খাদ্য ও পানীয় Food & Drinksরক্ত পরীক্ষা Blood Test

বিলিরুবিন টেস্ট জন্ডিস পরীক্ষা। Blood for Bilirubin Test

বিলিরুবিন টেস্ট বলতে কী বোঝায়? What is Bilirubin Test?

রক্তের মধ্যে কতটা বিলিরুবিন Bilirubin আছে সেটা বিলিরুবিন টেস্টের সাহায্যে বোঝা যায়। এই টেস্টের সাহায্যে আমরা জন্ডিস, অ্যানিমিয়া Anemia এবং লিভার অর্থাৎ যকৃতের রোগ সম্পর্কে জানতে পারি। বিলিরুবিন হল হলদে রঙের এক প্রকার রঞ্জক পদার্থ। বয়স্ক লোহিত রক্ত কণিকা RBC ভেঙ্গে গিয়ে বিলিরুবিন উৎপন্ন হয়। আমাদের যৎকৃত অর্থাৎ লিভার এই বিলিরুবিন গ্রহণ করে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটিয়ে পিত্তে পরিণত করে। এর ফলে মলের মাধ্যমে এটি শরীরের বাইরে নির্গত হয়।

কেন বিলিরুবিন টেস্ট করা হয়? Why is bilirubin tested?

লিভার ডিসঅর্ডার Liver Disorder অর্থাৎ লিভারের রোগ Liver Disease, হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া Hemolytic Anemia ও সদ্যোজাত শিশুদের জন্ডিস Juvenile Jaundice রোগ সম্পর্কে জানার জন্য এই টেস্ট করা হয়।

কখন বিলিরুবিন টেস্ট করা হয়? When is the bilirubin test done?

যদি এমন কোন লক্ষণ দেখা যায় যাতে মনে হয় যে লিভার রোগাক্রান্ত হয়েছে বা লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তখন এই টেস্ট করার দরকার পড়ে। পিত্ত থলি বা পিত্তনালীতে বাধা জনিত কোন লক্ষণ দেখা গেলে, হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়ার কোনও রোগ লক্ষণ দেখা গেলে, এই টেস্ট করা হয়। এছাড়া সদ্যজাত শিশুদের জন্ডিস দেখা গেলে বা বড়দের জন্ডিস দেখা গেলে এই টেস্ট করতে হয়। ল্যাবরেটরিতে সাধারণত একসাথে অনেকগুলি টেস্ট করতে দেয়া হয়। লিভার সংক্রান্ত এই সকল টেস্টকে একসাথে লিভার ফাংশন টেস্ট বলা হয়। এই টেস্টগুলির মধ্যে বিলিরুবিন টেস্ট গুরুত্বপূর্ণ। যাদের অ্যালকোহল পানের অভ্যাস আছে তাদের, যারা ড্রাগ নেন তাদের, এই টেস্ট করা হয়। হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত হলে মাঝে মাঝে বিলিরুবিন টেস্ট করা উচিত। মূত্রের রং বাদামী হলে, বারে বারে বমি হলে, পেটে ব্যথা হলে, পেট ফুলে গেলে, শরীরে শক্তি না থাকলে, দিন দিন ওজন কমে গেলে, এই টেস্ট করা দরকার। এছাড়া সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য অর্থাৎ জেনারেল হেলথ চেক আপ করার সময়, অন্যান্য বিভিন্ন টেস্টের সাথে বিলিরুবিন টেস্ট করা হয়।

বিলিরুবিন টেস্টের জন্য রক্তের নমুনা সংগ্রহ। Collection of blood sample for bilirubin test.

বড়দের ক্ষেত্রে সাধারণত হাতের শিরা থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সদ্যোজাত শিশুদের, গোড়ালির মধ্যে সূচ বৃদ্ধ করে কয়েক ফোটা রক্তের সাহায্যে এই টেস্ট করা হয়। তবে বর্তমানে উন্নত দেশে, ত্বকের উপর ট্রান্সকিউটেনিয়াস বিলিরুবিন মিটার Transcutaneous Bilirubinometer নামক যন্ত্র স্থাপন করে, বিলিরুবিন পরীক্ষা করা হয়। এক্ষেত্রে সূচ-বিদ্ধ করার কোন প্রয়োজন হয় না।

বিলিরুবিন পরীক্ষার প্রস্তুতি। Preparation for Bilirubin Test.

সাধারণত 10 থেকে 12 ঘন্টা উপবাস করতে হয়। জল ছাড়া অন্য কোন খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করা উচিত নয়। এমনকি চা বা কফিও চলে না।

পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাখ্যা। Bilirubin Test Result.

রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে টোটাল বিলিরুবিনের পরিমাণ দেওয়া থাকে। টোটাল বিলিরুবিন হল দুই প্রকার বিলিরুবিনের যোগফল, আনকনজুগেটেড বা ইনডাইরেক্ট বিলিরুবিন এবং কনজুগেটেড বা ডাইরেক্ট বিলিরুবিন।

লোহিত রক্ত কণিকার আয়ু প্রায় একশো কুড়ি দিন। এরপর লোহিত রোহিত রক্ত কণিকা ভেঙ্গে গিয়ে আনকনজুগেটেড বিলিরুবিনে পরিণত হয়। এই আনকনজুগেটেড বিলিরুবিন রক্তের মধ্যে উপস্থিত অ্যালবুমিন নামক প্রোটিনের সাহায্যে লিভারে পৌঁছায় এবং রাসায়নিক ভাবে পরিবর্তিত হয়ে কনজুগেটেড বিলিরুবিনে পরিণত হয়। আনকনজুগেটেড বিলিরুবিন বিষাক্ত, কিন্তু কনজুগেটেড বিলিরুবিন বিষাক্ত নয় এবং এটি যকৃতের সাহায্যে খাদ্যনালীর মাধ্যমে মলের মধ্য দিয়ে শরীরের বাইরে নির্গত হয়। যদি রিপোর্ট দেখা যায় যে আনকনজুগেটেড বিলিরুবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তাহলে বুঝতে হবে যে রক্তকণিকা সময়ের আগে কোন কারনে ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে। এই ঘটনাকে হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া বলা হয়।

যকৃত অসুস্থ হলে, ঠিকমতো কাজ করতে না পারলে, বিলিরুবিন জলে দ্রবীভূত হওয়ার উপযোগী হতে পারে না। সেক্ষেত্রে লিভার ও রক্তে প্রচুর পরিমাণ বিলিরুবিন জমা হয়। এই অবস্থা হয়, ভাইরাস ঘটিত রোগ হেপাটাইটিস ও অ্যালকোহল পানে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে। কোন কোন ওষুধের পার্শপ্রতিক্রিয়ার ফলে, ও আরও কিছু রোগ যেমন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সমস্যা জনিত রোগ, ইত্যাদিতেও হতে পারে।

পিত্ত নালী বা পিত্ত থলিতে বাধার সৃষ্টি হলে বিলিরুবিন শরীরের বাইরে নির্গত হতে পারে না। সেক্ষেত্রে রক্তে বিলিরুবিন বৃদ্ধি পায়। সংক্ষেপে বলা যায় যে, আনকনুগেটেড বিলিরুবিন বৃদ্ধি পায় হিমালাইটিক বা পারনিশিয়াস অ্যানিমিয়াতে, রক্ত গ্রহণের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে, সিরোসিস অফ লিভার নামক রোগে অর্থাৎ লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে এবং গবলেট সিনড্রোম নামক বংশগত রোগে।

যদি কনজুগেটেড বিলিরুবিনের পরিমাণ আনকনজুগেটেড বিলিরুবিনের থেকে বেশি হয়ে যায়, তবে সেটা হওয়ার কারণ হলও, ভাইরাল হেপাটাইটিস, ড্রাগ রিয়াকশন, অ্যালকোহল পানে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ইত্যাদি। পিত্ত নালী বা পিত্তাশয়ে পাথর হলে, টিউমার দ্বারা বাধা পেলেও কনজুগেটেড বিলিরুবিন বৃদ্ধি পায়। বিলিরুবিনের পরিমাণ কম হলে সেটা সেটার তেমন কোন গুরুত্ব নেই।

নবজাতকদের বিলিরুবিনের পরিমাণ বেশি থাকলে সেটা নিজে নিজেই কিছুদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু বিলিরুবিনের পরিমাণ অত্যধিক বেশি হওয়া চিন্তার বিষয়। এক্ষেত্রে বিলিরুবিন বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করে যত্ন সহকারে চিকিৎসা করা প্রয়োজন। সদ্যজাতদের রক্তকণিকার অত্যধিক ভাঙনে বিলিরুবিন বৃদ্ধি পায়। আর এটা হতে পারে মা ও সন্তানের রক্তের গ্রুপ আলাদা হওয়ার কারণে, জন্মগত কোন ইনফেকশনের কারণে, জন্মের সময় অক্সিজেনের অভাব ঘটলে।

সাধারণ অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আনকনজুগেটেড বিলিরুবিন বৃদ্ধি পায়। কনজুগেটেড বিলিরুবিনের বৃদ্ধি, কম ক্ষেত্রে ঘটে। কেবলমাত্র পিত্ত নালী ও পিত্ত থলির মধ্যে বাধার সৃষ্টি হলে ঘটতে পারে।

বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা। Normal Level of Bilirubin.

ডাইরেক্ট অর্থাৎ কনজুগেটেড বিলিরুবিন-0.3 মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার অর্থাৎ 5.1 মাইক্রোমোল/ লিটার এর থেকে কম হওয়া বাঞ্ছনীয়।

টোটাল বিলিরুবিন-
0.1 থেকে 1.2 মিলিগ্রাম/ ডেসিলিটার অর্থাৎ 1.17 থেকে 25.5 মাইক্রোমোল/লিটার এর মধ্যে থাকা উচিত।

খেয়াল রাখতে হবে যে, পরীক্ষা পদ্ধতি উপর নরমাল রেঞ্জ সামান্য কম বা বেশি হতে পারে। সে কারণে রিপোর্টে লেখা নরমাল রেঞ্জ মেনে চলা সবথেকে ভালো।