শীতে ত্বক ফাটার সমাধান: | ঘরোয়া উপায়ে স্কিন কেয়ার: Skin Care in Winter:
শীত পড়লেই কি আপনার ত্বক ফেটে যায়? হাত-পা রুক্ষ হয়ে যায়, ঠোঁট শুকিয়ে যায়, আর মুখে টানটান ভাব আসে? তাহলে এই প্রতিবেদনটি আপনার জন্যই তৈরি। এখানে আলোচনা করা হয়েছে, শীতে ত্বক কেন ফাটে, কিভাবে ঘরোয়া উপায়ে এই সমস্যার সমাধান করা যায়, আর কোন ভুলগুলো একদমই করা যাবে না, সেগুলি নিয়ে। প্রতিবেদনটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন কারণ শেষে থাকবে একটি দারুণ DIY স্কিন ময়েশ্চারাইজার মাস্ক, যা আপনার ত্বককে করবে একদম সফট, বেবি সফট।
শীতে ত্বকের সাধারণ সমস্যা:
শীতের শুষ্ক বাতাসে এবং অভ্যন্তরীণ হিটিংয়ের কারণে ত্বক তার আর্দ্রতা হারায়, ফলে ত্বক রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে যায়। শুষ্ক ত্বকের কারণে চুলকানি হতে পারে, বিশেষ করে শীতের সময় চুলকানি বেড়ে যায়। ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে চামড়া উঠতে শুরু করে। যাদের একজিমা বা সোরিওসিস আছে, শীতকালে তাদের ত্বকের সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। শুষ্ক ত্বকের কারণে লালচে ভাব বা লাল দাগ দেখা দিতে পারে।
ঘরোয়া উপায়ে স্কিন কেয়ার:
মধু ও দুধ:
ত্বকের যত্ন নিতে এক চামচ কাঁচা দুধের সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে। 15 মিনিট রেখে দেওয়ার পর হালকা গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এর ফলে ত্বক নরম ও উজ্জ্বল হবে। এটি ব্রণের দাগ দূর করতে, শুষ্কতা কমাতে এবং ত্বকের বার্ধক্য রোধ করতে সাহায্য করে। মধুর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান এবং দুধের ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকের গভীরে জমে থাকা ময়লা দূর করে ও ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
নারকেল তেল বা বাদাম তেল:
শুষ্ক ত্বকের সমস্যা কমানোর জন্য নারকেল তেল বা বাদাম তেল বেশ উপকারী হতে পারে। রাতে ঘুমানোর আগে মুখ, হাত ও পায়ে নারকেল তেল বা বাদাম তেল মাখলে সকালে মোলায়েম ত্বক পাওয়া যায়। কারণ তেল ত্বকের গভীরে আর্দ্রতা বৃদ্ধি করে ফলে ত্বক নরম হয়। আবার অন্যদিকে, নারকেল বা বাদাম তেল হালকা হওয়ার কারণে ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হওয়ার সমস্যা হয় না, ফলে তৈলাক্ত বা ব্রণ থাকা ত্বকেও এটি ব্যবহার করা যায়। এছাড়া তেলের মধ্যে থাকা ভিটামিন E ত্বকের উপকার করে।
ফাটা গোড়ালির যত্ন:
শীতকালে ফাটা গোড়ালির যত্ন নিতে নিয়মিত পা ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং পিউমিস অর্থাৎ ঝামা পাথর দিয়ে পা ঘষতে হবে। এবার পায়ের মধ্যে নারকেল তেল বা পেট্রোলিয়াম জেলি দিয়ে ময়েশ্চারাইজ করে সুতির মোজা পড়া উচিত। এছাড়া গ্লিসারিন ও গোলাপ জলের মিশ্রণ বা লেবুর রসের মত প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা যেতে পারে। নারকেল তেল বা পেট্রোলিয়াম জেলি ত্বকের আর্দ্রতা বৃদ্ধি করে ফলে ত্বক ভালো থাকে। লেবুর রসে থাকা মৃদু অ্যাসিড মৃত চামড়া তুলে ফেলতে সাহায্য করে, ফলে ত্বক উজ্জ্বল দেখায়। পেঁপের নির্যাসের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে বেশি ভালো ফল পাওয়া যায়।
ঠোঁটের যত্ন:
শীতকালে ঠোঁটের যত্ন নিতে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজ করা জরুরী। নারকেল তেল বা কোকো বাটার এর মত প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা উচিত। এর ফলে শীতের শুষ্কতা থেকে ঠো়ঁট রক্ষা পায়। এছাড়া পর্যাপ্ত জল পান করা দরকার। দিনের বেলায় লিপবাম ব্যবহার করলে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ঠোঁট রক্ষা পায়।
প্রতিদিনের স্কিন কেয়ার রুটিন:
শুধুমাত্র প্যাক বা ক্রিম লাগালেই হবে না, ত্বকের যত্ন নিতে হবে প্রতিদিন। সহজ একটা রুটিন মেনে চললে শীতেও ত্বক সুন্দর থাকবে।
সকালে হালকা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এরপর ময়েশ্চারাইজার লাগান, অয়েল বেসড হলে ভালো হয়। আর বাইরে গেলে সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন। বাইরে বেরোনোর কম করে 20 মিনিট আগে সানস্ক্রিন লোশন লাগান।
রাতে ঘুমানোর আগে মুখ পরিষ্কার করে অল্প নারকেল তেল বা অ্যালোভেরা জেল লাগান। ঠোঁটে ঘি বা লিপবাম দিন। এছাড়া হাতে পায়ে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে অবশ্যই ভুলবেন না।
কি করবেন আর কি করবেন না:
এখন জেনে নিন কিছু করণীয় ও বর্জনীয় কাজ যা আপনার ত্বকের যত্ন নিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
করণীয়:
দিনে পর্যাপ্ত জল পান করুন। ঠাণ্ডা নয়, কুসুম কুসুম গরম জল দিয়ে স্নান করতে পারলে ভালো হয়। ভিটামিন E ও ওমেগা 3 সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন বাদাম, মাছ, দুধ ইত্যাদি বেশি করে খান।
বর্জনীয়:
বেশি উত্তপ্ত গরম জল ব্যবহার করবেন না, এতে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। ত্বক ঘষে ঘষে মুছবেন না, তোয়ালে দিয়ে আলতো করে মুছুন। কেমিক্যাল যুক্ত সাবান বা স্ক্রাবার ব্যবহার করবেন না।
স্পেশাল DIY স্কিন মাস্ক:
উপকরণ, 2 টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল, এক চামচ মধু, এক চামচ দই। সবগুলি উপাদান একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগান ও 20 মিনিট রেখে দিন। এবার কুসুম কুসুম গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। দারুণ ফল পাবেন, ত্বক হবে মোলায়েম, হাইড্রেটেট ও উজ্জ্বল।
তথ্যসূত্র:
American Academy of Dermatology, Lakme Salon, Plum Goodness etc.
