Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাখাদ্য ও পানীয় Food & Drinksস্বাস্থ্যকর চুল Healthy Hair

ভিটামিন E সমৃদ্ধ খাবার এবং এর আশ্চর্যজনক উপকারিতা: Vitamin E Rich Food And It’s Amazing Benefits:

আমরা সবাই জানি যে ভিটামিন E আমাদের জন্য খুব উপকারী। ভিটামিন E আমাদের শরীরকে অক্সিডেটিভ ট্রেস থেকে রক্ষা করে এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটায়। ভিটামিন E সমৃদ্ধ খাবার এবং এর আশ্চর্যজনক উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হল এই প্রতিবেদনে।

ভিটামিন E হল ফ্যাটে দ্রবীভূত একপ্রকার ভিটামিন যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। ভিটামিন E শরীরকে ফ্রি র‍্যাডিকেলস এর হাত থেকে রক্ষা করে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন E গ্রহণ করলে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এছাড়া হার্টের রোগের সম্ভাবনা কমায় ভিটামিন E। খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন E থাকলে লিভারের স্বাস্থ্য ভাল থাকে ও ফ্যাটি লিভার রোগের সম্ভাবনা কমে।

চোখের প্রধান দুটি রোগ ছানি পরা এবং ম্যাককুলার ডিজেনারেশন (Macular Degeneration)। ভিটামিন E, চোখের রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, ম্যাকুলার ট্রেস কমায় এবং চোখে ছানি পড়তে বাধা দেয়। আমাদের ভাবনা চিন্তার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ভিটামিন E। এছাড়া এই ভিটামিন মানসিক কার্যকলাপ ও মনে রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও বেশ উপকারী।

ভিটামিন E-র আর একটি উল্লেখযোগ্য কাজ হল ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করা। সূর্যের আলট্রা-ভায়োলেট আলো আমাদের ত্বকের ক্ষতি করে। এই ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে ভিটামিন E যুক্ত সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করা হয়। ত্বকের ক্ষত সারাতে ও ব্যথা উপশম করতে এই ভিটামিনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

14 বছর বা তার বেশি বয়সী পুরুষ ও মহিলাদের প্রতিদিন 15 মিলিগ্রাম ভিটামিন E গ্রহণ করা প্রয়োজন। স্তন দানকারী মহিলাদের প্রতিদিন 18 মিলিগ্রাম ভিটামিন E গ্রহণ করা দরকার। তাপ পেলে ভিটামিন E-র কার্যকারিতা কমে যায়, এ কারণে তাজা, কাঁচা, ভিটামিন E যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা ভাল। 

প্রতি 100 গ্রাম আমন্ড বাদামে প্রায় 25 মিলিগ্রাম ভিটামিন E থাকে। এছাড়া আমন্ডে থাকে প্রোটিন, ফাইবার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। একারণে ভিটামিন E-র চাহিদা পূরণে আমন্ড গ্রহণ করা বেশ ভাল। ভাজা আমন্ড বা আমন্ডের দুধ পান করা যেতে পারে। তবে সবচেয়ে ভাল হল জলে ভিজিয়ে রাখা আমন্ড গ্রহণ করা।

বেশিভাগ বীজ ভিটামিন E-র দারুণ উৎস। তবে সূর্যমুখীর বীজকে ভিটামিন E-র ভাণ্ডার বলা যেতে পারে। 100 গ্রাম সূর্যমুখীর বীজে প্রায় 35 মিলিগ্রাম ভিটামিন E থাকে। এছাড়া সূর্যমুখীর বীজে থাকে ফাইবার, প্রোটিন, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি। সূর্যমুখীর তেলে ভিটামিন E-র পরিমাণ বেশ কিছুটা কম থাকে। তবুও সূর্যমুখী তেল গ্রহণ করলে যথেষ্ট ভিটামিন Eই পাওয়া যায়।

পালং শাকের মধ্যে ভিটামিন, খনিজ উপাদান, ফাইবার ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান থাকে। 100 গ্রাম পালং শাকে প্রায় 2 মিলিগ্রাম ভিটামিন E থাকে। পালং শাক রান্না করে বা কাঁচা স্যলাড হিসাবে খাওয়া যেতে পারে।

ব্রকলির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও ভিটামিন E থাকে। ব্রকলি এমন একটি সবজি যার মধ্যে ক্যান্সার বিরোধী ও প্রদাহ বিরোধী উপাদান থাকে। এছাড়া ব্রকলি আমাদের দেহে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও সাহায্য করে।  ভিটামিন E-র অভাব মেটাতে অবশ্যই ব্রকলিকে খাদ্য তালিকা স্থান দিতে হবে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ভিটামিন E-র ভাণ্ডার হল চিনা বাদাম। 100 গ্রাম চিনাবাদামে প্রায় 5 মিলিগ্রাম ভিটামিন E থাকে। এছাড়া চিনা বাদামে আছে প্রোটিন, ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন B কমপ্লেক্স ইত্যাদি। হার্টের রোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্যকারী রেসভেরাট্রল (Resveratrol) থাকে চিনা বাদামে। একারণে অবশ্যই চীনা বাদাম গ্রহণ করতে হবে।

রান্নায় ব্যবহার করা বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিজ্জ তেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন E থাকে। সরষের তেল, সূর্যমুখীর তেল, রাইস ব্র্যান অয়েল, অলিভ অয়েল, কুসুম বীজের তেল ইত্যাদির মধ্যে ভিটামিন E ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে।

ক্যাপসিকাম এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যা রক্ত উৎপাদনে সাহায্য করে। এছাড়া ক্যাপসিকামে থাকা ক্যাপসিকাম নামক জৈব রাসায়নিক উপাদান রক্তনালীর স্বাস্থ্য ভাল রাখে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়া ক্যাপসিকামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন E থাকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে প্রায় 7 গ্রাম ক্যাপসিকামে 2 মিলিগ্রাম ভিটামিন E থাকে।

আম হল সুস্বাদু, মিষ্টি, রসালো ফল যা সারা বিশ্বে সমাদৃত। আম, ভিটামিনের ভাণ্ডার। আমের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন A, B, C এবং E থাকে। এছাড়া থাকে কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, তামা ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান। 250 গ্রাম আমের মধ্যে প্রায় 1.85 মিলিগ্রাম ভিটামিন E থাকে। তাই ভিটামিনের অভাব মেটাতে আম গ্রহণ করতে হবে।

বেরি জাতীয় ফল যেমন জাম, আঙ্গুর, কুল, আমলকী, স্ট্রবেরি ইত্যাদি ভিটামিন E-র দারুণ উৎস। জলখাবারে এই ধরনের বেরি গ্রহণ করলে স্বাদ বৃদ্ধের সাথে সাথে ভিটামিন E-র দৈনিক চাহিদাও মেটে।

মাছ ও ডিমের মধ্যে থাকে ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড। ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করে। ভিটামিন E ওমেগা 3 ফাটি অ্যাসিডের কাজে সাহায্য করে। চর্বিযুক্ত মাছ ও ডিমের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন E থাকে। তাই খাদ্য তালিকায় চর্বিযুক্ত মাছ ও ডিমকে স্থান দিতে হবে।