রক্ত পরীক্ষা Blood Testল্যাব টেস্ট Lab Test

আন্টি – মুলেরিয়ান হরমোন টেস্ট: গুরুত্ব ও স্বাভাবিক মাত্রা। Anti – Mullerian Hormone (AMH) Test: Uses and Normal Values.

অ্যান্টি – মুলেরিয়ান হরমোন মহিলাদের ডিম্বাশয় থেকে উৎপন্ন হয়। যদিও পুরুষদের দেহে এই হরমোন উৎপাদিত হয়, তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে এই হরমোন পরীক্ষা করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রক্তে অ্যান্টি – মুলেরিয়ান হরমোন অর্থাৎ AMH এর মাত্রা পরীক্ষা করে মহিলাদের ডিম্বাশয় কতগুলি ডিম্ব আছে সেটা বোঝা যায়। সন্তান ধারণে কোন সমস্যা হলে এই হরমোন টেস্ট করে সমস্যা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে। অ্যান্টি – মুলেরিয়ান হরমোন টেস্ট এর গুরুত্ব ও স্বাভাবিক মাত্রা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

গর্ভে থাকাকালীন শিশুদের যৌন অঙ্গের বিকাশে মুখ্য ভূমিকা পালন করে অ্যান্টি – মুলেরিয়ান হরমোন। পুরুষ শিশুদের মধ্যে AMH এর মাত্রা বেশি থাকে এবং এর ফলে পুরুষদের মধ্যে নারী প্রজনন অঙ্গের বিকাশ হয় না। মহিলা শিশুদের মধ্যে অল্প পরিমাণে AMH উপস্থিত থাকে এবং বৃদ্ধি ও বিকাশের সাহায্য করে।

সাধারণত প্রতিটি মহিলা ডিম্বাশয়ের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিম্ব নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।  এই ডিমগুলি সম্পূর্ণ জীবনকাল ধরে ব্যবহৃত হয়। অ্যান্টি – মুলেরিয়ান হরমোন পরীক্ষা করে ডিম্বাশয়ে কতগুলি ডিম অবশিষ্ট আছে সেটা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এই হরমোনের মাত্রা কম হলে বুঝতে হবে যে ডিম্বাশয় সঞ্চিত ডিমের সংখ্যা কমে গিয়েছে। তবে এই হরমোন পরীক্ষা করে ডিমের স্বাস্থ্য সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য জানা যায় না অর্থাৎ ডিমগুলি উর্বর হতে পারে আবার নাও হতে পারে।

গর্ভধারণ করতে কোন সমস্যা হলে এই টেস্ট করতে দেওয়া হয়। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের কোন লক্ষণ দেখা গেলে যেমন, অনিয়মিত মাসিক, অত্যধিক ব্রণ, মুখে চুলের বৃদ্ধি, ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি দেখা গেলে এই হরমোন টেস্ট করা দরকার। যদিও পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের তেমন কোন প্রতিকার নেই, তবে চিকিৎসা করালে ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন করে বেশ ভাল থাকা যায়। এছাড়া ডিম্বাশয়ে টিউমার হয়েছে কিনা জানার জন্য এই হরমোন টেস্ট করা হয়।

হাতের শিরা থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বাহূতে একটি রাবার ব্যান্ড বাঁধা হয় এবং সিরিঞ্জের সাহায্যে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। রক্ত সংগ্রহ করার সময় তেমন কোন বিপদের সম্ভাবনা নেই। সুচ বিদ্ধ করা স্থানে সামান্য ব্যথা হতে পারে বা ত্বকের নিচে রক্ত জমে হেমাটোমা হতে পারে।

অ্যান্টি – মুলেরিয়ান হরমোন টেস্টের জন্য তেমন কোন প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ে না। যেকোন সময় রক্তের নমুনা দেওয়া যেতে পারে। অনাহারে থাকার কোন প্রয়োজন নেই।

বয়স অনুসারে AMH এর মাত্রা পরিবর্তিত হয়। মহিলাদের মধ্যে AMH এর মাত্রা বয়ঃসন্ধিকালে বাড়তে শুরু করে এবং সর্বোচ্চ মাত্রা দেখা যায় 25 বছর বয়সে। এরপর স্বাভাবিকভাবে ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

রক্তে AMH এর মাত্রা 1.0 ন্যানো-গ্রাম/মিলিলিটার থেকে 3.0 ন্যানো-গ্রাম/মিলিলিটারের মধ্যে হলে স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়।

পরীক্ষার ফলাফল ল্যাবরেটরি ও পরীক্ষা পদ্ধতির উপর সামান্য পরিবর্তনশীল। রিপোর্টে উল্লেখ করা নরমাল লেভেল মেনে চলা সবথেকে ভাল।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে AMH এর মাত্রা কমে যায়। বয়স অনুসারে AMH এর আদর্শ মাত্রা নিয়ে আলোচনা করা হল:-


মহিলাদের রক্তে AMH এর মাত্রা কম হলে ডিম্বাশয়ের মধ্যে ডিমের সংখ্যা কম আছে বলে মনে করা হয়। তবে নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নিতে আরও কিছু পরীক্ষা করা প্রয়োজন। AMH এর মাত্রা বেশি হলে ডিম্বাশয়ের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিম্বাণু উপস্থিত আছে বলা যেতে পারে।

AMH এর উচ্চমাত্রা সব সময় ভাল নাও হতে পারে। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে AMH এর মাত্রা বেশি হতে পারে।

পুরুষদের যৌনাঙ্গের বিকাশ অস্বাভাবিক হলে AMH এর মাত্রা দেখে বেশ কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। পুরুষ শিশুদের দেহে পর্যাপ্ত AMH না থাকলে অণ্ডকোষের বিকাশ ব্যাহত হয়। পুরুষ শিশুদের দেহে বয়ঃসন্ধি শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত AMH এর মাত্রা বেশি থাকে।

মহিলাদের ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার হলে বা টিউমার হলে রক্তে AMH এর মাত্রা বেশি হতে পারে। তবে বেশি হবেই এটা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না।

AMH টেস্টের সাহায্যে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। গর্ভধারণের সমস্যা সমাধানে এই টেস্টের গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য। গর্ভধারণের পরিকল্পনা করতে এই টেস্ট অবশ্যই করা দরকার।

labtestonline.org, healthline.com, yashodahospitals.com, carehospitals.com, my.clevelandclinic.org, etc