Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাখাদ্য ও পানীয় Food & Drinksরোগ ও ব্যাধি Health Condition

মলদ্বারে চুলকানি কেন হয়? প্রতিকার কি? Anal Itching: Cause and Treatment.

মলদ্বারে চুলকানি হল একটি অস্বস্তিকর সাধারণ সমস্যা। আমরা অনেকে নিজেরাই বিভিন্ন ধরনের ক্রিম বা মলম ব্যবহার করে এই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করি। তবে অনেক সময় এই সমস্যা জটিল কোন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। এই প্রতিবেদনে মলদ্বারে চুলকানির কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

মলদ্বারের চুলকানি হল এমন একটি অবস্থা যেখানে মলদ্বারের চারপাশে তীব্র চুলকানি হয়। মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের এবং 40 বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। রাত্রে মলদ্বারে চুলকানি হলে সেটা খুব বিরক্তিকর। এই সমস্যা আমাদের জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করতে পারে। 

মলদ্বারে চুলকানি প্রধানত দুই প্রকার। কিছু ক্ষেত্রে মলদ্বারে চুলকানির তেমন কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার কিছু ক্ষেত্রে জীবাণুর সংক্রমণ, চর্মরোগ বা শরীরের কোন রোগব্যাধি জনিত কারণে মলদ্বারে চুলকানি হতে পারে। বিভিন্ন লোশন, সাবান, ক্রিম ইত্যাদি থেকে অ্যালার্জি হলে মলদ্বার চুলকাতে পারে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে তাদের বা ডায়রিয়া হলেও মলদ্বার চুলকায়।

আমরা যা খায় ও পান করি, সেগুলিও মলদ্বারে চুলকানির কারণ হতে পারে। দুগ্ধজাত পণ্য, সোডা যুক্ত ঠাণ্ডা পানীয়, চা, কফি, অ্যাসিডিক মসলাদার খাবার ইত্যাদি থেকে মলদ্বারে চুলকানি হতে পারে।

আমাদের অন্তর্বাসের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। টাইট অন্তর্বাস বা টাইট প্যান্ট মলদ্বারের চারপাশে আর্দ্রতা ও তাপ বৃদ্ধি করতে পারে, ফলে চুলকানি হতে পারে।

মলদ্বারের চুলকানি অন্যান্য কারণগুলি হল;

মলদ্বারে চুলকানির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ছত্রাকের সংক্রমণ। ক্যানডিডা নামক ছত্রাক মলদ্বার, যোনি, লিঙ্গ ইত্যাদি স্থানে সংক্রমণ ঘটালে তীব্র চুলকানি হয়। এই ধরনের সংক্রমণে ত্বক বিবর্ণ হয়ে যায়, ফুলে যায় ও ছোট ছোট কাটা ফাটল সৃষ্টি হতে পারে।

মলদ্বারের শিরা ফুলে গিয়ে তার মধ্যে অতিরিক্ত রক্ত জমে হেমোরয়েড বা অর্শ্ব রোগ হতে পারে। অর্শ্ব রোগ হলে মলত্যাগের সময় রক্তপাত হয় ও মলদ্বার জ্বালা করে। হেমোরয়েড বা অর্শ্ব হলে মলদ্বারে চুলকানি হতে পারে। এছাড়া মলদ্বারের আরেকটি রোগ হল ফিসার। এক্ষেত্রে মলদ্বারের ত্বক ফেটে যায় ও অনেক সময় ইনফেকশন হয়। ফিসার হলে মলদ্বার চুলকায়। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে ও মলত্যাগের সময় বেশি চাপ প্রয়োগ করলে এই রোগ হতে পারে।

HPV অর্থাৎ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস খুব সাধারণ একটি ভাইরাস যা যৌনাঙ্গের পাশাপাশি মলদ্বারে সংক্রমণ ঘটায়। এই ভাইরাসের সংক্রমণে অনেক সময় ছোট ছোট আঁচিল সৃষ্টি হয়। আঁচলে আঘাত লাগলে রক্তপাত হয়, অস্বস্তি ও জ্বালাপোড়া হয়। এছাড়া অনেক সময় চুলকানিও হতে পারে।

কুচো কৃমি বা পিন ওয়ার্ম-এর সংক্রমণ খুব সাধারণ একটি সমস্যা। কুচো কৃমি মানুষের অন্ত্রে বসবাস করে এবং রাত্রে মলদ্বার দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে মলদ্বারের চারপাশের ত্বকে ডিম পাড়ে, ফলে ত্বক চুলকায়। মলদ্বারে চুলকানির অন্যতম প্রধান কারণ হল কুচো কৃমি বা পিন ওয়ার্ম-এর সংক্রমণ।

মলদ্বারের চুলকানির সমস্যা হলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। রোগের কারণ সনাক্ত করার জন্য আপনার চিকিৎসক কিছু শারীরিক পরীক্ষা করতে পারেন। চর্মরোগ হয়ে থাকলে ত্বকের রং ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখবেন এবং কোন ফুসকুড়ি বা ক্ষত আছে কিনা সেটাও দেখবেন। এছাড়া বেশ কিছু প্রশ্ন করতে পারেন যেমন; কোন ওষুধ খান কিনা, অ্যালার্জির সমস্যা আছে কিনা, কী ধরনের খাবার খান, কোন সাবান ব্যবহার করেন ইত্যাদি। প্রয়োজনে একজন স্কিন স্পেশালিস্ট এর পরামর্শ নিতে বলতে পারেন।

যাদের হেমোরয়েড বা ফিসারের সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে একজন সার্জেনের পরামর্শ নিতে হবে। পেটে কৃমি আছে কিনা জানার জন্য মলের RE টেস্ট বা টেপ টেস্ট করতে হবে। মলদ্বারে পরজীবী বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ সনাক্ত করার জন্য কটন সোয়াবের সাহায্যে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া একজিমা বা অ্যালার্জির সমস্যা সনাক্ত করার জন্য প্যাচ টেস্ট করার প্রয়োজন হতে পারে।

প্রাথমিকভাবে মলদ্বারে চুলকানির সমস্যা দূর করার জন্য স্বাস্থ্যবিধির দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। মলত্যাগের পর মলদ্বার ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে এবং ভালো করে মুছে শুকিয়ে নিতে হবে। এবার প্রয়োজনে ওষুধ বিহীন ট্যালকম পাউডার লাগানো যেতে পারে।

সমস্যা জটিল হলে বেশ কিছু ওভার দা কাউন্টার ক্রিম বা মলম ব্যবহার করা যেতে পারে। সাধারণত স্টেরয়েড যুক্ত ক্রিম ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের ক্রিম কেনার জন্য প্রেসক্রিপশনের প্রয়োজন হয় না। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে এই ধরনের ক্রিম বেশ ভালো কাজ করে। মলদ্বারে চুলকানির কারণ যদি ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাসের সংক্রমণ হয়, সেক্ষেত্রে স্টেরয়েড যুক্ত, অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। কৃমির সমস্যা থেকে চুলকানি হলে অবশ্যই নিয়ম মেনে কৃমির ওষুধ খেতে হবে।

এই সকল চিকিৎসায় কাজ না হলে আপনার চিকিৎসক মলদ্বারে মিথিলিন ব্লু ইনজেকশন দিয়ে চিকিৎসা করতে পারেন। মিথিলিন ব্লু মলদ্বারের স্নায়ু প্রান্ত গুলিকে অকেজো করে দিয়ে চুলকানি কমায়।

বেশ কিছু ঘরোয়া প্রতিকার মলদ্বারের চুলকানি উপশমে সাহায্য করতে পারে। টয়লেট পেপার ব্যবহার না করা ভালো। জল দিয়ে মলদ্বার পরিষ্কার করা সব থেকে ভালো। তবে উপায় না থাকলে রং-বিহীন ও গন্ধহীন টয়লেট পেপার ব্যবহার করতে হবে। সুগন্ধযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ সাবানে থাকা এই সকল রাসায়নিক থেকে অ্যালার্জি হতে পারে।

কটন অর্থাৎ সুতির অন্তর্বাস পড়া উচিত। এই ধরনের অন্তর্বাস আর্দ্রতা শোষণ করে নেয়, ফলে ত্বক শুষ্ক থাকে। অন্তর্বাস একাধিকবার পড়া উচিত নয়। অন্তর্বাস পরিষ্কার করার জন্য গন্ধ-বিহীন ডিটারজেন্ট ব্যবহার করতে হবে।

দুগ্ধজাত পানীয়, কার্বনেটেড পানীয়, ক্যাফিন যুক্ত পানীয়, এড়িয়ে চলা দরকার। কারণ এগুলি থেকে মলদ্বারে চুলকানি হতে পারে। এছাড়া মসলাদার খাবারও কম খেতে হবে। ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য লিভারের যত্ন নিন। পোশাকের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। ঢিলেঢালা, শুকনো, আরামদায়ক পোশাক পরিধান করা উচিত।

Cleveland Clinic, Mayo Clinic, Medical News Today, WebMd,