ইউরিন কালচার, মূত্রের ব্যাকটেরিয়া কালচার Urine Culture Test
ইউরিন কালচার মূত্রের ব্যাকটেরিয়া কালচার। Urine Culture Test
ইউরিন কালচার বলতে কি বোঝায়?
এই পরীক্ষার সাহায্যে মূত্রনালির সংক্রমণ সৃষ্টিকারী জীবাণুগুলি খুঁজে বের করা ও সনাক্ত করা সম্ভব হয়।
আমাদের রেচনতন্ত্রের কোন অংশে অর্থাৎ বৃক্ক বা কিডনি, গোবিনি বা ইউরেটার বা মূত্রাশয়ের কোন অংশে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে অর্থাৎ ইনফেকশন হলে, ইনফেকশন সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া মূত্রের মাধ্যমে দেহের বাইরে নির্গত হয়। এছাড়া, মূত্রনালি ছাড়া দেহের অন্য কোন অংশে ইনফেকশন সৃষ্টি কারী ব্যাকটেরিয়া, রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে মূত্রের মাধ্যমে শরীরের বাইরে নির্গত হতে পারে। যেমন টাইফয়েড রোগের জীবাণু মূত্রের মাধ্যমে শরীরের বাইরে নির্গত হয়। কিন্তু মূত্রে এই সকল ব্যাকটেরিয়া খুব অল্প পরিমাণে উপস্থিত থাকে। এ কারণে মূত্রের রুটিন টেস্ট বা সাধারণ টেস্ট দ্বারা এই ব্যাকটেরিয়া গুলিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। আর এই জন্য মূত্রের মধ্যে অল্প পরিমাণে থাকা ব্যাকটেরিয়া গুলিকে, কৃত্রিম পরিবেশে রেখে সংখ্যাবৃদ্ধি করানো হয়। কৃত্রিম পরিবেশে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে আমরা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে কী ধরনের ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন ঘটিয়েছে সেটা জানতে পারি। শুধু জানা নয়, কোন ধরণের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে ব্যাকটেরিয়া গুলিকে ধ্বংস করে রোগ সারানো যাবে সেটাও জানা সম্ভব হয় এই পরীক্ষার সাহায্যে। নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করলে এই রোগটি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয় অকারণে গাদা গাদা অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হয় না। অর্থাৎ ইউরিন কালচার হল ইউরিনের মধ্যে উপস্থিত জীবাণুকে সঠিকভাবে জানার একটি কৌশল। সেই সাথে কোন অ্যান্টিবায়োটিক সর্বাপেক্ষা ভাল কাজ করবে সেটা জানাও সম্ভব।
কখন ইউরিন কালচার করা হয়?
মূত্রনালি, মূত্রাশয় ইত্যাদি স্থানে ইনফেকশন হলে, ইনফেকশন হয়েছে কিনা সেটা জানার জন্য ইউরিন কালচার করা হয়। ইনফেকশন হলে কোন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত বা অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করার পর অ্যান্টিবায়োটিক আদেও কাজ করছে কিনা সেটা জানার জন্য ইউরিন কালচার করা হয়। বারবারে প্রস্রাব হলে এবং প্রস্রাবে জ্বালা করলে, মূত্রত্যাগ করতে কষ্ট হলে, ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিয়ে ইউরিন কালচার করতে হয়। জ্বর হওয়ার কোন নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে না পেলেও ইউরিন কালচার করতে বলা হয়। ইউরিন কালচার করে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন আছে কিনা, সেটা দেখে নিতে হয়। শরীরের পেছনে নিচের দিকে বা তলপেটে ব্যথা হলে ইউরিন কালচার করতে হতে পারে।
এছাড়া বিশেষ কিছু রোগ যেমন ডায়াবেটিস থাকলে, ঘনঘন সহবাস করলে, শুক্রাণু নাশক পদার্থ ব্যবহার করলে, কিডনিতে পাথর হলে, প্রস্রাব ত্যাগ করার জন্য ক্যাথেটার ব্যবহার করলে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে বা অটোইমিউন রোগ থাকলে মূত্রনালির সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই সব ক্ষেত্রে ইউরিন কালচার করার প্রয়োজন হয়।
ইউরিন কালচার করার জন্য রোগীর কি করা প্রয়োজন?
প্রথমে ল্যাবরেটরি থেকে বিশেষভাবে স্টেরিলাইজ করা একটি মুখ বন্ধ করা জীবাণুমুক্ত স্টেরিলাইজড পাত্র সংগ্রহ করতে হবে। তারপর মূত্র সংগ্রহ করার জন্য সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে, তুলো বা গজের মধ্যে, অ্যালকোহল বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে মূত্রনালির চারিপাশকে পরিষ্কার করতে হবে। এবার প্রথমে সামান্য একটু মূত্র ত্যাগ করতে হবে। এরপর পাত্রটির ঢাকনা খুলে অল্প কিছুটা মূত্র সংগ্রহ করতে হবে। এই পদ্ধতিকে বলা হয় মিট স্ট্রিম ইউরিন কানেকশন। অর্থাৎ প্রস্রাবের প্রথম ও শেষ অংশ নেওয়া চলবে না, শুধুমাত্র মূত্রত্যাগের মধ্যবর্তী সময়ের মূত্র সংগ্রহ করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে পাত্রটির মূত্রনালির চামড়ায় স্পর্শ না করে। মূত্র সংগ্রহ করার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকনা বন্ধ করতে হবে। ক্যাথেটার ব্যবহার করলে স্টেরিলাইজ ক্যাথেটার ব্যবহার করে মূত্র সংগ্রহ করতে হবে।
কখন পরীক্ষার ফলাফল জানা যাবে?
সাধারণত 24 থেকে 72 ঘণ্টা সময় লাগতে পারে এই পরীক্ষার ফলাফল জানতে ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন না থাকলে 24 ঘণ্টা পরই রিপোর্ট জানা যায় কিন্তু ইনফেকশন থাকলে আরও এক থেকে দুদিন সময় লাগে।
গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে ইউরিন কালচার গুরুত্বপূর্ণ কেন
গর্ভবতী মায়েদের ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন হলে সেটি বেশ সমস্যার সৃষ্টি করা। গর্ভবতী মায়েদের ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন এর সম্ভাবনাও বেশি থাকে। সে কারণে ইনফেকশন থেকে রক্ষা পেতে এবং জটিল সমস্যা থেকে বাঁচতে ইউরিন কালচার করার প্রয়োজন পড়ে। ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন গর্ভবতী মায়েদের সময়ের আগেই প্রসবের ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
এই পরীক্ষায় কোন বিপদের সম্ভাবনা আছে কিনা?
মূত্রের নমুনা সংগ্রহ করার সময় তেমন কোন বিপদের সম্ভাবনা নেই। কিন্তু ক্যাথেটার ব্যবহার করে মূত্র সংগ্রহ করার জন্য ডাক্তার বা প্রশিক্ষিত নার্সের প্রয়োজন হয়।
টেস্টের আগে কি ধরনের সতর্কতা নেয়া প্রয়োজন?
কি কি ওষুধ ও সেবন করছেন, সেটা আপনার ডাক্তারকে এবং ল্যাবরেটরিতে জানান। কোনও অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করার পর এই টেস্ট করলে টেস্টের ফলাফল সঠিক হবে না। এছাড়া আপনি কিভাবে মূত্র সংগ্রহ করছেন সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাখ্যা।
ইউরিন কালচার রিপোর্টে বিস্তৃতভাবে ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন সম্পর্কে তথ্য দেয়া থাকে। কী ধরনের ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করেছে, সেটা এই পরীক্ষার সাহায্যে জানা যায় এবং কোন অ্যান্টিবায়োটিক সেই ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে পারবে, সেটাও এই পরীক্ষার সাহায্যে জানা যায়। ল্যাবরেটরি থেকে পরীক্ষার ফলাফল জানার পর অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা করাতে হবে। পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ হলেও ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ সে ক্ষেত্রে কি কারণে সমস্যা হচ্ছে সেটা জানতে আপনার ডাক্তার, অন্য কোন পরীক্ষা পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন।