রক্ত পরীক্ষা Blood Testল্যাব টেস্ট Lab Test

হিমোগ্লোবিন A-1 C পরীক্ষা: [Hemoglobin A-1 C Test]

হিমোগ্লোবিন A-1 C পরীক্ষা: [Hemoglobin A-1 C Test]

ডায়াবেটিস বা সুগার হয়েছে কিনা, সুগার হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা বা ডায়াবেটিস হয়ে থাকলে সেটা নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা জানতে হিমোগ্লোবিন A-1 C বা গ্লাইকোসাইলেটেড হিমোগ্লোবিন নামক একটি পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষার ফলাফল দেখে কিভাবে ডায়াবেটিস সম্পর্কে ধারণা পাবো সেটা জানতে প্রতিবেদনটি পড়তে থাকুন।

টাইপ I ও টাইপ II ডায়াবেটিস সম্পর্কে ধারণা পেতে হিমোগ্লোবিন A-1 C অর্থাৎ গ্লাইকেটেড হিমোগ্লোবিন টেস্ট একটি  প্রচলিত পদ্ধতি। হিমোগ্লোবিন A-1 C টেস্টের ফলাফল দেখে বিগত 2 – 3 মাস রক্তে ব্লাড সুগারের মাত্রা কেমন ছিল, সেটা খুব ভালো বোঝা যায়।

আমাদের রক্তের প্রধান উপাদান লোহিত রক্ত কণিকা। লোহিত রক্ত কণিকার মধ্যে লাল রঙের প্রোটিন জাতীয় পদার্থ থাকে; একে হিমোগ্লোবিন বলে। হিমোগ্লোবিন আমাদের দেহে অক্সিজেন বহন করে।

আমরা প্রধানত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করি। আমাদের দেহ পৌষ্টিকতন্ত্রে গ্লুকোজ রূপে এই খাদ্যকে শোষণ করে এবং রক্ত এই গ্লুকোজকে শরীরের বিভিন্ন অংশে পরিবহন করে। রক্তের মধ্যে গ্লুকোজ পরিবাহিত হওয়ার সময় সামান্য কিছু অংশ হিমোগ্লোবিনের সাথে স্থায়ীভাবে যুক্ত হয়। একে গ্লাইকেটেড হিমোগ্লোবিন বা গ্লাইকোসাইলেটেড হিমোগ্লোবিন বলে। রক্তে গ্লুকোজ বা সুগারের পরিমাণ বেশি থাকলে এই গ্লাইকোটেট হিমোগ্লোবিন বেশি পরিমাণে উৎপন্ন হয় এবং লোহিত রক্তকণিকা যতদিন বাঁচে অর্থাৎ প্রায় 120 দিন; ততদিন রক্তের মধ্যে থেকে যায়।

বিগত 2 থেকে 3 মাস, রক্তের মধ্যে গড়ে সুগারের মাত্রা কেমন ছিল সেটা সম্পর্কের ধারণা পাওয়া যায় এই টেস্টের ফলাফলের সাহায্যে। আরও যেসকল তথ্য জানা যায় সেগুলি হল;

পরবর্তীকালে ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগের কোন সম্ভাবনা আছে কিনা সেটা বোঝা যায় এই পরীক্ষার সাহায্যে।

টাইপ I বা টাইপ II ডায়াবেটিস হয়েছে কিনা এবং হয়ে থাকলে বর্তমানে রোগটি কতটা তীব্র মাত্রায় আছে, সেটা বুঝে নিতে এই পরীক্ষা করা হয়।

ডায়াবেটিস হয়ে থাকলে জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রয়োজন মতো ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। চিকিৎসায় ডায়াবেটিস বা সুগার কতটা নিয়ন্ত্রিত হল, সেটা এই পরীক্ষার সাহায্যে বোঝা যায়।

কতদিন অন্তর হিমোগ্লোবিন A-1 C পরীক্ষা করবেন সেটা নির্ভর করছে কি ধরনের ডায়াবেটিসে রোগী আক্রান্ত এবং ডায়াবেটিস বা সুগার নিয়ন্ত্রণে রোগী কতটা কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তার উপর।

ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে প্রতি বছর পরীক্ষা করা উচিত।

টাইপ II ডায়াবেটিসের রোগী, যারা ইনসুলিন ব্যবহার করেন না, তাদের বছরে দুবার এই টেস্ট করা প্রয়োজন।

টাইপ I ডায়াবেটিস রোগীদের বছরের 4 বার এই পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

টাইপ II ডায়াবেটিসের রোগী, যারা ইনসুলিন গ্রহণ করেন এবং যাদের সুগার লেভেল নরমাল রাখতে বেশ সমস্যা হয়, সেই সকল ব্যক্তিদের বছরে 4 বার এই পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

এছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য চিকিৎসা চলাকালীন ওষুধ বা ওষুধের ডোজ পরিবর্তন করলে এই পরীক্ষা করা উচিত।

রক্তের হিমোগ্লোবিন A-1 C একটি সাধারণ পরীক্ষা। এই পরীক্ষা করার জন্য কোন বিশেষ প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। খালি পেটে বা ভর্তি পেটে পরীক্ষার জন্য রক্ত দেওয়া যেতে পারে।

সাধারণত হাতের শিরা থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আঙুলের সূচ বিদ্ধ করেও রক্ত সংগ্রহ করা যেতে পারে। রক্ত সংগ্রহ করার সময় তেমন কোন বিপদের সম্ভাবনা নেই। সূচ বিদ্ধ করা স্থানে সামান্য ব্যথা হতে পারে।

হিমোগ্লোবিন A-1 C এর ফলাফল প্রকাশ করা হয় শতাংশের হিসাবে অর্থাৎ পার্সেন্টেজ হিসাবে। রক্ত শর্করার গড় বেশি থাকলে হিমোগ্লোবিন A-1 C এর পার্সেন্টেজ বেশি হয়। পার্সেন্টেজ বেশি মানে ডায়াবেটিস বা সুগার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

যে সকল ব্যক্তি ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস নেই, তাদের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিন A-1 C পারসেন্টেজ 5.7 এর কম হয়। এই পার্সেন্টেজ 5.7 থেকে 6.4 এর মধ্যে থাকলে বলা যায় যে রোগী প্রি ডায়াবেটিস দশায় আছেন অর্থাৎ কিছুদিনের মধ্যেই ডায়াবেটিস হতে পারে। ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

হিমোগ্লোবিন A-1 C, 6.5 শতাংশ বা তার বেশি হলে, এটি নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে, আপনার ডায়াবেটিস বা সুগার হয়েছে। A-1 C, 8 শতাংশের বেশি হলে বোঝা যায় যে, রোগী ডায়াবেটিস বা সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না; এবার হয়তো ডাযোবেটিস জনিত অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি হবে।

যে সকল ব্যক্তি ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করাচ্ছেন, যাদের হিমোগ্লোবিন A-1 C, 7 শতাংশ বা তার কাছাকাছি, তাদের চিকিৎসা ভালো কাজ করছে বলে মনে করা হয়। এই মাত্র খুব বেশি কম বা বেশি হলে, চিকিৎসক রোগীর ওষুধের ডোজের পরিবর্তন করবেন।

হিমোগ্লোবিন A-1 C এর মাত্রা দেখে রক্তে উপস্থিত সুগারের মাত্রা সম্পর্কে ভালো ধারণা পেতে পারি, যেমন –

হিমোগ্লোবিন A-1 C এর মাত্রাগড় রক্ত শর্করার মাত্রা
6%126 মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (7 মিলিমোল/লিটার)
7%154 মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (8.6 মিলিমোল/লিটার)
8%183 মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (10.2 মিলিমোল/লিটার)
9%212 মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (11.8 মিলিমোল/লিটার)
10%240 মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (13.4 মিলিমোল/লিটার)
11%269 মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (14.9 মিলিমোল/লিটার)
12%16.5 মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (7 মিলিমোল/লিটার)

এটা মাথায় রাখা প্রয়োজন যে, বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিন A-1 C রিপোর্ট ভুল হতে পারে।

শরীরে একটানা রক্তপাত হতে থাকলে লোহিত রক্তকণিকা সহ হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায়। এক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিন A-1 C এর মাত্রা কম হতে পারে অর্থাৎ প্রকৃত মান অপেক্ষা কম হতে পারে।

যে ব্যক্তি আয়রনের অভাবজনিত অ্যানিমিয়াতে ভুগছেন তার ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিন A-1 C এর মাত্রা বেশি হতে পারে। এক্ষেত্রে রিপোর্ট ভুল হয়।

বেশিরভাগ মানুষের দেহে প্রধানত হিমোগ্লোবিন A নামক হিমোগ্লোবিন থাকে। তবে কোন কোন ব্যক্তির দেহে হিমোগ্লোবিন A ছাড়াও অন্যপ্রকার হিমোগ্লোবিন অস্বাভাবিকভাবে বেশি পরিমাণে থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিন A-1 C রিপোর্ট যা হওয়া উচিত, তার থেকে বেশি বা কম হতে পারে।

যে ব্যক্তি হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়াতে ভুগছেন বা যে ব্যক্তি রক্ত গ্রহণ করেছে, তার হিমোগ্লোবিন A-1 C পরীক্ষা করে কোন লাভ হয় না। কারণ এক্ষেত্রে এই পরীক্ষায় প্রাপ্ত রিপোর্টের সাহায্যে ডায়াবেটিস সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব নয়।

ল্যাবরেটরি ও পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসারে হিমোগ্লোবিন A-1 C রিপোর্ট সামান্য পরিবর্তনশীল। রিপোর্টের সাথে রোগীর রোগের ইতিহাস ও ক্লিনিক্যাল ডায়াগনোসি মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।