প্রোজেস্টেরণ হরমোন টেস্ট: Progesterone Hormone Test:
প্রোজেস্টেরণ হরমোন টেস্ট: Progesterone Hormone Test:
প্রোজেস্টেরণ হল এমন একটি হরমোন যা মহিলাদের গর্ভধারণ করতে সাহায্য করে এবং গর্ভাবস্থায় দেহের কাজ স্বাভাবিক রাখে। প্রোজেস্টেরণ টেস্ট কখন এবং কেন করা হয় সেটা নিয়ে আলোচনা করা হল এই প্রতিবেদনে।
প্রোজেস্টেরণ পরীক্ষা কি? What is a Progesterone Test?
প্রোজেস্টেরণ পরীক্ষার সাহায্যে রক্তে প্রোজেস্টেরণ মাত্রা পরিমাপ করা হয়। গর্ভাবস্থায় প্রোজেস্টেরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রোজেস্টেরণ মহিলাদের শরীরকে গর্ভধারণ করার উপযোগী করে তোলে অর্থাৎ নিষিক্ত ডিম্বাণুর বৃদ্ধি ও বিকাশে সাহায্য করে। সন্তানের জন্মের পর স্তন থেকে দুগ্ধ উৎপাদনে সাহায্য করে এই হরমোন। প্রোজেস্টেরণ মহিলাদের মেনস্ট্রাল পিরিওড নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণত ডিম্ব স্ফোটনের সময় পর্যন্ত প্রোজেস্টেরণ মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং গর্ভধারণ না হলে প্রোজেস্টেরণের মাত্রা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। গর্ভাবস্থায় প্রোজেস্টেরণের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে প্রায় 10 গুন বেশি থাকে।
প্রোজেস্টেরণ পরীক্ষার উদ্দেশ্য: ( কখন এবং কেন?)Purpose of Progesterone Test:
গর্ভধারণ করতে কোন সমস্যা হলে আপনার ডাক্তার রক্তে প্রোজেস্টেরণের মাত্রা পরীক্ষার পরামর্শ দিতে পারেন। ডিম্বাশয় থেকে ডিম্ব স্ফোটনে কোন সমস্যা আছে কিনা দেখতে এই পরীক্ষা করা হয়। বন্ধ্যত্বের কারণ খুঁজে পেতে, অন্যান্য বেশ কয়েকটি হরমোনের সাথে প্রোজেস্টেরণ হরমোনও পরীক্ষা করা হয়।
গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভপাত হলে, গর্ভপাতের কারণ জানতে এবং এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি নামক অস্বাভাবিক গর্ভাবস্থা সনাক্ত করতে এই টেস্ট করা হয়। হাই রিস্ক প্রেগনেন্সির ক্ষেত্রে, প্লাসেন্টা ও ভ্রূণের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে এই টেস্ট করার প্রয়োজন হয়। গর্ভাবস্থায় জরায়ু থেকে রক্তপাত হলে, রক্তপাতের কারণ নির্ণয় করতে প্রোজেস্টেরণ টেস্ট করা হয়।
প্রোজেস্টেরণ টেস্টের প্রস্তুতি: Preparation for Progesterone Test:
রক্ত বা লালা রসের নমুনা ব্যবহার করে প্রোজেস্টেরণ টেস্ট করা যেতে পারে। সাধারণত তেমন কোন বিশেষ প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ে না। খালি পেটে বা ভর্তি পেটে রক্ত বা লালা রসের নমুনা দেওয়া যায়। তবে বিশেষ কিছু ওষুধ যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণের পিল এবং প্রোজেস্টেরণ সম্পূরক গ্রহণ করলে সেটা অবশ্যই আপনার ডাক্তার ও ল্যাবরেটরিতে জানান। এগুলি পরীক্ষার ফলাফল কে প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়া আপনার ডাক্তার বিশেষ কিছু ওষুধ বন্ধ করার কথা বলতে পারেন। মেনস্ট্রাল পিরিয়ডের কোন দিন রক্ত বা লালার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে, সেটা অবশ্যই লিপিবদ্ধ করা দরকার।
প্রোজেস্টেরণ টেস্টের জন্য জন্য রক্তের নমুনা সংগ্রহ: Collection of Blood Sample for Progesterone Test:
সাধারণত হাতের শিরা থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বাহুতে একটি রাবার ব্যান্ড বাঁধা হয়, ফলের শিরা ফুলে ওঠে। এরপর অ্যান্টিসেপটিক লোশন দিয়ে সূচ বিদ্ধ করার স্থানটি জীবাণুমুক্ত করা হয়। এবার সূচ বিদ্ধ করে, সিরিঞ্জের সাহায্যে অল্প পরিমাণে রক্ত সংগ্রহ করা হয়।
রক্ত সংগ্রহ করা হয় গেলে রক্তপাত বন্ধ করার জন্য একটি ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দেওয়া হয়। একজন নার্স বা ল্যাব টেকনিশিয়ান এই কাজটি সম্পাদন করেন।
রক্ত সংগ্রহ করার সময় তেমন কোন বিপদের সম্ভাবনা নেই। সূচ বিদ্ধ করা স্থানে সামান্য ব্যথা হতে পারে বা ত্বকের নীচে রক্ত জমে হেমাটোমা হতে পারে।
লালা রসের নমুনা সংগ্রহ করার জন্য বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। দিনে একাধিকবার লালা রসের নমুনা সংগ্রহ করা দরকার। লালা রস সংগ্রহ করার আগের দিন রাত্রে কোন ক্রিম বা সাবান ব্যবহার করা উচিত নয়। কোন নেশা করার বস্তু, অ্যালকোহল, চা, কফি ইত্যাদি গ্রহণ করা নিষেধ। লালা রস সংগ্রহ করার 30 মিনিট আগে থেকে কোন খাদ্য গ্রহণ করা চলবে না বা ব্রাশ করা চলবে না। নমুনা সংগ্রহ করার 10 মিনিট আগে পরিষ্কার জল দিয়ে মুখ ধুতে হবে। এবার লালা রস সংগ্রহ করার নির্দিষ্ট পাত্রে লালা রস সংগ্রহ করতে হবে। সংগ্রহ করা নমুনা রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করতে হবে।
প্রোজেস্টেরণের স্বাভাবিক মাত্রা: Normal Level of Progesterone:
সাধারণত রক্তে প্রোজেস্টেরণের মাত্রা ন্যানো গ্রাম প্রতি মিলি লিটার হিসেবে প্রকাশ করা হয়। পরীক্ষার ফলাফল দেখার সময় মাসিক ঋতুচক্রের কোন দিন নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে সেটা অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।
মাসিক চক্রের শুরুতে | 0.83 ng/mL (ন্যানো গ্রাম/মিলি লিটার) বা তার কম। |
মাসিক চক্রের মাঝখানে | 1.8 – 24 ng/mL (ন্যানো গ্রাম/মিলি লিটার)। |
গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকের সময় | 11 – 44 ng/mL (ন্যানো গ্রাম/মিলি লিটার)। |
গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের সময় | 25 – 83 ng/mL (ন্যানো গ্রাম/মিলি লিটার)। |
গর্ব অবস্থায় তৃতীয় ত্রৈমাসিকের সময় | 58 – 214 ng/mL (ন্যানো গ্রাম/মিলি লিটার)। |
মেনোপজের পর | 0.2 ng/mL (ন্যানো গ্রাম/মিলি লিটার) বা তার কম। |
স্বাভাবিক মাত্রা পরীক্ষা পদ্ধতি ও ল্যাবরেটরি অনুসারে সামান্য পরিবর্তনশীল। একারণে রিপোর্টে লেখা নরমাল লেভেল মেনে চলা সবথেকে ভাল।
প্রোজেস্টেরণ পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাখ্যা: What do the Progesterone Test Result mean?
প্রোজেস্টেরণের মাত্রা বেশ কিছুটা ওঠানামা করতে পারে। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু প্রোজেস্টেরণের মাত্রা অস্বাভাবিক কম বা বেশি হলে সেটা কোন সমস্যার কারণে হতে পারে।
গর্ভাবস্থা ছাড়াও প্রোজেস্টেরণের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে, ওভারিয়ান ক্যান্সার, অ্যাড্রিনাল ক্যান্সার, জন্মগত অ্যাড্রিনাল হাইপারপ্লেসিয়া ইত্যাদি রোগে।
প্রোজেস্টেরণের মাত্রা কম হতে পারে, পিরিয়ড না হলে, ডিম্ব স্ফোটন করতে সমস্যা হলে, এক্টোপিক গর্ভাবস্থা নামক সমস্যায়। এছাড়া গর্ভপাত হলে বা ভ্রূণের মৃত্যু হলে প্রোজেস্টেরণের মাত্রা কম হয়।
আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে প্রোজেস্টেরণের অস্বাভাবিক মাত্রা দেখা যেতে পারে। গর্ভে যমজ বাচ্চা থাকলে প্রোজেস্টেরণের মাত্রা বৃদ্ধি ঘটে। দেহে মহিলা হরমোনের ঘাটতি থাকলে প্রোজেস্টেরণের মাত্রা কম হতে পারে।