লিভারের রোগের প্রাথমিক লক্ষণ: Early Warning Signs of Liver Damage:
লিভারের রোগের প্রাথমিক লক্ষণ: Early Warning Signs of Liver Damage:
আমাদের দেহের প্রধান অঙ্গগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল যকৃত বা লিভার। এটি আমাদের দেহের সর্ববৃহৎ পৌষ্টিক গ্রন্থি। বক্ষপিঞ্জরের মধ্যে এর অবস্থান এবং এই লিভারের আয়তন প্রায় একটি ফুটবলের সমান।
লিভার আমাদের খাদ্য গ্রহণে ও হজমে সাহায্য করে। শরীরের মধ্যে উৎপন্ন হওয়া বর্জ্য পদার্থ বাইরে নির্গত করে লিভার। এছাড়া বিভিন্ন রকমের উৎসেচক উৎপাদন করে আমাদের লিভার।
বিভিন্ন কারণে লিভার রোগগ্রস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কী কী লক্ষণ দেখে লিভারের স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, সেটা জানতে এই প্রতিবেদন পড়তে হবে।
প্রথমে লিভার ড্যামেজ হওয়ার কারণগুলি জেনে নেব। তারপর লিভার ড্যামেজ হলে যে লক্ষণ দেখা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করব।
লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ: Cause of Liver Damage:
জীবাণুর আক্রমণ: Infection:
প্যারাসাইট, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া, লিভার অর্থাৎ যকৃতকে আক্রমণ করে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। জীবাণুগুলি খাদ্য ও পানীয়র মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে বা রক্ত ও বীর্যের মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করতে পারে। ভাইরাস ঘটিত রোগ গুলি হল হেপাটাইটিস A, B, C ইত্যাদি।
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জনিত সমস্যা: Immune System Abnormality:
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রধান কাজ হল, রোগ জীবাণু ধ্বংস করা। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় কোন সমস্যা হলে, এই ব্যবস্থা ভুলবশত নিজের দেহের অঙ্গের ক্ষতি করে। রোগ গুলি হল অটোইমিউন হেপাটাইটিস, প্রাইমারি বিলিয়ারি সিরোসিস ইত্যাদি।
ক্যান্সার বা অন্য কোন অস্বাভাবিক বৃদ্ধি: Cancer and Other Abnormal Growth:
লিভারের মধ্যে কোনরকম টিউমার সৃষ্টি হলে বা অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটলে, লিভার ড্যামেজ হতে পারে। যেমন লিভার ক্যানসার, পিত্তনালী ও পিত্ত থলিতে ক্যান্সার, লিভার অ্যাডেনোমা ইত্যাদি।
বংশগত: Genetics:
জিন হল আমাদের বংশগত বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক। পিতা বা মাতার কাছ থেকে আমাদের দেহে আসা লিভারের রোগ সৃষ্টিকারী জিনের কারণে আমাদের লিভার রোগগ্রস্ত হতে পারে।
অন্যান্য কারণ: Other Cause:
অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানের কারণে আমাদের লিভার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। চর্বিযুক্ত মাংস অতিরিক্ত পরিমাণে, বেশিদিন ধরে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে, ফ্যাটি লিভার নামক রোগ সৃষ্টি হয়।
লিভার ড্যামেজ হলে চেয়ে লক্ষণ গুলি দেখা যায় সেগুলি হল: Symptoms of Liver Disease:
• দেহের ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলদে হয়ে যায়। শরীরে বিলিরুবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এটা হয়। হেপাটাইটিস ও সিরোসিস অফ লিভার নামক রোগে এটা ঘটে। একে সাধারণত আমরা জন্ডিস বলে থাকি।
• শরীরের ওজন কম সময়ে বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া লিভার ড্যামেজের কারণে হতে পারে। ফ্যাটি লিভার রোগে ওজন বাড়ে এবং ভাইরাসের আক্রমণে লিভার ড্যামেজ হলে ওজন কমে।
• পেটে, বিশেষ করে উপর পেটে ব্যথা হয় এবং ফুলে যায়। লিভারে ইনফেকশন হলে লিভারে রক্ত চলাচল বাধা পায়, ফলে নিকটবর্তী রক্তনালীগুলি ফুলে যায় ও রক্তজাত তরল জমা হওয়ার কারণে পেট ফুলে যায়।
• পা ও গোড়ালি ফুলে যায়। অ্যালকোহল পান করার ফলে লিভার ড্যামেজ হলে, পা ও গোড়ালি ফোলা, প্রাথমিক একটি লক্ষণ।
• প্রস্রাবের রং ঘন হয়; হলদে হয়। স্বাভাবিক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে শরীরে উৎপন্ন হওয়া বিলিরুবিন রাসায়নিক ভাবে পরিবর্তিত হয়ে মলের মাধ্যমে দেহ থেকে নির্গত হয়। লিভারের মাধ্যমে লিভারের রোগে এই পদ্ধতি বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে মূত্রে বিলুরুবিন নির্গত হয়।
• মলের রং হালকা হয়ে যায়। কখনও কখনও মলের মধ্যে রক্তের উপস্থিতির কারণে, মল কালচে হতে পারে।
• শরীর ভীষণ ক্লান্ত হয়ে যায়। কোন কাজ করার শক্তি থাকে না। লিভারের রোগে শরীরে স্নায়ু নিয়ন্ত্রণকারী রাসায়নিক ও হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
• খাদ্য হজম হয় না, খাদ্যে রুচি আসে না। বমি হয় বা বমি বমি ভাব থাকে। লিভার খাদ্য হজমকারী উপাদান উৎপাদন করতে না পারায় এমন হয়।
• শরীরের কোথাও সামান্য আঘাত লাগলে কালশিটে দাগের সৃষ্টি হয়। রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্যকারী উৎসেচক গুলি লিভার উৎপন্ন হয়। লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং কালশিটে দাগের সৃষ্টি হয়।
• ত্বক চুলকায়। সাধারণত ত্বক ড্রাই হলে চুলকায়। কিন্তু লিভারের রোগে বিশেষ করে সিরোসিস অব লিভার বা পিত্তনালীর রোগে ত্বক চুলকানো একটি সাধারণ লক্ষণ। ত্বকের মধ্যে তরলের ঘাটতি ঘটার জন্য এমন হয়। এর ফলে লিভারের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাতের তালু ও পায়ের তলা লালচে হয়ে যায়।
মন্তব্য: Remarks:
ভালো খবর হল এটাই যে, লিভারের বেশিভাগ রোগ নিজে নিজে সেরে যায়। ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং সহজেই চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠুন। জীবন যাত্রার পরিবর্তন করুন ও লিভারের যত্ন নিন।