন রক্তনালীগুলিকে শিথিল করে রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধি করে।

দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে হার্টের রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। 2018 সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, রসুন কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। বিশেষ করে খারাপ কোলেস্টেরল LDL এর মাত্রা কমাতে পারে। দু-মাসের বেশি সময় ধরে টানা রসুন খেলে খারাপ কোলেস্টেরল LDL এর মাত্রা প্রায় 10% পর্যন্ত কমতে পারে। তবে রসুন ট্রাইগ্লিসারাইড মাত্রার উপর তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারেনা। গবেষণা এটাও বলছে যে HDL অর্থাৎ ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রার উপরও রসুনের তেমন কোন প্রভাব নেই।

রসুন অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ভাল। রসুনে থাকা জৈব রাসায়নিকগুলি অন্ত্রের পরিবেশের উন্নতি ঘটায়। প্রোবায়োটিক অর্থাৎ অন্ত্রে উপস্থিত উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে আমরা সার্বিকভাবে ভাল থাকি। 2020 সালের একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, টানা তিন মাস রসুনের নির্যাস খেলে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পায়।

যাই হোক, রসুন সবার পেটের জন্য ভাল নাও হতে পারে। রসুনে প্রচুর পরিমাণ ফ্রুকটোন থাকার কারণে পেটে গ্যাস অম্বলের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে IBS এর রোগীদের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।

রসুন খেলে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে এটা কার্যকরী হতে পারে। 2019 সালের একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, ডায়াবেটিসের রোগীরা টানা রসুন খেলে রক্ত শর্করার পরিমাণ কমে। ফাস্টিং ব্লাড সুগার টেস্ট ও হিমোগ্লোবিন A1C টেস্ট করে এটা প্রমাণ করা গিয়েছে।

রসুন খেলে হাড়ের স্বাস্থ্যের উপকার হতে পারে। 2017 সালের একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, কাঁচা রসুন ক্যালসিয়ামের শোষণ বাড়ায়। অস্টিওপোরোসিস অর্থাৎ হাড়ের ক্ষয় রোধে রসুন সাহায্য করে। এছাড়া অস্টিও-আর্থাইটিসের সমস্যা কমাতে রসুন ব্যবহার করা যেতে পারে। খাদ্য তালিকায় রসুন যোগ করলে ও নিয়মিত চিকিৎসা নিলে এই ধরনের সমস্যা থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হয়।

রসুনে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা অক্সিডেটিভ ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করে। অক্সিডেটিভ ট্রেস কমার ফলে স্মৃতি-ভ্রম, ভুলে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা কমে। অ্যালঝাইমার ও অন্যান্য ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে রসুন সাহায্য করতে পারে। তবে এ বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে। প্রাথমিক গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, রসুনে উপস্থিত অ্যালিসিন আমাদের স্মৃতিশক্তি রক্ষা করতে সাহায্য করে।

ফ্যাটি লিভার রোগে লিভারে চর্বি জমে লিভারের কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগ খুব সাধারণ একটা রোগে পরিণত হয়েছে। ওজন কমাতে পারলে এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করলে ফ্যাটি লিভার রোগের সমস্যা কমে। স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকায় রসুনকে অবশ্যই স্থান দিতে হবে। 2019 সালের একটি গবেষণায় গিয়েছে যে, সপ্তাহে 4 থেকে 6 দিন কাঁচা রসুন খেলে ফ্যাটি লিভার রোগের ঝুঁকি 34% পর্যন্ত কমে যায়।

বিভিন্নভাবে আমরা আমাদের খাদ্যে রসুন ব্যবহার করতে পারি। যেকোন ধরনের শাকসবজিতে রসুন ব্যবহার করা হয়। পাস্তা, স্যুপ, নুডল ইত্যাদি ভাজা খাবারেও রসুন ব্যবহার করা যেতে পারে। সাদা ভাত বা ফ্রাইড রাইস উভয়েই রসুন ব্যবহার করা যেতে পারে। এর ফলে স্বাদ বৃদ্ধির সাথে সাথে ঔষধি পুষ্টিগুণ ও পাওয়া যায়। আমাদের দেশে মাছ, মাংস ও ডিমে অবশ্যই রসুন ব্যবহার করা হয়।

বিভিন্ন ধরনের পানীয়তেও রসুন ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে মোমো জাতীয় খাবারের স্যুপে রসুন ব্যবহার করা হয়। এছাড়া সকালে লেবু জল পান করার সময় রসুন গ্রহণ করা যেতে পারে।

ভাজা রসুন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ভাল। রসুনকে গরম করলে রসুনে থাকা অ্যালিনিন, অ্যালিসনে রূপান্তরিত হয়। এই অ্যালিসিন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী।