রক্ত পরীক্ষা Blood Testসংবাদ News

টোটাল সিরাম প্রোটিন টেস্ট। Total Serum Protein Test.

টোটাল সিরাম প্রোটিন টেস্ট। Total Serum Protein Test.

স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা পেতে বিভিন্ন রকমের রক্ত পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়। প্রধান পরীক্ষাগুলোর মধ্যে রক্তের প্রোটিন পরীক্ষা অন্যতম। রক্তের সিরামে প্রোটিনের পরিমাণ পরীক্ষা করে স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যায়। কিছু জটিল শারীরিক সমস্যার গভীর অনুসন্ধানেও সাহায্য করে এই পরীক্ষা।

আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় প্রোটিন উৎপাদন করে আমাদের লিভার অর্থাৎ যকৃৎ। শরীর সুস্থ রাখার জন্য প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অ্যালবুমিন ও গ্লোবিউলিন, এই দুই ধরনের প্রোটিন আমাদের প্রধান আলোচ্য।

অ্যালবুমিন নামক প্রোটিন সারা দেহে, হরমোন, ওষুধ ইত্যাদি পরিবহন করে করে এবং আমাদের দেহের মাংসপেশি গঠনে ও ক্ষতিপূরণে সাহায্য করে। অপরদিকে গ্লোবিউলিন হল অনেক ধরনের প্রোটিনের সমষ্টি এবং এরা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। গ্লোবিউলিন রোগ জীবাণু ধ্বংস করে এবং পুষ্টি পদার্থ পরিবহন করে।

টোটাল সিরাম প্রোটিন টেস্টের মাধ্যমে রক্ত উপস্থিত মোট প্রোটিনের পরিমাপ করা হয়। অ্যালবুমিন ও গ্লোবিলিনের অনুপাত কত, সেটাও দেখা হয়। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ব্যক্তিদের, অ্যালবুমিনের পরিমাণ গ্লোবিউলিন অপেক্ষা সামান্য বেশি হয়। কিন্তু অসুস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই অনুপাত বদলে যায়।

কখন সিরাম প্রোটিন পরীক্ষা করা হয়? When to get tested for Serum Protein?

সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার সময় প্রোটিন টেস্ট করা হয়। পুষ্টি সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা, সেটা জানার জন্য, ওজন কমতে থাকলে, সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়লে সিরাম প্রোটিন টেস্ট করা প্রয়োজন। কিডনি অর্থাৎ বৃক্ক এবং লিভার অর্থাৎ যকৃত অসুস্থ হলে বা অসুস্থতার কোন রোগ লক্ষণ দেখা গেলে এই পরীক্ষা করা উচিত। দেহে কোন ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে বা কোন ইনফেকশন দেখা গেলেও এই টেস্ট করতে দেওয়া হয়। এছাড়া বোনম্যারোতে কোন সমস্যা হলে বা শরীরের মাংস পেশি ফুলে গেলেও প্রোটিন টেস্ট করতে দেওয়া হয়।

প্রোটিন টেস্টের প্রস্তুতি। Preparation before testing Serum Protein.

খালি পেটে বা ভর্তি পেটে রক্ত পরীক্ষা করা যেতে পারে। তবে রক্ত দেওয়ার আগে প্রচুর জল পান করা উচিত। কম জল খেলে রিপোর্ট সঠিক নাও হতে পারে। কিছু ওষুধ যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণের পিল, প্রোটিন পরীক্ষার ফলাফল কে ব্যাহত করে। কি কি ওষুধ, ভিটামিন ইত্যাদি গ্রহণ করছেন সেটা আপনার ডাক্তার এবং ল্যাবরেটরিতে জানান।

সিরাম প্রোটিন টেস্টের জন্য রক্তের নমুনা সংগ্রহ। Collection of blood sample for Serum Protein Test.

সাধারণত হাতের শিরা থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আঙ্গুলে সূচ বিদ্ধ করে রক্ত সংগ্রহ করা যেতে পারে। তবে সেটা বাঞ্ছিত নয়। শিশুদের ক্ষেত্রে গোড়ালির মধ্যে সূচ বিদ্ধ করে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা যেতে পারে। রক্ত সংগ্রহ করার সময় তেমন কোনও বিপদের সম্ভাবনা নেই। সূচ বিদ্ধ করা স্থানে সামান্য ব্যথা হতে পারে, হেমাটোমা অর্থাৎ ত্বকের নিচে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে।

সিরাম প্রোটিনের স্বাভাবিক মান। Normal Level of Serum Protein.

টোটাল প্রোটিন Total Protein:

6 থেকে 8.3 গ্রাম প্রতি ডেসিলিটার। (6 – 8.3 gm/dL)

অ্যালবুমিন

3.5 থেকে 5.0 গ্রাম প্রতি ডেসি লিটার। (3.5 – 5.0 gm/dL)

স্বাভাবিক মাত্রা পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসারে সামান্য কম বা বেশি হতে পারে। রিপোর্টে লেখা স্বাভাবিক মান মেনে চলুন। প্রোটিনের স্বাভাবিক মাত্রা রোগীর বয়স, লিঙ্গ ও কোন জনজাতির অন্তর্গত তার উপর পরিবর্তনশীল। গর্ভবতী মায়েদের টোটাল প্রোটিনের মাত্রা সাধারণত সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পায়।

সিরাম প্রোটিন পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাখ্যা। What does the Serum Protein test result mean?

টোটাল প্রোটিন Total Protein

স্বাভাবিক অপেক্ষা টোটাল প্রোটিন বেশি হয় লিভারের রোগে। যেমন হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি রোগে। এইচআইভি ভাইরাস আক্রমণ করলেও টোটাল প্রোটিন এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। বোনম্যারো অর্থাৎ হাড়ের মজ্জায় অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে টোটাল প্রোটিন বৃদ্ধি পায়। হাড়ের মধ্যে মাল্টিপল মায়োলমা নামক রোগ দেখা দিলেও টোটাল প্রোটিন বৃদ্ধি পায়। এছাড়া তীব্র মাত্রার ডায়রিয়াতে টোটাল প্রোটিন বৃদ্ধি পায়।

Low total protein অর্থাৎ টোটাল প্রোটিনের মাত্রা কম দেখা যায়, রক্তপাত হলে, লিভারের কাজকর্ম অস্বাভাবিক হলে, কিডনি অর্থাৎ বৃক্ক রোগগ্রস্ত হলে। অপুষ্টি জনিত রোগে, খাদ্য হজম ও শোষণে কোন সমস্যা হলেও টোটাল প্রোটিনের মাত্রা কম হয়।

এছাড়া দেহে অত্যধিক পুড়ে গেলে, প্রোটিন উৎপাদনকারী জিনে কোন সমস্যা থাকলে, শরীরে প্রদাহ হলে, ফুলে গেলে, অপারেশনের পর রোগীর সুস্থ হতে সমস্যা হলে, প্রোটিনের মাত্রা কম হতে পারে।

কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলেও প্রোটিনের মাত্রা কম হতে পারে। অন্ত্রের কোলাইটিস রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা ওষুধ, আলবুমিনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। অ্যালবুমিনের পরিমাণ 3.4 গ্রাম প্রতি ডেসিলিটার এর কম হলে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

অ্যালবুমিন ও গ্লোবিউলিন অনুপাত। Albumin/Globulin Ratio.

সাধারণত অ্যালবুমিন ও গ্লোবিউলিনের অনুপাত 1 এর অল্প বেশি হয়। এই অনুপাত যদি খুব বেশি হয় বা খুব কম হয়, সেক্ষেত্রে আরও কিছু টেস্ট করে কারণ অনুসন্ধান করতে হয়। অনুপাত কম হতে পারে অটো ইউনিয়ন রোগে, মাল্টিপল মায়োলমা, সিরোসিস অফ লিভার ও বৃক্কের রোগে। গ্লোবিউলিন উৎপাদন কম হলে অ্যালবুমিন গ্লোবিউলিন রেশিও(A/G Ratio) অনুপাত বেশি হয়।

অ্যালবুমিন ও গ্লোবউলিন অনুপাত স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, জিন ঘটিত রোগে ও লিউকোমিয়া নামক রোগে। আমাদের দেহে রোগ জীবাণুর প্রতিরোধকারী পদার্থ, অ্যান্টিবডিগুলি হল গ্লোবিউলিন। গ্লোবিউলিন উৎপাদন কম হলে, অ্যালবুমিন গ্লোবিউলিন অনুপাত বেশি হয়।

Remarks মন্তব্য।

টোটাল প্রোটিনের মাত্রা কম বা বেশি হলে অথবা অ্যালবুমিন ও গ্লোবিউলিনের অনুপাত কম বা বেশি হওয়া, কোন রোগ আক্রমণের সম্ভাবনার দিক নির্দেশ করে মাত্র। নির্দিষ্টভাবে কোন রোগ শনাক্ত করার জন্য রোগীর লক্ষণগুলির সাথে পরীক্ষার ফলাফল এর সঠিক মেলবন্ধন করা প্রয়োজন। এছাড়া আরও কিছু পরীক্ষা আছে যা প্রোটিন টেস্টের সাথেই করতে হয়। তবেই সঠিক রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হয়। রোগ সনাক্ত করতে ডাক্তারের পরামর্শই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ।