সিরাম আয়রন টেস্ট: Serum Iron Test:
সিরাম আয়রন টেস্ট: Serum Iron Test:
রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ার প্রধান কারণ হল দেহে আয়রন অর্থাৎ লোহার অভাব। শরীরে আয়রনের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রা অপেক্ষা বেশি বা কম হলে জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়। আরও জানতে প্রতিবেদনটি পড়তে দেখতে থাকুন।
রক্তের প্রধান উপাদান হল রক্তরস এবং রক্তকণিকা। রক্তের মধ্যে থাকা রক্তকণিকা গুলি জমাট বাঁধলে যে হলদে তরল অবশিষ্ট থাকে তাকে সিরাম বলা হয়।
সিরাম আয়রন টেস্টের সাহায্যে; দেহের মধ্যে আয়রনের পরিমাণ কেমন আছে সেটা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আয়রন একটি অত্যাবশ্যকীয় খনিজ উপাদান যা আমরা খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করি। লোহিত রক্ত কণিকায় উপস্থিত হিমোগ্লোবিন আমাদের দেহে অক্সিজেন পরিবহন করে। এই হিমোগ্লোবিনের প্রধান উপাদান হল আয়রন বা লোহা।
কখন সিরাম আয়রন পরীক্ষা করা হয়? When is a Serum Iron Test ordered?
সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার সময় CBC অর্থাৎ কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট টেস্ট করা হয়। এই পরীক্ষায় যদি দেখা যায় যে হিমোগ্লোবিন (Hemoglobin) কম আছে বা হেমাটোক্রিট (Hematocrit) কম আছে এবং লোহিত রক্ত কণিকার আকৃতি ছোট ও তার মধ্যে হিমোগ্লোবিন কম আছে; সেক্ষেত্রে আয়রনের অভাবজনিত অ্যানিমিয়া হয়েছে বলে মনে করা হয়। এক্ষেত্রে সিরাম আয়রন টেস্ট করতে দেওয়া হয়। ডাক্তার যদি রোগীর দেহে আয়রনের অভাবজনিত কোন লক্ষণ দেখতে পান, সেক্ষেত্রেও সিরাম আয়রন টেস্ট করতে দিতে পারেন।
সকল কাজে ক্লান্ত হয়ে পড়া, ঝিমঝিম ভাব, দুর্বলতা, মাথা ধরা, চোখ মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতার লক্ষণ।
দেহে আয়রনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে কিছু লক্ষণ দেখা যায়। গিঁটে ব্যথা, ক্লান্তি, দুর্বলতা, কাজ করার ইচ্ছে কমে যাওয়া, পেটে ব্যথা, যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া, হৃৎপিণ্ড লিভার ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া; এগুলি হল দেহে আয়রন বৃদ্ধি পাওয়ার লক্ষণ।
কোন শিশু, ভুলবশত বেশি পরিমাণ আয়রন ট্যাবলেট খেয়ে ফেললে, আয়রন টেস্ট করে আয়রনজনিত বিষক্রিয়া হয়েছে কিনা, সেটা জানা যায়।
আয়রনের অভাব দূর করার জন্য চিকিৎসা করার সময় নির্দিষ্ট সময় অন্তর সিরাম আয়রন টেস্ট করা উচিত। এর ফলে চিকিৎসার অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
সিরাম আয়রন টেস্টের জন্য কিভাবে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়? How is the blood sample collected for Serum Iron Test?
সাধারণত হাতের শিরা থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। আঙ্গুলে সূচ বিদ্ধ করে নমুনা সংগ্রহ করা যেতে পারে। তবে হাতের শিরা থেকে রক্ত নেওয়া বেশি ভাল।
রক্তের নমুনা সংগ্রহ করার সময় তেমন কোন বিপদের সম্ভাবনা নেই। সূচ বিদ্ধ করা স্থানে সামান্য ব্যথা হতে পারে এবং কখনও কখনও ত্বকের নিচে রক্ত জমে হেমাটোমা হতে পারে।
সিরাম আয়রন পরীক্ষার আগের প্রস্তুতি: Preparation Before Serum Iron Test:
শরীরে আয়রনের পরিমাণ খুব সহজে পরিবর্তনশীল। কী ধরনের খাদ্য গ্রহণ করছেন এবং কী রকম পরিবেশে বসবাস করছেন, তার উপর রক্তের আয়রনের পরিমাণ পরিবর্তনশীল। এইজন্য সাধারণত সকাল বেলা রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষার আগে প্রায় 12 ঘণ্টা কোন খাদ্য গ্রহণ করা চলে না। কেবল মাত্র জল পান করা যেতে পারে।
কী ধরনের ওষুধ গ্রহণ করছেন; সেটা সম্পর্কে ল্যাবরেটরিতে এবং আপনার ডাক্তারকে জানান। আপনার ডাক্তার কোন নির্দিষ্ট ওষুধ কে সেবন করতে বারণ করতে পারেন। জন্মনিয়ন্ত্রণের পিল সেবন করলে সিরাম আয়রন টেস্টের ফলাফল প্রভাবিত হয়।
সিরাম আয়রনের স্বাভাবিক মাত্রা: Normal Serum Iron Levels:
সিরাম আয়রনের মাত্রা প্রকাশ করা হয়, মাইক্রোগ্রাম/ডেসিলিটার (mcg/dL) হিসাবে। আয়রনের স্বাভাবিক মাত্রা বা নরমাল লেভেল হল:
60 থেকে 170 মাইক্রোগ্রাম/ডেসিলিটার। (mcg/dL)
রক্তের মধ্যে আয়রনকে পরিবহন করে ট্রান্সফেরিন (Transferrin) নামক প্রোটিন। এই ট্রান্সফেরিন প্রোটিনের মধ্যে কতটা আয়রন আছে সেটা পরিমাপ করাও গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রান্সফেরিন স্যাচুরেশন 25 শতাংশ থেকে 35 শতাংশের মধ্যে থাকলে স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়।
TIBC অর্থাৎ টোটাল আয়রন বাইন্ডিং ক্যাপাসিটি পরীক্ষা করে এটা বোঝা যায় যে, ট্রান্সফেরিন প্রোটিনের, আয়রনকে আবদ্ধ করার ক্ষমতা কি পরিমাণ আছে।
টোটাল আয়রন বাইন্ডিং ক্যাপাসিটি হওয়া দরকার 240 থেকে 450 মাইক্রোগ্রাম/ডেসিলিটার। (mcg/dL)
সিরাম আয়রন পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাখ্যা: Interpretation of Serum Iron Test Results:
বেশি পরিমাণে আয়রন জাতীয় ওষুধ খাওয়া হয়ে গেলে, ভিটামিন B 6 বা ভিটামিন B 12 বেশি গ্রহণ করলে, সিরামে আয়রনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া বা হিমোলাইসিস অর্থাৎ রক্ত কণিকা ভেঙ্গে গিয়ে অ্যানিমিয়ার সৃষ্টি হলে, রক্তে আয়রনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। লিভার ফেলিওর হলে, হেপাটাইটিস হলে, রক্তে আয়রনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। আবার কোন কোন ব্যক্তির দেহ স্বাভাবিকভাবেই বেশি পরিমাণ আয়রন সঞ্চয় করে।
রক্তে আয়রনের পরিমাণ কম হলে বুঝতে হবে যে, রোগী আয়রনযুক্ত খাদ্য কম খেয়েছে অথবা রোগীর দেহ সঠিকভাবে আয়রন শোষণ করতে পারছে না বা গ্রহণ করতে পারছে না। মহিলাদের অতিরিক্ত রজঃস্রাব হলে, শরীরে আয়রনের মাত্রা কমে যায়।
গর্ভবতী মায়েদের দেহে আয়রনের মাত্রা কমে যায়। এছাড়া পৌষ্টিকতন্ত্রের কোন স্থানে রক্তপাত হলে দেহে আয়রনের মাত্রা কমে যায়।