রক্ত পরীক্ষা Blood Testল্যাব টেস্ট Lab Test

অ্যালকালাইন ফসফাটেজ টেস্ট Alkaline Phosphatase Test:

অ্যালকালাইন ফসফাটেজ টেস্ট Alkaline Phosphatase Test:

আমাদের লিভার অর্থাৎ যকৃত সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা সেটা জানতে অ্যালকালাইন ফসফাটেজ টেস্ট করা হয়। পিত্ত থলি অর্থাৎ গল ব্লাডারের মধ্যে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা, অগ্ন্যাশয় কেমন আছে, হজম ঠিকমত হচ্ছে কিনা, সেটা জানতে অ্যালকালাইন ফসফাটেজ টেস্ট করার প্রয়োজন হয়। কিভাবে, কখন, কেন এবং কী নিয়ম মেনে অ্যালকালাইন ফসফাটেজ টেস্ট করতে হবে, সেটাই হল এই প্রতিবেদনের আলোচনার বিষয়।

অ্যালকালাইন ফসফাটেজ কী? What is Alkaline Phosphatase?

অ্যালকালাইন ফসফাটেজ হল এক ধরনের উৎসেচক অর্থাৎ এনজাইম। অ্যালকালাইন ফসফাটেজ আমাদের রক্তে উপস্থিত থাকে। এই উৎসেচক প্রোটিনকে ভেঙে বিভিন্ন পদার্থ উৎপাদন করে। অ্যালকালাইন ফসফাটেজ প্রধানত লিভারে এবং হাড়ের অস্টিওব্লাস্ট কোষের মধ্যে উৎপন্ন হয়। তবে অগ্ন্যাশয় গ্রন্থের মধ্যে, অন্ত্রের মধ্যে এবং কিডনিতে অল্প পরিমাণে অ্যালকালাইন ফসফাটেজ উৎপন্ন হয়। বিভিন্ন অঙ্গ থেকে উৎপন্ন হওয়ায় অ্যালকালাইন ফসফাটেজের মধ্যে সামান্য পার্থক্য থাকে।

কখন অ্যালকালাইন ফসফাটেজ পরীক্ষা করা হয়? When to get tested for Alkaline Phosphatase?

সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার সময় অ্যালকালাইন ফসফাটেজ টেস্ট করা হয়। হেলথ চেকআপ করার সময় লিভার ফাংশন টেস্ট করা হয়। অ্যালকালাইন ফসফাটেজ টেস্ট, লিভার ফাংশান টেস্টের অন্তর্গত একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। ডাক্তার, যদি মনে করেন যে, রোগী লিভারের রোগে ভুগছেন বা হাড়ের সমস্যায় ভুগছেন, তখন অ্যালকালাইন ফসফাটেজ টেস্ট করতে দিতে পারেন। রোগীর দেহে লিভারের রোগের লক্ষণ যেমন, দুর্বলতা, ক্লান্তি, হজমে সমস্যা, ঘুম ঘুম ভাব, বমি বমি ভাব ইত্যাদি দেখা গেলে অ্যালকালাইন ফসফাটেজ টেস্ট করা হয়। এছাড়া জন্ডিসের লক্ষণ দেখা গেলে, প্রস্রাবের রং গাড় হলে, সারা দেহ চুলকাইলে, এই টেস্ট করা প্রয়োজন।

হাড়ের সমস্যায় অস্থিসন্ধি অর্থাৎ জয়ণ্টে ব্যথা হলে, বারবারে হাড় ভাঙলে বা হারে ফাটল ধরলে, বা হারের গঠনে বিকৃতি দেখা গেলেও অ্যালকালাইন ফসফাটেজ টেস্ট করা প্রয়োজন।

অ্যালকালাইন ফসফাটেজ পরীক্ষা করে, যকৃতের যে সকল রোগ গুলি সনাক্ত করতে পারি সেগুলি হল;
হেপাটাইটিস অর্থাৎ যকৃতে প্রদাহ, সিরোসিস অর্থাৎ যকৃতের কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, কোলেসিস্টাইটিস অর্থাৎ পিত্তনালীতে প্রদাহ এবং পিত্ত নালী বাধা প্রাপ্ত হওয়া ও পিত্ত থলিতে পাথর হওয়া ইত্যাদি।

অ্যালকালাইন ফসফাটেজ পরীক্ষা করে হাড়ের যে রোগ গুলি সনাক্ত করতে পারি সেগুলি হল;
রিকেট অর্থাৎ শিশুদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি এর অভাবে হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া, অস্টিওম্যালেসিয়া অর্থাৎ বড়দের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি এর অভাবে হার দুর্বল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এছাড়া পেজেট Peget বর্ণিত রোগ শনাক্ত করতে এবং হাড়ের মধ্যে ক্যান্সার, হাড়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ইত্যাদি সনাক্ত করতেও অ্যালকালাইন ফসফাটেজ পরীক্ষা সাহায্য করে।

অ্যালকালাইন ফসফাটেজ পরীক্ষা করার আগের প্রস্তুতি। Preparation before testing Alkaline Phosphatase.

সাধারণত 10 থেকে 12 ঘণ্টা উপবাস করে তবে এই রক্ত পরীক্ষা করতে হয়। আপনার ডাক্তার প্রয়োজনে খাদ্য গ্রহণ করার পরও টেস্ট করতে দিতে পারেন। খাদ্য গ্রহণ করলে পরীক্ষার ফলাফলের পরিবর্তন ঘটতে পারে। কিছু ওষুধ আছে যা সেবন করলে অ্যালকালাইন ফসফাটেজের পরিমাণ পরিবর্তিত হয়। কী কী ওষুধ গ্রহণ করেছেন, সেটা সম্পর্কে ডাক্তার এবং ল্যাবরেটরিতে জানান।

রক্তের নমুনা সংগ্রহ করার পদ্ধতি: How is the sample collected for Alkaline Phosphatase Test?

সাধারণত হাতের শিরা থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। একজন ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান এই কাজটি করেন। প্রথমে হাতের চামড়ায় অ্যান্টিসেপটিক লোশন দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নেওয়া হয়। তারপর শিরা থেকে সিরিঞ্জের সাহায্যে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে হতের আঙ্গুলে বা গোড়ালিতে সূচি বিদ্ধ করে রক্ত সংগ্রহ করা হয়।

রক্ত সংগ্রহ করার সময় তেমন কোন বিপদের সম্ভাবনা নেই। সূচ বিদ্ধ করা স্থানে সামান্য ব্যথা হতে পারে, বা ত্বকের নিচে রক্ত জমে হেমাটোমা হতে পারে।

অ্যালকালাইন ফসফাটেজের স্বাভাবিক মাত্রা: Normal Level of Alkaline Phosphatase in Blood:

পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ও মহিলার ক্ষেত্রে রক্তে অ্যালকালাইন ফসফাটেজের স্বাভাবিক মাত্রা হল-

44 – 147 IU/L (0.73 – 2.45 microkat/L)

শিশু ও কিশোরদের রক্তে অ্যালকালাইন ফসফাটেজের এর মাত্রা, পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি অপেক্ষা বেশি থাকে।

Mayo Clinic আমেরিকার মত অনুসারে,

বালকদের ক্ষেত্রে:

4 বছর বয়সে রক্তে অ্যালকালাইন ফসফাটেজের স্বাভাবিক মাত্রা হল,
149 – 369 IU/L

10 বছর বয়সে স্বাভাবিক মাত্রা 191 – 435 IU/L

15 বছর বয়সে স্বাভাবিক মাত্রায় 138 – 511 IU/L

বালিকাদের ক্ষেত্রে:

4 বছর বয়সে রক্তে অ্যালকালাইন ফসফাটেজের স্বাভাবিক মাত্রা হল 169 – 372 IU/L
10 বছর বয়সে স্বাভাবিক মাত্রা 215 – 476 IU/L
15 বছর বয়সে স্বাভাবিক মাত্রা 75 – 274 IU/L

অ্যালকালাইন ফসফাটেজের পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাখ্যা: What does the Test Result of Alkaline Phosphatase mean?

অ্যালকালাইন ফসফাটেজের মাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি হলে বুঝতে হবে যে, লিভার রোগাক্রান্ত হয়েছে অথবা হাড়ের কোষগুলির কার্যকারিতা কোন কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে। রক্তের মধ্যে বিলিরুবিন, এস জি ও টি, এস জি পি টি ইত্যাদি বৃদ্ধি পেলেও অ্যালকালাইন ফসফাটেজের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

অ্যালকালাইন ফসফাটেজের সাথে সাথে যদি জি জি টি(GGT) বা ফাইভ নিউক্লিওটাইডেজ(5 nucleotidase) বৃদ্ধি পায়, সেক্ষেত্রে নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে, লিভার অর্থাৎ যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জি জি টি বা ফাইভ নিউক্লিওটাইডেজ স্বাভাবিক থাকা অবস্থায় অ্যালকালাইন ফসফাটেজ বৃদ্ধি পেলে বলা যায় যে, এই অ্যালকালাইন ফসফাটেজের এর উৎপত্তি হয়েছে, হাড়ের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া কোন সমস্যার কারণে। অবশ্য অ্যালকালাইন ফসফাটেজের আইসোএনজাইম পরীক্ষা করলে নিশ্চিতভাবে রোগের কারণ অনুসন্ধান করা যায়।

লিভারে হেপাটাইটিস হলে, এস জি ও টি এবং এস জি পি টি-র তুলনায় আলকালাইন ফসফাটেজ কম বৃদ্ধি পায়। পিত্তনালীতে বাধার সৃষ্টি হলে বা পিত্ত থলিতে পাথর হলে বা ক্যান্সার হলে, আলকালাইন ফসফাটেজের পরিমাণ এস জি ওটি এবং এস জি পি টি অপেক্ষা বেশি বৃদ্ধি পায়।

অস্থির রোগ ও অস্থির ক্যান্সারে অ্যালকালাইন ফসফাটেজের এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। হাজকিন্স লিমফোমা, কনজেসটিভ হার্ট ফেলিওর ও ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশনে রক্তে মাঝারি মাত্রায় অ্যালকালাইন ফসফাটেজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

অ্যালকালাইন ফসফাটেজের মাত্রা কম হতে পারে, অপারেশনের পর, রক্ত গ্রহণ করার পর, শরীরে জিঙ্কের অভাব ঘটলে এবং অপুষ্টি জনিত কারণে।

মন্তব্য Remarks:

গর্ভবতী মায়েদের অ্যালকালাইন ফসফাটজের মাত্রা বেশি হয়। শিশুদেরও অ্যালকালাইন ফসফাটেজের মাত্রা স্বাভাবিকভাবেই বেশি হয়। কিছু ওষুধ যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণের পিল, অ্যালকালাইন ফসফাটেজের এর মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে।