স্বাভাবিকভাবে দুশ্চিন্তা কমায় এই 9টি খাবার: Foods for Anxiety [Backed by Science]
উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা হল সবচেয়ে প্রচলিত একটি মানসিক সমস্যা। সাধারণ উদ্বেগ, সামাজিক উদ্বেগ, ফোবিয়া অর্থাৎ কোন কিছুর প্রতি ভয় ইত্যাদি আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, তবে ব্যায়াম, প্রাণায়াম, যোগাসন ইত্যাদির মাধ্যমে উদ্বেগের লক্ষণগুলি কমতে পারে। এছাড়া বেশ কিছু খাবারও আমাদের দুশ্চিন্তা কমাতে পারে। এই প্রতিবেদনে স্বাভাবিকভাবে দুশ্চিন্তা কমায় এমন 9টি খাবার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
দুশ্চিন্তা কমায় এই খাবারগুলি: Foods for Anxiety:
সামুদ্রিক মাছ: Sea Fish:
উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা কমাতে সামুদ্রিক মাছ বেশ উপকারী হতে পারে। সামুদ্রিক মাছে আছে ভিটামিন D, ওমেগা-3-ফ্যাটি অ্যাসিড, EPA, DHA ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান। এই সকল পুষ্টি উপাদান গুলি মস্তিষ্কের মধ্যে ডোপামিন ও সেরোটোনিন ইত্যাদি নিউরোহরমোনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে আমাদের মন শান্ত ও আরামদায়ক থাকে। বিশেষ করে EPA ও DHA সমৃদ্ধ খাবার উদ্বেগের হার কমিয়ে দেয়। এছাড়া এগুলি প্রদাহ কমায় ও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার লক্ষণগুলি হ্রাস করতে ভিটামিন D-এর ভূমিকা ইতিবাচক। 2020 সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে ভিটামিন D মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে। আর একটি বিশেষ গবেষণায় জানা গিয়েছে যে সামুদ্রিক মাছ হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
হলুদ: Turmeric:
হলুদের মধ্যে থাকে কারকিউমিন। এই কারকিউমিন মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় ও উদ্বেগজনিত সমস্যা প্রতিরোধ করে। কারকিউমিন উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত ও প্রদাহবিরোধী, তাই কারকিউমিন অক্সিডেটিভ ট্রেস কমিয়ে মস্তিষ্কের ক্ষতি প্রতিরোধ করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে কারকিউমিন আলফা লিনোলিক অ্যাসিড কে DHA-তে রূপান্তরিত করতে পারে, ফলে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কারকিউমিন দুশ্চিন্তা কমাতে পারে, এটা গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত। একারণে খাদ্যে অবশ্যই হলুদ ব্যবহার করতে হবে এবং কারকিউমিনের শোষণ বাড়ানোর জন্য হলুদের সাথে গোলমরিচ ব্যবহার করতে হবে।
ডার্ক চকলেট: Derk Chocolate:
ডার্ক চকলেট উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করতে পারে। ডার্ক চকলেটের মধ্যে থাকে ফ্ল্যাভোনল, এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে ডার্ক চকলেটে থাকা ফ্ল্যাভোনল স্নায়ুর স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় ফ্ল্যাভোনল। এর ফলে আমরা মানসিক চাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারি, উদ্বেগ কমে ও মেজাজ ভালো থাকে।
চিয়া বীজ: Chia Seeds:
পুষ্টিবিদরা উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য চিয়া বীজ ব্যবহার করার কথা বলেন। চিয়া বীজে ওমেগা-3-ফ্যাটি অ্যাসিড, জিংক, ট্রিপটোফ্যান ইত্যাদি উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। এগুলি উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা কমাতে ও মেজাজ ভালো রাখতে সহায়তা করে। জিঙ্ক স্নায়ুর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে ও ট্রিপটোফ্যান, সেরোটোনিন ইত্যাদি উৎপাদনে সাহায্য করে। সেরোটোনিন হল সুখের হরমোন, এটি আমাদের তৃপ্তিদায়ক অনুভূতি দেয়। এছাড়া চিয়া বীজে ম্যাগনেসিয়ামও বেশি থাকে, ফলে শরীর শিথিল হয় ও ঘুম ভালো হয়।
গ্রিন টি: Green Tea:
গ্রিন টি তে থাকে L-থিয়ানিন নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে ও উদ্বেগ কমাতে বেশ কার্যকর। L-থিয়ানিন কর্টিসোল নামক ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমায় ও স্নায়ুগুলিকে অতিরিক্ত উত্তেজিত হতে বাধা দেয়। এছাড়া L-থিয়ানিন ডোপামিন ও সেরোটোনিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে, ফলে মানসিক চাপ কমে। গ্রিন টিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি মনকে শান্ত করতে ও দুশ্চিন্তা দূর করতে সাহায্য করে।
আমন্ড:Almond:
আমন্ড সহ যেকোনো ধরনের বাদাম মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে দারুণ কার্যকরী। বাদামের মধ্যে আছে স্বাস্থ্যকর চর্বি ও ভিটামিন E, এগুলি মস্তিষ্কের পুষ্টির জন্য বেশ ভালো। বেশ কিছু গবেষণায় জানা গিয়েছে যে বাদাম প্রদাহ কমায় ও উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা ইত্যাদিও কমায়। এছাড়া বাদাম খেলে আমাদের মেজাজ ফুরফুরে থাকে, তবে এ বিষয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে।
ব্লুবেরি: Blueberries:
ব্লুবেরি ভিটামিন C ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভান্ডার। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে প্রতিদিন ব্লুবেরি গ্রহণ করলে বিষন্নতার লক্ষণগুলি কমে। ব্লুবেরিতে থাকা যৌগগুলি অক্সিডেটিভ ট্রেস কমায় ও উদ্বেগ কমায়। একারণে ব্লুবেরি বা বেরি জাতীয় ফল যেমন স্ট্রবেরি,জাম, আঙ্গুর ইত্যাদি অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে।
ডিম: Egg:
ট্রিপটোফ্যানের একটি চমৎকার উৎস হল ডিম। এই ট্রিপটোফ্যান উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা কমাতে উপকারী হতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ না করলে উদ্বেগ বাড়তে পারে। ডিমে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন D থাকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে ভিটামিন D এর অভাবে বিষন্নতা ও উদ্বেগের সমস্যা হতে পারে। তাই ডিম গ্রহণ করলে উদ্বেগের সমস্যা কমতে পারে।
দই: Yogurt:
দই এর মধ্যে থাকে প্রোবায়োটিকস। প্রোবায়োটিক হল উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। পেটের সাথে মস্তিষ্কের খুব নিকট সম্পর্ক। পেটের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যার পেট যত ভালো তার মানসিক স্বাস্থ্য তত ভালো থাকে। দইয়ের মধ্যে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া প্রদাহ হ্রাস করে ও সেরোটোনিনের মত নিউরোট্রান্সমিটারের উৎপাদন বৃদ্ধি করে মেজাজ ভালো রাখে।
তথ্যসূত্র:
MedicalNewsToday, Healthline.com, Cleveland Clinic, WebMd etc.