রক্ত পরীক্ষা Blood Testসংবাদ News

রক্তের ইউরিয়া পরীক্ষা Blood Urea Nitrogen Test

রক্তের ইউরিয়া পরীক্ষা Blood Urea Nitrogen Test

বৃক্ক অর্থাৎ কিডনির (Kidney Health) স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য, বৃক্কের মধ্যে কোন রোগ ব্যাধি হয়েছে কিনা সেটা জানার জন্য এবং কিডনির রোগে আক্রান্ত রোগীদের ডায়ালিসিস (Dialysis) করার পর রোগীর স্বাস্থ্য কেমন আছে সেটা জানার জন্য রক্তের ইউরিয়া টেস্ট (Blood Urea Nitrogen Test) করা হয়।

কিভাবে আমাদের দেহে ইউরিয়া উৎপাদিত হয়? How is urea produced in our body?

আমাদের শরীর প্রোটিন জাতীয় খাদ্য ব্যবহার করার পর, উপজাত হিসেবে অ্যামোনিয়া সৃষ্টি করে। এই অ্যামোনিয়ার মধ্যে নাইট্রোজেন থাকে। এই নাইট্রোজেন; কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে ইউরিয়া উৎপাদন করে। রক্তের মাধ্যমে এই ইউরিয়া, লিভার থেকে কিডনি অর্থাৎ বৃক্কে পরিবাহিত হয়। বৃক্ক অর্থাৎ কিডনি এই ইউরিয়াকে মূত্রের মাধ্যমে শরীরের বাইরে নির্গত করে। কিডনি রক্ত থেকে ইউরিয়াকে ফিল্টার করে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে ইউরিয়া নির্গত হয়। সুস্থ কিডনি শরীরের 90% এর বেশি ইউরিয়া মূত্রের মাধ্যমে শরীরের বাইরে নির্গত করে, তাই রক্তে ইউরিয়ার মাত্রা দেখে, কিডনি কতটা ভালো কাজ করছে, সেটা বোঝা যায়।
কিডনি বা লিভার রোগাক্রান্ত হলে, রক্তে ইউরিয়ার পরিমাণ কম বা বেশি হতে পারে। যদি লিভার দ্বারা বেশি পরিমাণে ইউরিয়া উৎপাদিত হয় বা কিডনি কম পরিমাণ ইউরিয়া অপসারণ করে, সেক্ষেত্রে রক্তে ইউরিয়ার ঘনত্ব বাড়বে। আবার লিভারের রোগে ইউরিয়ার উৎপাদন কম হলে, রক্তে ইউরিয়া ঘনত্ব হ্রাস পায়।

কখন ইউরিয়া টেস্ট করা হয়? (When is the urea test done?)

বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা (General Health Checkup) করার সময় বা স্বাস্থ্য সম্পর্কে সাধারণ ধারণা পেতে ইউরিয়া টেস্ট করা হয়। বেশ কিছু ওষুধ আছে, যা দিয়ে চিকিৎসা শুরু করার আগে ও পরে ইউরিয়া টেস্ট করা হয়। কোন ব্যক্তি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লে, হাসপাতালে ভর্তি হলে, ইউরিয়া টেস্ট করার প্রয়োজন হয়। তবে প্রধানত এই টেস্ট করা হয় বৃক্ক ঘটিত রোগের কোন লক্ষণ দেখা গেলে; যেমন সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়া, হজমের সমস্যা, ঘুমের সমস্যা, কোন অঙ্গ ফুলে ওঠা; বিশেষ করে চোখের চারিপাশ, মুখমণ্ডল, কব্জি, পেট, থাই, হাঁটু ইত্যাদি ফুলে ওঠা, বাদামি মূত্র ত্যাগ, মূত্রের মধ্যে রক্ত, পরিমাণ কমে যাওয়া, মূত্র ত্যাগ করতে সমস্যা হওয়া, মূত্র ত্যাগ করার সময় জ্বালা যন্ত্রণা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা গেল ইউরিয়া টেস্ট করার প্রয়োজন হয়।

পিঠে ব্যথা হলে, বিশেষ করে বক্ষপিঞ্জরের নিচের দিকে ব্যথা হলে, অর্থাৎ যে স্থানে বৃক্ক অবস্থিত সেখানে ব্যথা হলে, অবশ্যই ইউরিয়া টেস্ট করার প্রয়োজন হয়। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ থাকলে, ডায়াবেটিস থাকলে, হার্টের রোগের কোন সমস্যা থাকলে বা লক্ষণ থাকলে, ইউরিয়া টেস্ট করার দরকার পড়ে। সিটি স্ক্যান(C T Scan) করার আগেও ইউরিয়া টেস্ট করার প্রয়োজন হতে পারে।

ইউরিয়া টেস্টের প্রস্তুতি(Preparation of urea test)

কেবলমাত্র ইউরিয়া টেস্ট করার জন্য কোন বিশেষ প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করার পরও রক্তের নমুনা দেওয়া যায়। তবে ইউরিয়া টেস্টের সাথে অন্য কোন রক্ত পরীক্ষা থাকলে, খালি পেটে রক্তের নমুনা দিতে হবে।

ইউরিয়া টেস্ট করার জন্য রক্তে নমুনা সংগ্রহ (Collection of blood sample for urea test)

সাধারণত হাতির শিরা থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রক্তের নমুনা সংগ্রহ করার পর, রোগী স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারেন।

ইউরিয়া টেস্টের নরমাল রেঞ্জ বা স্বাভাবিক মাত্রা (Normal range of urea test)

রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে স্বাভাবিক মান বা মাত্রা দেওয়া থাকে। সেই মান মেনে চলার সবথেকে ভালো। বিভিন্ন ধরনের একক ব্যবহার করে পরীক্ষার ফলাফল লিপিবদ্ধ করা থাকতে পারে। তবে সাধারণত মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার হিসাবে রক্তের ইউরিয়ার পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
ইউরিয়া টেস্টের নরমাল রেঞ্জ বা স্বাভাবিক মাত্রা হল 15 মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার থেকে 38.5 মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার। বেশ কিছু ল্যাবরেটরি ব্লাড ইউরিয়ার মান, ব্লাড ইউরিয়া নাইট্রোজেন হিসাবে লিপিবদ্ধ করে। সেক্ষেত্রে ব্লাড ইউরিয়া নাইট্রোজেনের স্বাভাবিক মাত্রা হলও 7 মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার থেকে 20 মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার। আবার অনেক ক্ষেত্রে মিনিমোল প্রতি লিটার হিসাবেও, ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এক্ষেত্রে স্বাভাবিক মাত্রা হবে 2.5 মিনিমোল প্রতি লিটার থেকে 7.1 মিলিমোল প্রতি লিটার।

নরমাল রেঞ্জ, রোগীর বয়স ও ল্যাবরেটরিতে ব্যবহার করা পদ্ধতি অনুসারে সামান্য কম বা বেশি হতে পারে। সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে, রক্তে ইউরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাখ্যা (Interpretation of test results)

রক্তের মধ্যে ইউরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে সাধারণত মনে করা হয় যে, বৃক্কের কাজে কোন সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া ইউরিনারি ট্র্যাক্টে অর্থাৎ মূত্রনালিতে বাধার সৃষ্টি হলে, কনজেসটিভ হার্ট ফেলিওর হলে, রক্তে ইউরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। পৌষ্টিক তন্ত্রের মধ্যে রক্তপাত হলে, দেহে জলের পরিমাণ কমে গেলে, ইলেকট্রিক শক লাগলে, দেহের অনেকটা অংশ পুড়ে গেলে, রক্তে ইউরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। খাদ্যে অতিরিক্ত পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করলে, রক্তে ইউরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। কিছু ওষুধ আছে যা সেবন করলে রক্তে ইউরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।